
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৪ এএম
গাজার বিশাল এলাকা দখলের হুমকি
২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৭ নিহত * ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতির বিজ্ঞাপন প্রচার করছে

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যুদ্ধবিধ্বস্ত অবরুদ্ধ গাজার এবার ‘বিশাল এলাকা’ দখল করবে ইসরাইল। বুধবার নতুন করে এ ঘোষণা দিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেন, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজায় তাদের অভিযান সম্প্রসারিত করবে এবং অঞ্চলটির ‘বিশাল এলাকা’ দখল করবে। আলজাজিরা।
এদিন এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেন, এই সম্প্রসারিত অভিযানের লক্ষ্য হলো ‘সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস ও নির্মূল করা।’ তিনি জানান, নতুন করে দখলকৃত এলাকাগুলো ‘ইসরাইলের নিরাপত্তা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত’ করা হবে। এর জন্য ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এ সময় তিনি গাজার জনগণের প্রতি হামাসকে নির্মূল করে ইসরাইলি বন্দিদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, এটাই যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায়। গত সপ্তাহে কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনী শিগগিরই গাজার অতিরিক্ত অংশে ‘পূর্ণ শক্তিতে’ অভিযান চালাবে। কাৎজের এ ঘোষণার আগেই মঙ্গলবার রাতে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলের সেনারা। বুধবার সকাল থেকে আরও কয়েকটি স্থানে হামলা চালায় ইসরাইল। মধ্যাঞ্চলে একটি ব্যস্ত বাজারে হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকায় আরও ৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর ফলে চলমান আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে মেটার মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতির বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে! শুধু তাই নয়, গাজায় মোতায়েন করা ইসরাইলি সেনাদের জন্য অর্থ সহায়তা সংগ্রহের বিজ্ঞাপনও প্রচার করছে মেটা। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরার অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ফেসবুকে উগ্র জায়নবাদী শতাধিক বিজ্ঞাপন দেখেছে বার্তাসংস্থাটি। যেগুলোর মধ্যে ইসরাইলি প্রশাসনের প্রতি ফিলিস্তিনিদের অবকাঠামো ভেঙে ফেলারও আহ্বান ছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব বিজ্ঞাপনের প্রচার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যে অর্ধশতই ছিল ইসরাইলি বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির দেওয়া। এরা মূলত পশ্চিম তীরে দখলকৃত ইসরাইলি আবাসন বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। গত বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার শুরু করে ফেসবুক, অথচ সে সময় গাজায় পুরোদমে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। বিজ্ঞাপনগুলোর টার্গেট অডিয়েন্স ছিল ইসরাইলিরাই। ইসরাইলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু ব্যবহারকারীর কাছেও পৌঁছেছে বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে রয়েছে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ‘রামাত আদেরেত’, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থায়ন করে ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক নামের ইসরাইলি একটি ব্যাংক। পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতির অর্থায়ন করার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে বিডিএস বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট ও স্যাংকশন আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তু হয়ে আসছে ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক। রামাত আদেরেতের প্রকল্পটি ফিলিস্তিন-ইসরাইল সীমানা নির্ধারণকারী গ্রিন লাইনের ২০ কিলোমিটার পূর্বে দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এদের পৃথক দুটি প্রকল্পের আওতায় সেখানে রয়েছে প্রায় ২৭টি বিলাসবহুল ভবন।
এক মাস ধরে ঢুকছে না ত্রাণ, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা : এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ আছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর এবারই প্রথম এত দীর্ঘ সময় উপত্যকায় ত্রাণ ঢুকতে পারছে না। বুধবার জাতিসংঘের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। ইসরাইলি প্রশাসন দাবি করছে, গাজায় যথেষ্ট পরিমাণ খাবার আছে।