অস্থির ইউরোপ সংকটে ন্যাটো
যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই বেরিয়ে গেছেন জেলেনস্কি

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বেশ কিছু দিন ধরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছিল। শুক্রবার ওভাল অফিসে উভয় নেতার মধ্যে তীব্র তর্ক-বিতর্ক হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্কে ফাটল ধরার শঙ্কাও বেড়েছে। এই দুই দেশের সম্পর্কের প্রকাশ্য ভাঙনে অস্থির হয়ে উঠেছে পুরো ইউরোপ। এ দ্বন্দ্বের জেরে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোও বড় সংকটে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসি, রয়টার্স।
ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এখন আরও অনেক সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন সেটি হলো, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি তার একসময়ের পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ঘোষণা দেন, ন্যাটো জোটের কোনো দেশের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্র নিজের ওপর হামলা বলেই মনে করবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির পুতিনের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দৃশ্যত ট্রাম্পের যে তীব্র আগ্রহ, তার ভিত্তিতেই এসব উদ্বেগ জন্ম নিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর ভীষণ চাপ তৈরি করেছেন। আর রাশিয়ার জন্য দিচ্ছেন বড় ধরনের ছাড়ের প্রস্তাব, যা ইউক্রেনবাসীকেই দিতে হবে। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডায় ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি নগণ্য হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে ইউরোপীয়রাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে হয়ে পড়ছেন উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের ছাড় দেওয়ার ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে খেপিয়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শুক্রবারের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলন না করেই বেরিয়ে গেছেন জেলেনস্কি। ট্রাম্পের খেপে যাওয়ার পেছনে জেলেনস্কির খনিজ চুক্তিতে সই প্রত্যাখ্যান করাই শুধু কাজ করেনি। ইউক্রেনের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, তারা এমন এক যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতীয় বাঁচামরার প্রশ্ন। এ ছাড়া পুতিনকে যদি দমিয়ে রাখা না যায় তবে সুযোগ পেলেই তিনি যুদ্ধ অবসানের যেকোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন, এটিও বিশ্বাস তাদের। এমন বিশ্বাস থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বারবারই চাইছেন জেলেনস্কি।
বিভক্ত মার্কিন রিপাবলিকানরা : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় মার্কিন রিপাবলিকানদের বিভক্ত করেছে। ইউক্রেনের জন্য কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ সহায়তার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ করেছে। রিপাবলিকানদের মধ্যে যারা আগে থেকে ইউক্রেনের সমর্থনে ছিলেন, তারা শুক্রবারের ঐতিহাসিক ওই বাগ্যুদ্ধের পর জেলেনস্কির কঠোর সমালোচনা করেন। বৈঠকে ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রকাশ্যে ইউক্রেনীয় নেতাকে অপমান করেন এবং তাকে ‘অশ্রদ্ধাশীল’ বলে অভিযুক্ত করেন। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম কয়েক ঘণ্টা আগেই জেলেনস্কির সঙ্গে সিনেটরদের সৌজন্য বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। পরে তার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আমি ওভাল অফিসে যা দেখেছি, তা অত্যন্ত অশ্রদ্ধাশীল ছিল। আমি জানি না, আমরা আর কখনো জেলেনস্কির সঙ্গে ব্যবসা করতে পারব কিনা। বেশির ভাগ রিপাবলিকান ট্রাম্প ও ভ্যান্সের পক্ষ নিলেও, কয়েকজন ডেমোক্রেটদের সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের পক্ষে অবস্থান নেন।
খারকিভের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাশিয়ার ড্রোন হামলা, আহত ৫ : ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ একাধিক অবকাঠামোতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, হামলায় অন্তত পাঁচ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সাইনিয়েহুবোভ জানিয়েছেন, তিনটি পৃথক এলাকায় বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আটটি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে মস্কো। তিন বছর ধরে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে খারকিভ প্রায় নিয়মিত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। পাঁচ ব্যক্তির আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সাইনিয়েহুবোভ। এদিকে মেয়র ইহোর তেরেখোভ বলছেন, অন্তত সাত লোক আহত হয়েছেন। সাইনিয়েহুবোভ জানিয়েছেন, ড্রোন হামলার শিকার স্বাস্থ্যকেন্দ থেকে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হামলার পর ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন জরুরি পরিষেবা কর্মীরা। তিনি আরও বলেছেন, হামলায় অন্তত কয়েক ডজন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে আরেক রুশ হামলার লক্ষ্যবস্তু ওডেসার কৃষ্ণসাগর বন্দরে ড্রোন হামলায় ব্যক্তিগত বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন।