জীবনের খোঁজে মৃত্যুর পথে
গোলাগুলির মধ্যেই পানির সন্ধানে ছুটছে খার্তুমবাসী
হৃদিতা ইফরাত
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পানির অপর নাম জীবন। রাত পোহাতেই সেই জীবেনের খোঁজে মৃত্যুর পথে ছোটে সুদানের রাজধানী খার্তুমের অসহায় বাসিন্দরা! মিসরের ‘জল সিন্ধু’ নীলনদের প্রতিবেশী সুদান।
অথচ সেখানেই এখন পানির জন্য হাহাকার। সেনা-আধাসেনা বাহিনীর দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াইয়ে সুপেয় পানির অভাবে ভুগছে সুদানবাসী।
গৃহযুদ্ধ শুরুর পরপরই দুই বাহিনীর গোলাগুলি-বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানী খার্তুমের উত্তরের সবচেয়ে বড় ও একমাত্র পানি সরবরাহ স্টেশনটি। এর পর থেকে একফোঁটা পানিও পায়নি প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা।
এদিকে মাথার ওপর প্রতিদিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রা। কখনো তারও বেশি। অসহনীয় গরমে গর্জে ওঠা তেষ্টায় প্রাণ যেন যায় যায়! মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে পানির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন স্থানীয়রা। কখনো দু-একজন, কখনো আরও বড় দলে। কেউ আসেন পানি নিয়ে, কেউ ফেরেন লাশ হয়ে।
১৫ এপ্রিল থেকে শুরু করে টানা ৪১ দিন (২৬ মে পর্যন্ত) ধরে যুদ্ধ চলছে সুদানে। সেদিন থেকেই পালটে গেছে খার্তুম। পথে পথে সেনা-আধাসেনার সশস্ত্র টহল। মোড়ে মোড়ে কামান। মাথার উপর বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান। যখন-তখন দুপক্ষের গোলাগুলি-পা বাড়ালেই আতঙ্ক। যেন অলি-গলি-রাজপথে ওঁৎ পেতে আছে মৃত্যু।
যুদ্ধের আগে আগেই সামরিক বাহিনীর বিরোধিতায় কিছু কমিটি গঠিত হয়। কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘যুদ্ধের শুরু থেকে আমরা বাসিন্দাদের পানি সরবরাহ করে আসছি। পানি সরবরাহের সময় আমাদের বন্ধু ইয়াসিনকে বুলেটে হত্যা করা হয়। বেঁচে থাকার মতো সৎকারের সময়ও পানির অভাব প্রকট। আমরা লাশ গোসলের ব্যবস্থা না করেই তাকে দাফন করতে বাধ্য হয়েছি।’ শুক্রবার এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। একটু পানির আশায় অনেকেরই অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সংঘর্ষ কমলেই বেরিয়ে পড়েন ঘট, বেসিন এবং জগ নিয়ে নীলনদের তীরে। পানীয় জলের অভাবে অনেকেই আবার বাস্তচ্যুত হচ্ছেন নিজ আবাসস্থল থেকে। এমনি এক বাসিন্দা রাশেদ হোসেন জানান, ‘বোমাবর্ষণ এবং লড়াই নয় বরং সেখানে পানির অভাব ছিল যা আমাকে আমার বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছিল।’
তিনি তার পরিবারের সঙ্গে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে মাদানিতে পালিয়েছেন। সুদানে পানির অভাব যুদ্ধের আগ থেকেই প্রকট। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা জানিয়েছেন সুদানে ১৭.৩ মিলিয়ন সুদানি নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে ছিল। যুদ্ধের দামামায় এ সমস্যায় অসহনীয় ভোগান্তি যোগ করল সুদানবাসীর কপালে। দীর্ঘ এ দ্বন্দ্ব নিরসনে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। তবে বরাবরের মতো এবারও যুদ্ধবিরতি মানেনি দু’পক্ষের কেউই। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট পরই তা ভেঙে পড়ে। কে আগে ভাঙল তারও সঠিক হদিস নেই-একে অপরকে দুষছে দুপক্ষই।