ক্যারিয়ারে যাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ
এক যুগ ধরে ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে দুই ডজনের বেশি নায়িকা কাজ করছেন। শুরুটা খুব ভালোভাবে হলেও একসময় এসে অনেকেই ছিটকে পড়েছেন। কেউ কেউ টানা বেশকিছু ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। যার ফলে রয়েছেন দর্শক আগ্রহের বাইরে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের নিয়ে কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না নির্মাতারা।
তারা ঝিলমিল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি একেবারেই স্থবির। নেই নতুন কোনো সিনেমার কাজ। এদিকে সিনেমায় নায়িকা সংকট, এরকম একটি কথাও প্রচলিত আছে মিডিয়াপাড়ায়। কিন্তু ভালো করে দেখলে এ সংকট আছে বলে মনে হয় না। তবে নায়িকারা তাদের সেভাবে উপস্থাপন করতে পারছেন না। অনেকেই অভিনয়ের বাইরে অন্যদিকে মন দিয়ে লাইনচ্যুত হয়েছেন। কেউ কেউ আবার কাজের বাইরে ব্যক্তিগত ইস্যুতে নানা সমালোচনায় জড়িয়ে বিতর্কিত। নিজেদের মধ্যে নানা কোন্দলে দর্শক আগ্রহ হারিয়েছেন নায়িকারা। তবে অনেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে সিনেমার ইতিহাসে পুনরায় কেউ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন এমন চিত্র দেখা যায়নি। তাই নতুন পুরোনো যারাই এখনো কাজ করছেন বা কাজের চেষ্টা করছেন তাদের পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
একসময় মৌসুমী, শাবনূর , পূর্ণিমা , পপি’সহ একাধিক নায়িকা ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব করেছেন। দর্শক চাহিদায় বছরের পুরোটা সময় শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের কেউই আর সিনেমায় নিয়মিত নন। শাবনূর দীর্ঘদিন প্রবাসে আছেন। তিনি নায়িকা হিসাবেই সিনেমায় ফেরার চেষ্টা করছেন। নতুন একটি সিনেমার কাজও শুরু করেছেন। কিন্তু সিনেমা বিশেষজ্ঞদের মতে, শাবনূরের আগের অবস্থানে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম। এদিকে পূর্ণিমাও সিনেমায় অনিয়মিত। সর্বশেষ তার অভিনীত ‘আহারে জীবন’ নামে একটি সিনেমা মুক্তি পায়। সেটিও দর্শক একেবারেই গ্রহণ করেননি। এতে বোঝা যায় তার আগের অবস্থান নেই। সেই জায়গা আর ফিরে পাওয়াও সম্ভব নয়। মৌসুমী এখন আর নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন না। চরিত্রাভিনেত্রী হিসাবেই কাজ করছেন সিনেমায়। একসময়ের চাহিদাসম্পন্ন নায়িকা পপি নিজেকে তো আড়ালেই রেখেছেন। মিডিয়ায় আর কাজ করবেন না, এমনটাই জানা গেছে। এছাড়া বর্তমানে নায়িকা হিসাবে নিয়মিত কাজ করছেন প্রায় এক ডজনেরও বেশি অভিনেত্রী। তাদের মধ্যে অনেকের ক্যারিয়ার পড়ে গেছে, যাদের আর চেষ্টা করলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। এদের মধ্যে রয়েছেন কেয়া, অপু বিশ্বাস, পরীমনি, মাহিয়া মাহি, নুসরাত ফারিয়া, ইয়ামিন হক ববিসহ একাধিক নায়িকা।
২০০৫ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘কাল সকালে’ সিনেমা দিয়ে অভিষেক ঘটে অপু বিশ্বাসের। এরপর তিনি এফআই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমা দিয়ে নায়িকা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। সিনেমাটি ব্যবসাসফল হলে আর পিছনে তাকাতে হয়নি অপুকে। শাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে একেরপর এক সিনেমায় অভিনয় করেন। কিন্তু শাকিবের সঙ্গে বিয়ে, সন্তান ও বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে বিবাদের পর ক্যারিয়ার নিয়ে একা পথ চলতে শুরু করেন এ নায়িকা। গত তিন বছরে তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সব সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ঈশা খাঁ’, ‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’, ‘ট্র্যাপ : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’, ‘ছায়াবৃক্ষ’ ইত্যাদি। সর্বশেষ তার প্রযোজিত সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘লাল শাড়ি’তে অভিনয় করেন অপু। এটিও দর্শক টানতে পারেনি। স্বভাবতই বলা যায়, ক্যারিয়ারে ঘুরে দাঁড়ানো অপুর পক্ষে আর সম্ভব নয়।
২০০১ সালে ‘কঠিন বাস্তব’ সিনেমার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন কেয়া। প্রথম থেকেই খুব একটা ভালো অবস্থানে ছিলেন না। নজরকাড়ার মতো তেমন সিনেমা উপহার দিতে পারেননি এ অভিনেত্রী। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ক্যারিয়ারে প্রায় ত্রিশটির মতো সিনেমায় কাজ করেছেন। সর্বশেষ গত বছরে মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘কথা দিলাম’ নামে একটি সিনেমা। সেটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। এদিকে মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার একাধিক সিনেমা। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেগুলো দিয়েও খুব একটা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
২০১৫ সালে সিনেমায় যাত্রা শুরু করেন পরীমনি। প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’। নয় বছরের ক্যারিয়ারে হিট কোনো সিনেমা নেই তার। প্রায় সবই ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ। গত তিন বছরে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘স্ফুলিঙ্গ’, ‘গুণিন’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘মা’ সিনেমাগুলো। কিন্তু একটিও দর্শক টানতে পারেনি। সিনেমায় ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে তা উপলব্ধি করেই পথ পাল্টালেন পরি। তিনি এখন সময় দিচ্ছেন ওয়েব কনটেন্টের কাজে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেই নিজের একটি জায়গা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
একাধিক কাজ নিয়ে শোবিজে যাত্রা শুরু করেন নুসরাত ফারিয়া। শুরুতে উপস্থাপিকা, এরপর মডেলিং ও গান এবং সর্বশেষ চিত্রনায়িকা হিসাবে কাজ করেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে চিত্রনায়িকা পরিচয়েই তিনি থিতু হতে চেয়েছিলেন। কলকাতার সিনেমা ‘আশিকী’ দিয়ে ২০১৫ সালে তিনি যাত্রা শুরু করেন। এরপর কাজ করেন বাংলাদেশ ও কলকাতা মিলিয়ে প্রায় ১৫টির মতো সিনেমায়। কিন্তু এখনো কোনো দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। সবশেষ তাকে দেখা গিয়েছিল ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায়। যেখানে তিনি স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার চরিত্রে রূপদান করেছেন। এ নিয়ে বেশ সমালোচনায়ও পড়তে হয় তাকে। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ শিল্পী হওয়ায় বর্তমান সময়ে নিজেকে আড়ালেই রাখছেন এ অভিনেত্রী। হাতে নেই নতুন কোনো সিনেমার কাজ।
‘ভালোবাসার রঙ’ সিনেমা দিয়ে ২০১২ সালে অভিষেক ঘটে মাহিয়া মাহির। শুরু থেকেই বেশ কয়েকটি ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০টির মতো সিনেমা করেছেন। শুরুটা ভালো হলেও এখনকার অবস্থা খুবই খারাপ। সবশেষ তার অভিনীত মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো খুব বাজেভাবেই ব্যর্থ হওয়াতে প্রভাব পড়েছে তার ক্যারিয়ারে। এছাড়া মাঝে সিনেমা ছেড়ে যোগ দেন রাজনীতিতে। সেখানেও হোচট খান। ফের অভিনয়ে ফেরার চেষ্টা করছেন। তবে দর্শক চাহিদা না থাকায় পাচ্ছেন না সেভাবে কাজ।
‘খোঁজ দ্য সার্চ’ দিয়ে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করেন ইয়ামিন হক ববি। এরপর বেশকিছু সিনেমায় অভিনয় করলেও অবস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হন এ নায়িকা। সবশেষ তার মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল ‘ময়ূরাক্ষি’। প্রেক্ষাগৃহে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি সিনেমাটি। এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন এ নায়িকা। সম্প্রতি নতুন একটি সিনেমায়ও যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এটি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা একবারেই ক্ষীণ।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই নায়িকা হয়ে ওঠার দৌড়ে রয়েছেন মিষ্টি জান্নাত, শিরিন শিলা, তানিন সুবাহ, জাহারা মিতু, মৌ খান, মৌমিতা মৌসহ আরও ডজনখানেক। কিন্তু সেভাবে এখনো নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। তাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এদেরও শক্ত অবস্থান তৈরির সম্ভাবনা ক্ষীণ।