Logo
Logo
×

টিউটোরিয়াল

শিক্ষাগুরুর গল্প

সোনারগাঁয়ে মানুষ গড়ার অন্যতম কারিগর শিক্ষাবিদ দেওয়ান আব্দুল বাতেন

Icon

সেলিম কামাল

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে নানা প্রতিকূলতার কারণে সব ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাক্ষেত্রেও অনগ্রসর ছিল এ দেশ। সাবেক ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জ মহকুমার বৈদ্যের বাজার থানা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নেও ছিল না শিক্ষার তেমন কোনো আলো। তখন ওই এলাকায় শিক্ষার অগ্রগতি ও বিস্তারে যে ক’জন ব্যক্তিত্বের অবদান অনস্বীকার্য- তাদের অন্যতম মানুষ গড়ার কারিগর দেওয়ান আব্দুল বাতেন। জন্ম ১৯২৯ সালের ৪ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা জেলার নারায়ণগঞ্জ মহকুমার বৈদ্যের বাজার থানার বারদী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে। শিক্ষার বৈরী পরিবেশের মধ্যে থেকেও স্রষ্টাপ্রদত্ত মেধা, অধ্যবসায় ও ঐকান্তিক শ্রমের ফলে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪২ সালে চতুর্থ শ্রেণির প্রাইমারি বৃত্তি পরীক্ষায় নারায়ণগঞ্জ মহকুমায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৯ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গণিত ও ফার্সিতে লেটার মার্কসসহ বারদী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। যে ফলাফল তখনকার সময়ে অনগ্রসর এ অঞ্চলের জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ব্যাপক আলোড়ন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু পারিবারিক অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে তার উচ্চশিক্ষা এ সময় ব্যাহত হয়।

১৯৫০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি স্থানীয় শম্ভুপুরা মাইনর স্কুলে গণিতের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে জীবনের পথচলা শুরু করেন। কিন্তু পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তার জীবনের পথ চলতে বাধা হতে পারেনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশের ২০ বছর পর ১৯৬৯ সালে আই.এ, ১৯৭১ সালে বিএ এবং ১৯৮৭ সালে বিএড কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৫১ সালের ২৩ নভেম্বর জুনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন বারদী উচ্চবিদ্যালয়ে।

তিনি ১৯৭২ সাল থেকে সিনিয়র শিক্ষক, ১৯৮২ সাল থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ১৯৯২ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দীর্ঘ প্রায় ৪৩ বছর শিক্ষকতা শেষে ১৯৯৩ সালে অবসরে যান। অবসরকালীন জীবনে ১৯৯৬ সালে গোয়ালপাড়া জুনিয়র হাইস্কুল প্রতিষ্ঠায় অসুস্থতা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন অটল। তার সব ছাত্রছাত্রীর কাছে তিনি ছিলেন আদর্শ ও নীতির মূর্ত প্রতীক। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক ও আদর্শ পিতা। আমরণ চেষ্টা করেছেন তার আদর্শ দিয়ে সন্তানদের উপযুক্ত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে। ৫ পুত্র ও নাতি-নাতনীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পরিবারে তার ভাই, শ্যালক, জামাতা, ছেলে, ভাতিজা, শ্যালকপুত্র, পুত্রবধূ- সবাই শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন।

১৯৯০ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হন। তারপর থেকেই টিউমার, চোখের সমস্যাসহ নানাবিধ অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে। ২০০০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৭২ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে উৎসর্গ করা এ উজ্জ্বল মানুষটিকে আজও সোনারগাঁয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন।

ঘোষণা

প্রিয় পাঠক, এখন থেকে নিয়মিত প্রতিটি জেলার এমন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানাবে টিউটোরিয়াল বিভাগ। আপনার জানা এমন কোনো শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনিও লেখা পাঠাতে পারেন নিচের ই-মেইল ঠিকানায়- tutorial.jugantor@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম