ট্রাম্পের গাজা দখল সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়
গাজায় আবারও হামলার শঙ্কা

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ক্ষমতায় বসলেই বন্ধ হবে গাজা যুদ্ধ। এমন প্রত্যাশাই ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘটালেও হঠাৎই পালটে দিলেন সিদ্ধান্ত। এবার গাজাকে নিজের দখলে নিতেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা থামছেই না। তার পরিকল্পনার তীব্র বিরোধাতা করেছে জর্ডান, মিসর ও ফ্রান্সের নেতারা। তীব্র সমালোচনা করছে উত্তর কোরিয়াও। রয়টার্স, আলজাজিরা।
গাজা দখলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জর্ডান। দেশটির রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে বাস্তুচ্যুত করার বিতর্কিত পরিকল্পনার বিরোধিতায় আরব দেশগুলো একজোট। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে আলোচনার পর তিনি বলেন, গাজা ও পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বিরুদ্ধে জর্ডানের দৃঢ় অবস্থান আমি পুনর্ব্যক্ত করেছি। এটি গোটা আরব বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এ খবর জানিয়েছে। আবদুল্লাহ আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত না করে গাজা পুনর্গঠন এবং সেখানে মানবিক সংকট মোকাবিলাই সবার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। জর্ডানের এই নেতা জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার গঠনমূলক বৈঠক হয়েছে এবং তারা জর্ডান-মার্কিন দীর্ঘদিনের অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার মতে, দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জনই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়। তিনি বলেন, এজন্য মার্কিন নেতৃত্ব প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন শান্তির মানুষ। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এটিকে বজায় রাখতে কাজ করবে। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিসরও। সোমবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি। বৈঠকে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, আরব দেশগুলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের পরিকল্পনা একেবারেই মেনে নেবে না। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, তবে কোনোভাবেই ফিলিস্তিনিদের তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা যাবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ট্রাম্পের পরিকল্পনার নাম সরাসরি না নিলেও, রুবিও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ও নিরাপত্তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর জোর দেন। আবদেলাত্তি জানান, মিসর নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, তবে সেটি অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা রক্ষার ভিত্তিতে হতে হবে। তিনি মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গেও বৈঠক করেন এবং একই বার্তা দেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’ বলে নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া কেসিএনএ’র এক খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখলের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা রীতিমতো ডাকাতি এবং বোকামি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, কোরিয়ার সেন্ট্রাল বার্তা সংস্থা (কেসিএনএ) সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বলেছে, যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও শান্তির ক্ষীণ আশাও ভেঙে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে বিশ্ব এখন জ্বলন্ত কয়লার মতো উত্তপ্ত বলেও উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থাটি। উত্তর কোরিয়ার বার্তা সংস্থার ওই খবরে ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রশাসনেরও কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে পানামা খাল এবং গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি এবং মেক্সিকো উপসাগর এর নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর করার কড়া সমালোচনা করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি প্রায়ই আন্তর্জাতিক বিষয়ে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে। তারা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার। গাজায় রক্তপাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে থাকে উত্তর কোরিয়া। আবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস শনিবার দুপুরের মধ্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে না দিলে গাজায় যুদ্ধবিরতি বন্ধ করে তীব্র সামরিক অভিযান শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এ ঘটনায় হামাস জানিয়েছে, তারা অস্ত্রবিরতি চুক্তি মেনে চলতে প্রস্তুত এবং ইসরাইলকে যে কোনো জটিলতার জন্য দায়ী করা হবে। নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের ঘোষণার পরই ইসরাইলি বাহিনী গাজার ভেতরে ও চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে এবং এই প্রস্তুতি খুব শিগগিরই সম্পন্ন হবে। যদি শনিবারের মধ্যে হামাস আমাদের জিম্মিদের ফেরত না দেয়, তাহলে অস্ত্রবিরতি শেষ হবে এবং হামাসের চূড়ান্ত পরাজয় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।