
প্রিন্ট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২১ এএম

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরও পড়ুন
আমরা আর কতদিন চুপ থাকব
-আনিকা তাহসিন হাফসা
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আরেকটা ধর্ষণের খবর। কখনো পাঁচ বছরের শিশু, কখনো স্কুল-কলেজের ছাত্রী, কখনো গৃহবধূ, কখনো বৃদ্ধা। শুধু বয়স বদলায়, কিন্তু খবরটা একই থাকে-একটা মেয়েকে নৃশংসভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, সমাজ একটু হাহাকার করেছে, তারপর সব চুপচাপ! আবার নতুন দিনের অপেক্ষা, আবার নতুন শিকার।
আমরা কি মানুষ নই? আমাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই? রাস্তায় বের হলে আতঙ্ক, বাসে উঠলে ভয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, এমনকি নিজের ঘরেও কি আমরা নিরাপদ? একটা মেয়েকে ধর্ষণ করা শুধু তার প্রতি নয়, পুরো সমাজের প্রতি চরম সহিংসতা। কিন্তু আমরা কেন চুপ করে থাকি? কেন বারবার দোষ নারীর পোশাক, চলাফেরা, জীবনযাত্রার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়? আমরা, নারী শিক্ষার্থীরা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকতে পারি না, পারব না! আমাদের শুধু কড়া আইনের কথা শুনিয়ে লাভ নেই-আমরা চাই সেই আইন বাস্তবে প্রয়োগ হোক। ধর্ষকদের বিচারের নামে বছরের পর বছর অপেক্ষা নয়, দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পরিবার থেকে শিক্ষা, রাস্তা থেকে আদালত-সব জায়গায় ধর্ষণবিরোধী কঠোর অবস্থান নিতে হবে। নারী ভোগ্যপণ্য নয়! আমাদের হাসি, স্বপ্ন, জীবন নিয়ে যারা খেলতে চায়, তাদের এ সমাজে জায়গা থাকতে পারে না। আমরা আর ভয় পাব না, আর চুপ থাকব না। আমরা আওয়াজ তুলব, আমরা রুখে দাঁড়াব! এ প্রতিবাদ শুধু কাগজে-কলমে নয়, আমাদের রাস্তায়, আমাদের কণ্ঠে, আমাদের লড়াইয়ে থাকতে হবে। আজ আমরা যদি চুপ থাকি, তাহলে কাল আরও একটি মেয়ের জীবন ধ্বংস হবে। কিন্তু আমরা সেটা হতে দেব না। এখনই সময় বদলানোর! এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর!
চতুর্থ বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একা বের হতেও ভয় লাগে
-জান্নাতুল বাকি তিন্নি
আমরা দিন দিন যত সভ্য হচ্ছি ঠিক তত যেন আমরা আমাদের বিবেক-বিবেচনা বোধ হারিয়ে ফেলছি। বিশ্বের প্রায় অনেক দেশেই ধর্ষণের খবর ডাল-ভাতের মতো হয়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এখন প্রায় প্রতিদিন খবরের কাগজে, ফেসবুকের প্রতিটি রিফ্রেশে ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে। কখনও মাঝবয়সি নারী, কখনো স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আবার কখনো শিশু ধর্ষণের খবর। দিন দিন এ বিষয়টা খুব বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এসব খবর দেখে এখন একা বের হতেও ভয় লাগে, চেষ্টা করি খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বের না হতে। বিশেষ করে ভোর অথবা সন্ধ্যার পর একদমই বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করি। এখন এমন এক অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, কেউ একটু তাকালেও তার তাকানো সন্দেহজনক মনে হয়। কারও মতে এ অবস্থার জন্য দায়ী নারীর পোশাক। আবার কারও মতে এর জন্য দায়ী পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু আমি নারীর পোশাককে আংশিক দোষ দিলেও সম্পূর্ণ দায় দেব পুরুষের দৃষ্টিকে, পুরুষের মনমানসিকতাকে। কারণ ৮ বছরের যে শিশুটি ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে তার আর কি পোশাকের সমস্যা ছিল! আর এসব পুরুষরূপী কাপুরুষদের জন্য গোটা পুরুষ সমাজ এখন এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ সমস্যার একমাত্র সমাধান দিতে পারে ধর্ষকের কঠিন শাস্তি। আর এর একমাত্র শাস্তি হতে পারে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড। এর জন্য সবার প্রয়োজন সরকারকে সহযোগিতা করা, ধর্ষকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। তবেই দেশ ধর্ষকমুক্ত হবে। দেশের প্রতিটি মেয়ে শিশু, নারী নির্ভয়ে তাদের জীবনযাপন করতে পারবে। তৈরি হবে একটা সুন্দর দেশ।
অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ
ধর্ষণ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়
-সাকিয়া হক
বাংলাদেশে মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব নতুন কোনো বিষয় নয়। যে দেশে প্রতি ৯ ঘণ্টায় একটি ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্টেড হয়, সে দেশে ধর্ষণ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বরং একটি সামাজিক ব্যাধি হিসাবে বিবেচনা করাই শ্রেয়। এ ব্যাধি মহামারি রূপে ছড়িয়ে পড়ার উপসর্গ আজ আমরা চারপাশে দেখতে পাচ্ছি। দুধের শিশু, স্কুলপড়ুয়া মেয়ে বা কিশোরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, কর্মক্ষেত্র থেকে ঘরে ফিরতে থাকা নারী-কেউই এর কালো থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কিন্তু কোনো একক পদক্ষেপ এ মহামারির তাণ্ডবলীলা থামাতে সক্ষম নয়।
পারিবারিক মূল্যবোধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথ যৌন শিক্ষা প্রদান এবং নারী-পুরুষের লিঙ্গভিত্তিক সমতা ও সম্মান প্রদর্শন নিয়ে আলাপ, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ, প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে প্রচারণা এবং আইনশৃঙ্খলা ও বিচারিক ব্যবস্থাদির যথাযথ ও সময়োচিত প্রয়োগ- সবাই এই ‘ধর্ষণ উৎসব’-এর অশুভ উচ্ছ্বাস থামাতে ভূমিকা রাখতে পারে। আর তা অর্জনে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক মানসিকতায় বদল আনাটাও জরুরি। নয়তো এ দেশের কন্যাশিশুরা নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের যে অধিকার, সে অধিকার তারা নিকট ভবিষ্যতে সহসা অর্জন করতে পারবে না। আজ এই ২০২৫ সালে এসেও ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দিতে হচ্ছে, লিখতে হচ্ছে প্রতিবাদলিপি- এটাই জানান দেয় যে, সভ্যদের কাতারে দাঁড়াতে আমাদের আরও অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে। সে বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে সম্মিলিতভাবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি কি না-সেটাই আজকের প্রশ্ন।
নারী অধিকারকর্মী
আমরা নারীরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চাই
-ঋতু দাস
বর্তমান সময়ের সর্বাধিক আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণ কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি একটি ভয়াবহ ব্যাধি। মানসিক বিকাশে বিপর্যয় ও নৈতিক অবক্ষয়ের ফল ধর্ষণ। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, নারীর প্রতি সহিংস ও বিরোধপূর্ণ মানসিকতাই ধর্ষণের প্রধান কারণ। এ ছাড়া অপরিণত বয়সেই বিকৃত পর্নোগ্রাফির প্রভাব, পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, আইনের জটিলতা ও দুর্বলতা, মাদকাসক্ত ও অপরাধপ্রবণতা এগুলোও ধর্ষণের কারণ। সামাজিক এই ব্যাধি রোধে সবার আগে আইনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। ৩০-৪০ কার্যদিবসের মধ্যেই ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ : মাগুরার শিশু আফিয়া যে ধর্ষণের স্বীকার, তা স্পষ্ট প্রমাণিত। ধর্ষকের পরিচয়ও এখানে সবারই জানা। তবু যদি এ ঘটনায় শাস্তির কোনো দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করতে না পারি, পরবর্তী ঘটনাগুলো রোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে প্রবাদে আছে, Prevention is better than Cure. তাই ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে আমাদের প্রতিকারের সঙ্গে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়াও জরুরি। ছেলে শিশুর মানসিক বিকাশের সময় আমাদের বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত। লিঙ্গ বৈষম্যমূলক ও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোনো বিরোধপূর্ণ মনোভাব শিশুর মধ্যে যেন সংক্রামিত না হয়, সে বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। যেখানে মনোবিদদের দ্বারা তরুণদের ইতিবাচক মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ধর্মীয় সংগঠনগুলোর আলোচনায়ও নারী-পুরুষের পারস্পরিক নম্র ও বিনয়ী আচরণের শিক্ষা দেওয়া উচিত। সবশেষে আমরা নারীরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চাই, যেখানে চলতে গেলে সম্ভ্রম হারানোর ভয় আমাদের তাড়া করবে না।
দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদেরও স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে
-ঋতুপর্ণা চাকমা
বাংলাদেশে নারীরা কতটুকু নিরাপদ? দেশে আমাদের যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বের হলেই নিজের ভেতর ভয় কাজ করে, চারদিকে শুধু ধর্ষণ, খুন, অপহরণ-এ দেশ কবে ঠিক হবে জানি না। আমরা এ দেশের নাগরিক, এ দেশের মেয়ে। আমাদেরও স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। বাঁচার জন্য এখন আমাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন।
সাফজয়ী নারী ফুটবলার
আগে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন
-শিরিন সুলতানা
পত্রিকার পাতা উলটালেই সব নেতিবাচক সংবাদ। দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ধর্ষণ আর নারী নির্যাতন। প্রতিদিনই সামনে আসছে নারীর ওপর লোমহর্ষক সব অপরাধের খবর। বহু ঘটনা থেকে যাচ্ছে আড়ালেই। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক নারী দিবসও পালিত হলো। যে দেশে নারীদের এতটুকু নিরাপত্তা নাই, সে দেশে নারী দিবস মানে আমাদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছুই না। আগে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। তারপর অন্য কিছু।
স্বর্ণজয়ী সাবেক কুস্তিগির
সরকার ও জনগণকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে
-তাসলিমা নীলু
ধর্ষণ অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ এবং এটি সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে। এটি শুধু আক্রান্তদের জীবনকেই ধ্বংস করে না, বরং সমাজের মূল্যবোধ, নিরাপত্তা ও বিশ্বাসের প্রতি আস্থাও নষ্ট করে দেয়। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধর্ষণ একটি বড় সমস্যা, তবে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এর পেছনে যে কারণগুলো থাকতে পারে, তার মধ্যে আছে পুরুষের মনে নারীদের প্রতি অসম্মান পুষে রাখা। পাশাপাশি শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বলতা এবং আমাদের পরিবার ও সমাজের দায়িত্বহীনতা দেশে ধর্ষণ বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এ দুরবস্থা এখনই থামাতে হলে সরকার এবং জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। ছোটবেলা থেকেই লিঙ্গ সমতা, নারীদের প্রতি সম্মান এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা এবং এর সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মশালা এবং আলোচনা সভা আয়োজন করা যেতে পারে। পাশাপাশি শক্তিশালী আইন তৈরি করতে হবে এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শাস্তি ত্বরিত ও কার্যকরী হওয়া দরকার, যাতে অপরাধীরা সহজে পার পেতে না পারে। শুধু শাস্তি নিশ্চিত করলেই হবে না, ধর্ষণের শিকার নারীদের সহায়তাও করতে হবে। ধর্ষণের শিকার হলে সঠিক ও দ্রুত সহায়তা পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ, হাসপাতাল এবং অন্য সহায়ক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি নির্ভরযোগ্য ও দ্রুত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিবারে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদের সঠিক মূল্যবোধ শেখানো এবং তাদের মধ্যে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মনোভাব গড়ে তোলা না হলে ধর্ষণের মতো ঘটনা কমবে না।
নারী উদ্যোক্তা
সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগও অব্যাহত রাখা জরুরি
-জুয়েইরিযাহ মউ
সাম্প্রতিককালে আমরা নারীর প্রতি সহিংসতার যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি তার অন্যতম কারণ হলো ক্রমাগত একের পর এক ঘটনা ঘটার পরও উল্লেখযোগ্য কোনো আইনি পদক্ষেপ রাষ্ট্র কর্তৃক না নেওয়া এবং সেইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট বক্তব্য না দেওয়া বা অবস্থান স্পষ্ট না থাকা। নিকট অতীতে যখন পাঠ্যপুস্তকে ‘ও তে ওড়না’ যুক্ত হয় তখনই নারী শরীরকে কীভাবে শিশুদের মগজে চিত্রায়িত করা হচ্ছে, কোন এঙ্গেলে করা হচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সচেতন নাগরিকদের একাংশ। এমনকি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ কর্তৃক শিশুসহ মায়ের ওপর গরম পানি ছোড়ার দৃশ্যও আমরা দেখতে পেয়েছি এর মধ্যে। সাম্প্রতিককালে যখন ওড়না নিয়ে এক ইভটিজার একজন নারীকে হেনস্থা করে এবং একদল তাকে ফুল-পাগড়ি দিয়ে বরণ করে নেয় তখন আমাদের ভাবতেই হবে ‘ধর্ম’ কীভাবে রাজনৈতিক টুল হিসাবে ব্যবহৃত হয় বাংলাদেশে। পরিবারে নারী এবং মেয়েশিশুরা কতটা অনিরাপদ তার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল মাগুরার আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনা। এসব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এখন যে বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো নারীদের অনুধাবন করতে হবে কোন রাজনৈতিক দল নারীর প্রতি সহিংসতার বিপক্ষে। নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিটা রাজনৈতিক দলের অবস্থান নারীসংক্রান্ত ঘটনাগুলোতে কেমন ছিল তা চিহ্নিত করা এবং সে সম্পর্কে কথা বলা, সচেতন থাকা জরুরি। সরকারের ওপর যার যার অবস্থান থেকে সব সংগঠন এবং গোষ্ঠী থেকে চাপ প্রয়োগও অব্যাহত রাখা জরুরি। যেন যৌন হয়রানি, হামলা এবং ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
লেখক ও নির্মাতা
নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবনতি ঘটেছে
-নাজিয়া বেগম
বাংলা ভাষায় ধর্ষণের চেয়ে নির্মম ভয়ংকর কোনো শব্দ মনে হয় নেই। বিশ্বব্যাপী ধর্ষণ একটি সামাজিক সমস্যা। যৌন হয়রানি, নারীর ওপর বলপ্রয়োগ এসব এ সমাজে অতিপরিচিত। এর মাধ্যমে সংঘটিত হয় ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধ। আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি যেখানে ধর্ষণ নিয়ে কথা বলা কিংবা প্রতিবাদ করা অনেক সময় দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের বিচার সহজে হয় না। অপরাধীর প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে, কিংবা সামাজিকভাবে অসম্মানিত হওয়ার ভয়ে নির্যাতিতা বা তার পরিবার শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে পারে না। ধর্ষণের অনেক খবরই আসে না। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার হার দিন দিন বেড়েছে, সঙ্গে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবনতি ঘটেছে। এটা জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়। আমরা তো রক্তে কেনা বাংলাদেশে এমন দৃশ্য দেখতে চাইনি। হাসপাতালের বেডে আছিয়ার অসাড় হয়ে পড়ে থাকা, বীভৎসতার এ করুণ চিত্র দেখার জন্যই কি এমন বাংলাদেশ! প্রশ্ন থেকেই যায়। ধর্ষণ নির্মূল করতে চাইলে একেবারে গোড়া থেকে নির্মূল করতে হবে। সবার আগে কারণ খুঁজে বের করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেলে সব অপরাধই কমে আসবে। ধর্ষণের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে অতিদ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারকে আরও কঠোর ও তৎপর হতে হবে। অনতিবিলম্বে অপরাধীকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে। শুধু এটুকু বলতে চাই, আমি আবারও রাস্তায় একা হাঁটতে চাই! জোছনার আলো আকণ্ঠ পান করতে চাই নিরাপদে!
শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ।