
প্রিন্ট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম
ভূমিকম্পের চেয়েও বড় ভয় জান্তা
মিয়ানমারে মৃত বেড়ে ৩ হাজার ৩৫৪। আহত ৪ হাজারেরও বেশি * যুদ্ধবিরতি ভেঙে কমপক্ষে ১৪টি আক্রমণ চালিয়েছে জান্তা

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
কদিন আগেই ভয়াবহ বিপর্যয় দেখেছে মিয়ানমার। ২৮ মার্চ। ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে দেশটি। নিমিষেই ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি, স্কুল ও মন্দির। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেলে শত শত লাশ। কিছু দিনের মধ্যে এ সংখ্যা পৌঁছায় হাজারে। শনিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৫৪ জনে। আহত হন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলে শেষ করার মতো নয়। এদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগের এক ভয়ংকর রূপ দেখেছে মিয়ানমার। তবে এটি প্রথম নয়। এর আগে ২০০৮ সালেও বিপর্যয়কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছিল দেশটি। ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের তাণ্ডবে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। তবে মিয়ানমারে এসব ঝড়-ভূমিকম্পের চেয়েও বেশি ভয় সামরিক শাসনে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাময়িকভাবে জীবনকে ব্যাহত করে। কিন্তু সামরিক শাসকরা জাতিকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে দেয়। এএফপি, ইরাবতি।
ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। এটি ২২ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা জানান তিনি। তবে ধরে রাখতে পারলেন না নিজের পাশবিকতা। ভূমিকম্পের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই আবারও দেশটিতে নতুন করে আক্রমণ শুরু করে জান্তা। শুক্রবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর যুদ্ধবিরতি ভেঙে কমপক্ষে ১৪টি আক্রমণ চালিয়েছে জান্তা সরকার। অন্যদিকে বিদেশি উদ্ধারকারী দলগুলো আহতদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। মিয়ানমারের ভূমিকম্পে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাহায্যের পরিমাণও বাড়িয়েছে দেশটি। শুক্রবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, মিয়ানমারে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে তারা আগের ২ মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে আরও ৭ মিলিয়ন ডলার যোগ করেছে। অন্যান্য ধনী দেশগুলোকেও সহায়তা দিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বের সরকার নই। চীন একটি খুব ধনী দেশ। ভারত একটি ধনী দেশ। বিশ্বে আরও অনেক দেশ রয়েছে। আমাদের পাশাপাশি সবারই এগিয়ে আসা উচিত।’
২৮ মার্চের ভূমিকম্পে মৃতদের বেশিরভাগই তাৎক্ষণিকভাবে মারা যাননি। তাদের বেশিরভাগই সঠিক সময়ে উদ্ধার না হওয়ার কারণে মারা গেছেন। অতীতেও মিয়ানমারের শাসক জেনারেলদের মধ্যে এমন উন্মাদ মানসিকতা দেখা গেছে। ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিসে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সিনিয়র জেনারেল থান শো এবং প্রধানমন্ত্রী জেনারেল থেইন সেইনের নেতৃত্বে জান্তা সরকার সাহায্য করার পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেফতার করে। জেনারেলরা কয়েক দশক ধরে দেশটিকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। যা কোনো ভূমিকম্প বা ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও বেশি সর্বনাশা।
১৯৬২ সালে প্রথম ‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়’ ঘটে যখন জেনারেল নে উইন একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ভেঙে সামরিক শাসন জারি করেন। এটি দেশটিকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মিয়ানমারকে অর্থনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়। ভিন্নমতাবলম্বীদের জেলে পাঠানো হয়। সংবাদ মাধ্যমকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। সেসময় একটি প্রজন্ম সম্পূর্ণ ভয়ের মধ্যে বেড়ে ওঠে। এরপর আসে ধ্বংসের পরবর্তী ঢেউ। ১৯৮৮ সালের গণতন্ত্রপন্থি বিদ্রোহ রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। যখন জেনারেল স মং এবং তার ডেপুটি থান শোয়ের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে। এখানেই শেষ নয়। মিয়ানমারের মানবসৃষ্ট ট্র্যাজেডির সবচেয়ে সাম্প্রতিক এবং সম্ভবত সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অধ্যায়টি শুরু হয় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন জালিয়াতির মিথ্যা দাবি তুলে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয় জান্তা। এটি সশস্ত্র প্রতিরোধের এক নতুন ঢেউয়ের জন্ম দেয়। শুরু হয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং জান্তার লড়াই। যা চলছে এখনো।