Logo
Logo
×

তারাঝিলমিল

রাজনীতির প্রভাবে নিষ্ক্রিয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি

আওয়ামী সমর্থক নির্বাচিত নেতাদের দেখা মেলে না কার্যালয়ে

Icon

তারা ঝিলমিল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন খাতে পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকেই আওয়ামী নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামীঘেঁষা ও সুবিধা নেওয়া মানুষগুলোও ঘাপটি মেরেছেন। এদিকে আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনো নিষ্প্রাণ এ সমিতি। নেই কোনো কর্মযজ্ঞ কিংবা শিল্পীদের আনাগোনা। পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল যাচ্ছেন না এফডিসিতে। অন্য নেতাদেরও কোনো দেখা মিলছে না। সমিতির স্টাফরাও জানেন না নেতারা কোথায় আছেন? কবে আসবেন? চাউর হয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে অনেক নেতা এখন কিছুটা নীরব আছেন। তাই এফডিসিতে আসছেন না বা কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন না। সুবিধামতো আবারও হয়তো ভোল পালটে অন্য দলের ট্যাগ নিয়ে ফিরে আসবেন, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর নেতারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তারা এক সময় বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করলেও পরে দল পালটে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। তার মধ্যে রয়েছেন সভাপতি মিশা সওদাগর, সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রুবেল ও ডিএ তায়েব, সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল, সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী। এছাড়া রয়েছেন বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য চিত্রনায়িকা রত্না কবির, চিত্রনায়িকা সৈয়দ কামরুন নাহার শাহনূর, দিলারা ইয়াসমিনসহ অনেকে।

শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মিশা সওদাগর। সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলেও বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা গেছে। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন কথা বলায়, মিশা ঠিক কোন দলের সমর্থক সেটা বুঝতে পারাটাও দুঃসাধ্য। ২০১৯ সালের দিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিশার একটি ছবি ভাইরাল হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিশা সওদাগর এক সময় বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সেটা তিনি তখন অস্বীকার করেছেন। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় রাস্তায় নেমেছিলেন এ অভিনেতা। শুধু তাই নয়, মুজিব কোট পরিহিত মিশাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে। নিজের রাজনৈতিক আদর্শ প্রসঙ্গে সে সময় মিশা বলেছিলেন, ‘আমি রাজনৈতিক কোনো দলে নেই। আমি অভিনয় করি আর শিল্পী সমিতির রাজনীতি করি।’

সমিতির কাজ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেন, ‘শিল্পী সমিতির কাজ বন্ধ নেই। আমাদের শিল্পীরা সমিতির অফিসে বসেন নিয়মিত। কিছুদিন আগেও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।’

শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রুবেল, তিনি আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে প্রকাশ্যেই রাজনীতির মাঠে রয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন। সমিতির আরেক সহ-সভাপতি অভিনেতা ডিএ তায়েবও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্ত্রীসহ আওয়ামী নেতাদের বিভিন্ন আয়োজনে তিনি নিয়মিত অংশ নিতেন।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করছেন অভিনেতা ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এরই মধ্যে নানা অভিযোগও উঠেছে তার রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে। সম্প্রতি একটি মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিএনপির রাজনীতি দিয়ে উত্থান ঘটে এ অভিনেতার। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হন। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি জোট। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হলেও তিনি দাবি করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেই তিনি বারবার বিজয়ী হয়েছেন। তবে তিনি এখন হয়ে গেছেন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ কর্মী। শুধু তা-ই নয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৪ (মিরপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন তিনি। এছাড়া ২০২১ সালে উপনির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ারও চেষ্টা করেন। আন্দোলনপরবর্তী আর এফডিসিতে দেখা যায়নি এ অভিনেতাকে। এ প্রসঙ্গে জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, পরপর দুদিন তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য তিনি সমালোচিতও হয়েছেন কিছুদিন আগে। ২০২৩ সালে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনপরবর্তী এফডিসিতে সাংবাদিক-শিল্পীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জয় চৌধুরীর মারমুখী ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। সাংবাদিকদের ওপর ফিল্মি কায়দায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আঘাত করেন এ অভিনেতা। যার ভিডিও প্রকাশ্যে এলে সমালোচনার মুখে পড়েন। এর জন্য গণমাধ্যমে নিষিদ্ধ হন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। করতেন ছাত্রদল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভোল পাল্টে বনে যান আওয়ামী সমর্থক। আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মুজিব কোট পরেই তিনি অংশ নিয়েছেন। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট না করলেও সমিতির কার্যক্রম নিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘সমিতিতে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব পড়েনি। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছি। তাছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তেমন বড় পরিসরে তো কিছুই করা সম্ভব নয়।’

সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য চিত্রনায়িকা রত্না কবির। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন এ অভিনেত্রী। তবে বর্তমানে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নেই বলে জানিয়েছেন।

সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য চিত্রনায়িকা শাহনূর। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। তবে পরে তাকে খুব বেশি আওয়ামী কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।

‘সওদাগর’খ্যাত নায়িকা দিলারা। গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এ অভিনেত্রীর পুরো নাম দিলারা ইয়াসমিন। শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য এ অভিনেত্রীও আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। দলের মনোনয়ন নিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ-সদস্য হওয়ার জন্যও তৎপরতা চালিয়েছিলেন।

সমিতির ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক চিত্রনায়ক ইমন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর আয়োজনে মুজিব কোট পরেই অংশ নিতেন এ অভিনেতা।

সমিতির কার্যকরী কমিটির অন্য সদস্য সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো, কোষাধ্যক্ষ কমল, কার্যনির্বাহী সদস্য রিয়ানা পারভীন পলি, চুন্নু, সুব্রত, নানাশাহ্, আলীরাজ, সুচরিতা, সনি রহমান ও রোজিনাকে তৎকালীন সরকারের আমলে প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম