
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২১ এএম

রাজীব পাল রনী
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
আলু উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জে কদিন আগেও ছিল আলু তোলার ধুম। পুরুষের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করেছেন নারীরাও। আলু তোলার মৌসুমে এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জীবিকার টানে নারী শ্রমিকরা ছুটে আসেন আলু উত্তোলন করতে। পাশাপাশি ফসল বপন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, বীজ কাটা পর্যন্ত নারীরা এককভাবেই করে থাকেন এসব কাজ। বিস্তৃত আলু খেতে সারিবদ্ধ হয়ে মৌসুমি নারী শ্রমিকদের কাজ করার দৃশ্য চোখে পড়ে জেলাজুড়ে। কথা হয় নেত্রকোনা জেলার মাজেদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। তাই গত ১০ বছর ধরে এ মৌসুমে এখানে এসে বিভিন্ন অঞ্চলে বীজ আলু বপন ও উত্তোলন করে অর্থ উপার্জন করছেন। এ কাজের জমানো টাকা দিয়ে ২ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছেন।
লালমনিরহাটের মালেকা বেগম বলেন, ‘হামাক এ্যালা না খায়া থাকপার হয় না। লাইনোত দাঁড়ায়া হামরা চাউলের লিগা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরঘুর করি না, কাম করি খাই।’ শুধু মাজেদা আর মালেকা বেগমই নয়, মুন্সীগঞ্জে এসে জমিতে কাজ করে সচ্ছল হয়ে অনেক নারীই সংসারের হাল ধরেছেন। গাইবান্ধার হাজেরা; নেত্রকোনার জোবেদা বেগম, রূপা আক্তার; রংপুরের শেফালি, করিমন নেছা, বরিশালের আলোসহ প্রায় কয়েক শতাধিক নারী এভাবেই সংসারের হাল ধরেছেন।
জেলার বিভিন্ন ফসলি জমি ঘুরে দেখা গেছে, খেত থেকে আলু তুলছেন নারীরা। বীজ আলু বপন ছাড়াও খেত নিড়ানি, ধান লাগানো, ধান কাটা, ফসল ঘরে তোলার কাজও নারীরাই করে থাকেন। যদিও কৃষি খাতে নিয়োজিত এ বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিকের মূল্যায়ন হয় সামান্যই। আলু তোলার জন্য পুরুষ শ্রমিকদের এক বেলায় যেখানে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি দেওয়া হয় না। কৃষি খাতে নারী শ্রমিকদের বৈধ পরিচিতি না থাকায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেওয়া হয়।
‘ওরা আমগেরে খাটিয়ে নেয় বেশি, মাইয়ে মানুষ বলে টাকা কম দেয়, কী করব?’ কথাগুলো বলেছিলেন সাতক্ষীরার শ্যমনগর এলাকার সুবর্ণা। দেশের মোট শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে নারী। এক জরিপে দেখা যায়, কর্মক্ষম নারীদের মধ্যে কৃষি কাজে সবচেয়ে বেশি নারী নিয়োজিত। নারীদের স্বীকৃতি ও ন্যায্য মজুরি প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে দেশের কৃষি উৎপাদন কাজে তারা আরও আগ্রহী হবেন এবং কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।