পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান
মো. নূরুল আমিন
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রধান শিক্ষক, চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়
মিরপুর, ঢাকা
আমাদের পরিবেশ
প্রশ্ন : পরিবেশের ওপর জীবের নির্ভরশীলতার দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : পরিবেশ বলতে জীব ও তার পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে বোঝায়। পরিবেশের ওপর জীবের নির্ভরশীলতার দুটি উদাহরণ নিচে দেয়া হল-
খাদ্যের জন্য : উদ্ভিদের পাতায় সবুজ কণিকা রয়েছে। এ সবুজ কণিকা হল ক্লোরোফিল, যা উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করে। উদ্ভিদ এ ক্লোরোফিলের সহায়তায় সূর্যের আলো ও পানির সাহায্যে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। উদ্ভিদ এ খাদ্য নিজে ব্যবহার করে। প্রাণীও এ খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। এর কারণ প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। কাজেই পৃথিবীর সব প্রাণী খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল।
গ্যাসীয় বিনিময় : সবুজ উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির সময় পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বায়ুতে ছাড়ে। আবার প্রাণী শ্বাসকার্যের জন্য পরিবেশ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশে ছাড়ে। এভাবে বেঁচে থাকার জন্য সব জীবই পরিবেশ থেকে অক্সিজেন বা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিয়ে বেঁচে থাকে।
প্রশ্ন : উদ্ভিদ ও প্রাণী কীভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণীর পরস্পর নির্ভরশীলতা : উদ্ভিদ ও প্রাণী মিলেই জীব জগৎ। জীবনধারণের জন্য এরা একে অপরের সাহায্য ছাড়া বাঁচতে পারে না। এদের জীবনযাত্রা পৃথক বলে মনে হলেও বেঁচে থাকার তাগিদে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল- * উদ্ভিদ কোষে ক্লোরফিল নামক এক ধরনের সবুজ কণিকা থাকে, যা খাদ্য তৈরিতে একান্ত প্রয়োজনীয়। তাই উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে। কিন্তু প্রাণী কোষে ক্লোরোফিল থাকে না বলে কোনো প্রাণী খাদ্য তৈরি করতে পারে না। সব প্রাণী সরাসরি খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। কোনো প্রাণী প্রত্যক্ষভাবে খাদ্য হিসেবে উদ্ভিদ ভক্ষণ করে আবার কোনো প্রাণী পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। কোনো কোনো পতঙ্গভুক উদ্ভিদ যেমন : কলস উদ্ভিদ আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য কীটপতঙ্গের ওপর নির্ভরশীল। * উদ্ভিদ ও প্রাণী অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের জন্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ ও প্রাণী শ্বসনের সময় অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। সবুজ উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এভাবে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতা রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। * প্রাণীর মলমূত্র, দেহাবশেষ ইত্যাদি মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, যা উদ্ভিদের জন্য দরকার। * কোনো কোনো উদ্ভিদের পরাগায়ণ কীটপতঙ্গের ওপর নির্ভরশীল। জীবনধারণের জন্য কীটপতঙ্গ মধুর সন্ধানে যখন ফুলে ফুলে বিচরণ করে, তখনই পরাগায়ণ ঘটে। কোনো কোনো ফুল পাখির সাহায্যে পরাগায়ণ ঘটে। * মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী কোনো মিষ্টি ফল খাওয়ার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায় এবং খেয়ে বীজগুলো ফেলে দেয়। এভাবে প্রাণী জীবের বিস্তারণে সাহায্য করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো ফলের বীজ, পাকস্থলীতে হজম না হয়ে প্রাণীর মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। এভাবে প্রাণীর মাধ্যমেও বীজের বিস্তারণ ঘটে। * আম, লিচু ইত্যাদি গাছে লাল পিঁপড়া বাস করে। এরা ওই গাছের ফলের রস খেয়ে বেঁচে থাকে এবং গাছকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।