আইএমএফের ঋণে ডলার সংকট কতটা কাটবে
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত বছর সৃষ্ট ডলার সংকট পরিস্থিতি নতুন বছরের শুরুতেও উন্নতির আশানুরূপ কোনো সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
ডলারের অভাবে এখনো ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারছেন না। আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে না পারায় বন্দরে আটকে আছে চিনি ও সয়াবিন পণ্যবাহী জাহাজ।
জনকল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগও ডলার সংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইতঃপূর্বে সরকারের একাধিক কর্মকর্তা-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নতুন বছরে সংকট নিরসনের আশা প্রকাশ হলেও এর কার্যকারিতা তেমন দৃশ্যমান নয়।
অর্থনীতিবিদরা উলটো পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। রমজান সামনে রেখে জরুরি ভিত্তিতে সাতটি পণ্য আমদানিতে সহায়তা করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার বিপরীতে ব্যবসায়ীদের এলসি সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল’ খুলেও পণ্য আমদানিতে প্রয়োজনীয় প্রায় আড়াইশ কোটি ডলারের সংস্থান সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে সবরকম পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকেও এলসি নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের জানাতে বলেছি। রেমিট্যান্স আসছে, রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক ধারা রয়েছে। আশা করছি, সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে।’ উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২ সময়কালে ৭৮০ কোটি ডলার সরবরাহ করেছে।
মূলত চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল-খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং বাজেট সহায়তা বাবদ অর্থ চেয়ে গত বছরের জুলাই মাসে আইএমএফকে চিঠি দেয়। অর্থমন্ত্রী নির্ধারিত চারটি মূল লক্ষ্যকে ঋণ নেওয়ার কারণ হিসাবে উলেখ করেছেন। লক্ষ্যগুলো হচ্ছে-অর্থনীতির বহিঃখাতকে স্থিতিশীল করা, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেওয়া, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বোর্ড সভায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সরকারের সমন্বিত অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, আইএমএফ চলতি মাসের ২ তারিখ সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে প্রতিশ্রুত ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করেছে।
আইএমএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশের বিপুল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ব্যাহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ঘাটতি বেড়েছে, সেই সঙ্গে টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের সমন্বিত সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে এ ঋণ। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, এ ঋণ দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপে কিছুটা স্বস্তি দেবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে পূর্ণ সমাধানের পথেও কিছুটা এগিয়ে দেবে। আইএমএফের ঋণের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহারে সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আবশ্যক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে নিপতিত বাংলাদেশ রিজার্ভ ধরে রাখতে এ অর্থের প্রয়োজনীয়তা ছিল দীর্ঘ প্রত্যাশিত। কতিপয় অর্থনীতিবিদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দৃষ্টান্ত উপস্থাপনে আইএমএফ ঋণে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেও ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যতিক্রম অপ্রত্যাশিত নয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আইএমএফের ঋণ আমাদের সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছেও বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে।’
আইএমএফের পক্ষ থেকে এ ঋণের প্রধান শর্ত হিসাবে তিনটি খাতে সংস্কারের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আইএমএফের ভাষ্যমতে, সংস্কারগুলো হচ্ছে গুণগত মানোন্নয়নসংক্রান্ত (কিউপিসি)-অবকাঠামোগত মানোন্নয়নসংক্রান্ত শর্ত (এসপিসি) ও সাধারণ প্রতিশ্রুতি। তন্মধ্যে কিউপিসি ও এসপিসি হচ্ছে বাধ্যতামূলক শর্ত, যা মানতেই হয়। এর অন্যথায় কিস্তি আটকে যেতে পারে। কিউপিসির মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব পদ্ধতি ঠিক করা, জিডিপির তুলনায় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি। এসপিসির মধ্যে রয়েছে জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে পদ্ধতি কার্যকর করা, সংসদে আয়কর আইন পাশ, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, আদায়ের অযোগ্য খেলাপি ঋণ বিষয়ে আলাদা কোম্পানি গঠন, কর ছাড়ের ওপর বিশদ নিরীক্ষা, বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রাখা। এ ছাড়া আছে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয়করণ, বাজেট থেকে সঞ্চয়পত্রকে আলাদা করা, ব্যাংক ঋণের বর্তমান সুদহার ৯ শতাংশ তুলে দেওয়া, নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, কার্বন ট্যাক্স প্রবর্তন, বাজারভিত্তিক বিনিময় সুদের হারের নির্দিষ্ট সীমা প্রত্যাহার। ইতোমধ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কারের অংশ হিসাবে ভর্তুকি কমাতে ক্রমান্বয়ে জ্বালানি তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েছে। রিজার্ভের গণনা পদ্ধতি আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী করা হচ্ছে এবং জ্বালানি তেলের দাম মাসে মাসে সমন্বয় করার ঘোষণাও দিয়েছে সরকার।
আইএমএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে অনুমোদিত মোট ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)-এ তিন ধরনের ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতায় থাকা বা রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করা দেশগুলোকে প্রদত্ত ইসিএফের অধীনে ঋণ পাওয়া যাবে ১০০ কোটি ডলারের বেশি, যার জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতায় থাকা দেশগুলোয় বিতরণকৃত ইএসএফের আওতায় পাওয়া যাবে ২১৫ কোটি ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তন-করোনাভাইরাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কষ্টসহিষ্ণু নিম্ন ও মধ্যআয়ের দেশকে দেওয়া আরএসএফ থেকে পাওয়া যাবে ১৩০ কোটি ডলার। তিন পর্যায়ের গড় ঋণের সুদ হার হবে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশের মতো। প্রথম এশীয় দেশ হিসাবে আরএসএফ তহবিল থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্ত ঋণ পরিশোধে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সময় পাওয়া যাবে ২০ বছর এবং ইসিএফ ও ইএফএফের ঋণ আলাদা আলাদা গ্রেস পিরিয়ডে পরিশোধ করা যাবে ১০ বছরে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) ষষ্ঠবার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আইএমএফ আমাদের কোনো শর্ত দেয়নি। তারা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যৌক্তিক। তবে সংস্কার তো বিপ্লব নয় যে রাতারাতি হয়ে যাবে। সংস্কার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। সংস্কার যন্ত্রণাদায়ক হলেও ইতোমধ্যেই বেশকিছু ক্ষেত্রে সেটি করায় আইএমএফ আমাদের ঋণ দিয়েছে। চলমান সংস্কারের কারণে দেশে দারিদ্র্য বাড়ার আশঙ্কা নেই। এর কারণ হলো, গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্ব নেই। কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আইএমএফ ঋণ দেওয়ায় অন্য উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ দিতে উৎসাহ পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই এআইআইবি বাজেট সহায়তা দিয়েছে। আরও আড়াই বিলিয়ন ডলার দেবে।’ বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি ভালো হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, ঋণ গ্রহণের হার, বিদ্যুৎ সুবিধা, নারীদের কর্মে নিযুক্তি, গড় আয়ু, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধ, মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচক অনেক ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমরা ভালো অবস্থানে আছি। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে তুলনামূলকভাবে রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে।’
আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আট শতাংশের বেশি। দ্বিপক্ষীয় বা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। এরপর আছে যথাক্রমে জাপান, রাশিয়া ও চীন। জাপানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৯২৩ কোটি টাকা। রাশিয়া ও চীনের ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০৯ ও ৪৭৬ কোটি ডলার এবং আইএমএফের কাছে ঋণের পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ ছোট-বড় আকার মিলিয়ে আইএমএফ থেকে মোট ১০ বার ঋণ নিয়েছে। প্রথমবার নেয় ১৯৭৪ সালে। ১৯৮০-৯০ সময়কালে নেওয়া হয় পাঁচবার। ১৯৯০ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে আইএমএফের শর্ত ছিল মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করা। ২০০৩ সালে নেওয়া ঋণের শর্তগুলোর অন্যতম ছিল রাষ্ট্রীয়মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান কমিয়ে আনা। পরবর্তী সময়ে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করার শর্তে ২০১২ সালে সাত কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ।
পাকিস্তান, মিসরসহ বিশ্বের বহু দেশ চরম মূল্যস্ফীতি, নিত্যপণ্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে জ্বালানি ও খাদ্য আমদানির প্রচণ্ড সমস্যায় নিপতিত। প্রায় প্রতিটি দেশই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থার দিকে মুখিয়ে আছে। মুসলিম দেশগুলোতে আসন্ন রমজানের প্রয়োজনীয় বাজারব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখা ও জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকারগুলোর অস্থিরতা ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বিপরীতে যুদ্ধরত দেশ এবং সহায়ক উন্নত শক্তিগুলোর অস্ত্র-জ্বালানি-খাদ্য সহায়তার নামে অনৈতিক-অনভিপ্রেত আধিপত্য-বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় সমগ্র বিশ্ববাসী নিদারুণ হতাশায় নিমজ্জিত। সম্ভাব্য বৈশ্বিক মহামন্দা-দুর্ভিক্ষ এড়াতে প্রায় সব দেশই যৌক্তিক পদক্ষেপ অনুসন্ধানে ব্যতিব্যস্ত। এক্ষেত্রে মহান স্রষ্টার অপার কৃপায় বাংলাদেশ সামগ্রিক অর্থে ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নানামুখী সংকট উত্তরণে দৃঢ়চেতা ও নির্ভীক পরিকল্পনার প্রকাশ জনগণকে অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত করছে। বলা বাহুল্য, তার মেধা ও প্রজ্ঞার সমাহারে প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো বিভিন্ন সংস্থায় ঘাপটি মেরে থাকা অশুভ শক্তির দোসররা কতটুকু দেশপ্রেম-আন্তরিকতার সঙ্গে জনগণের সেবা প্রদান নিশ্চিত করবে, তা নিয়ে অপরিমেয় সন্দেহ-সংশয় সব মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। কথিত দানবরূপী হিংস্র মানবসৃষ্ট মাফিয়া-সিন্ডিকেট চক্র ঘৃণ্য কারসাজিতে ব্যক্তিস্বার্থে দেশে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করছে কিনা, সৎ-যোগ্য এবং প্রশিক্ষিত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তাদের সব কদর্য অপকর্ম কঠোর নজরদারিতে আনা একান্তই জরুরি।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী : শিক্ষাবিদ; সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়