২৪ ঘণ্টায় নিহত ৮৪ জন
গাজার ধ্বংসস্তূপে মরণগ্যাস
সব ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ২১ বছর সময় লাগতে পারে। পাশাপাশি খরচ হবে ১.২ বিলিয়ন ডলার
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসরাইলের নৃশংস তাণ্ডবে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে অবরুদ্ধ গাজা। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তূপ। ইট-পাথরের সেই ধ্বংসযজ্ঞগুলোই এবার ‘মরণগ্যাস’ হয়ে সামনে এসেছে গাজাবাসীর সামনে। ইসরাইলের বুলেট-বোমার আঘাতের মতোন দ্রুত না হলেও নীবর ঘাতকের মতো শেষ করে দেবে ফিলিস্তিনিদের। গাজায় এই আতঙ্কের নাম ‘অ্যাসবেস্টস’ যা থেকে নির্গত বিষাক্ত ফাইবার বাতাসের সঙ্গে মিশে ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হতে পারে। বিবিসি।
অ্যাসবেস্টস এমন এক ধরনের ক্ষতিকারক খনিজ যা ভবন তৈরির উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিমান হামলার মতো ঘটনায় অ্যাসবেস্টস নামক খনিজটি আরও উত্তেজিত হয়। এর ফাইবারগুলো মানুষ চোখে দেখতে পারে না কিন্তু ধীরে ধীরে ফুসফুসের নানা জটিল রোগ তৈরি করে। বর্তমানে এ অ্যাসবেটস নাম খনিজটি নিষিদ্ধ হলেও একসময় এটি ভবন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। অবরুদ্ধ গাজারও আটটি শহুরের শরণার্থী শিবিরে এই উপাদান তৈরির ভবন রয়েছে। ১৯৪৮-৪৯ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের জন্য সেসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএসইপি) অনুমান করেছে-গাজা জুড়ে ২.৩ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত হতে পারে। লন্ডনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেসোথেলিওমা রিসার্চের ডিরেক্টর প্রফেসর বিল কুকসন বলেছেন, ‘গাজার ধ্বংসস্তূপ খুব বিষাক্ত। মানুষ এতে তীব্রভাবে ভুগবে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদেও। এটি এমন জিনিস যা শিশুরা সারা জীবন বহন করবে।’ মেসোথেলিওমা ইউকে-এর সিইও লিজ ডার্লিসন বলেছেন, ‘মানুষ যে মারা যাচ্ছে তা এখানেই শেষ হবে না। ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’ ধূলিকণার ওপর গবেষণা ডা. রায়ান হোয় বলেন, অ্যাসবেস্টস ফাইবারগুলোতে শ্বাস নেওয়া এড়ানো অত্যন্ত কঠিন কারণ এগুলো এতটাই ক্ষুদ্র যা বাতাসে ভেসে থাকে যা ফুসফুসের খুব গভীরে চলে যেতে পারে।’ ডা. হোয় আরও বলেন, গাজার নিছক পরিমাণে ধূলিকণাও ‘শ্বাসনালির সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, হাঁপানির মতো রোগের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে’। এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী এমফিসিমা এবং অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজেরও কারণ হতে পারে। উল্লেখ্য, এবারের হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ ২০০৮ সাল থেকে ইসরাইল-গাজা সংঘর্ষের চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি। ২০০৮ সালে গাজায় ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ ছিল ৬০০,০০০ টন। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২,০০০,০০০ টনে। এরপর ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৩৭০,০০০ টনে। সর্বশেষ যুদ্ধে ২০২৪ সালে গাজায় ৫০,৭৭৩,৪৯৬ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। ইউএনইপির জানিয়েছে-এ সমস্ত ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ২১ বছর সময় লাগতে পারে। পাশাপাশি খরচ হবে ১.২ বিলিয়ন ডলার। তবে এ অপসারণ প্রক্রিয়াও আরও ক্ষতি করতে পারে। ইউএনইপির একজন মুখপাত্র জানিয়েছে-ধ্বংসাবশেষ অপসারণের প্রক্রিয়া ‘অ্যাসবেস্টস বাতাসে বিপজ্জনক ফাইবার মুক্তির সম্ভাবনা বাড়িয়ে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’ এই ধ্বংস্তূপের মাঝেই প্রতিনিয়ত চলছে ইসরাইলি হামলা। গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে ৮৪ জন । ১৬৮ জন আহত। শুক্রবার ভোর থেকে ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ১২ জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
