যাই তবু এগিয়ে
প্রতিভায় অনন্য উচ্চতায় মেরিল স্ট্রিপ
সুমন্ত গুপ্ত
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একদিকে সুদর্শনা, অন্যদিকে মুগ্ধকরা অভিনয়; এ দুইয়ের মিশেল যার মধ্যে তিনি হলেন মেরিল স্ট্রিপ। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অভিনেত্রী। তবে গায়িকা হিসাবেও তার পরিচিতি রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে গুণী ও সম্মানিত অভিনেত্রী হিসাবে বিবেচিত। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা অভিনেত্রীর তালিকায় মেরিল স্ট্রিপের নামটি উচ্চারিত হয় প্রথম দিকেই। বর্ণিল ক্যারিয়ারে এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা অন্যদের জন্য স্বপ্নের মতো। হলিউড তারকা মেরিল স্ট্রিপের জন্ম ২২ জুন, ১৯৪৯ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অভিনেত্রী ও গায়িকা হিসাবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তার পুরো নাম মেরি লুইস মেরিল স্ট্রিপ। তার অভিনয় জীবন শুরু হয় মঞ্চ দিয়ে। ১৯৭১ সালে ‘দ্য প্লেবয় অব সেভিল’ ছিল তার অভিনীত প্রথম মঞ্চ নাটক। এরপর ১৯৭৭ সালে টেলিভিশন ও বড় পর্দায় অভিষেক হয় মেরিল স্ট্রিপের। খুব ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার সিনেমায় যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু সেই ছোট্ট শুরুটাকে তিনি অসামান্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন নিজ যোগ্যতায়। মেরিল স্ট্রিপ অভিনীত সিনেমাগুলো ব্যবসায়িকভাবে যেমন সফল, তেমনি সমালোচকদের কাছেও দারুণভাবে প্রশংসিত। ‘দ্য ডিয়ার হান্টার’, ‘ক্রেমার ভার্সাস ক্রেমার’, ‘সোফিস চয়েজ’-এর মতো বিখ্যাত সিনেমাগুলোতে তার অভিনয় দাগ কেটেছে দর্শক-সমালোচকদের মনে। আর একই সঙ্গে তার অর্জনের পাল্লা হয়েছে ভারী। পুরস্কার ও সম্মাননায় মেরিল স্ট্রিপের ধারেকাছেও কেউ নেই। বলা যায়, পুরস্কারের রানি তিনি। তুখোড় অভিনয়ের জন্য তিনি রেকর্ডসংখ্যক ২১ বার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছেন। আর জিতেছেন তিনবার। এছাড়া তিনি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে ৩১টি মনোনয়ন পেয়েছেন, জিতেছেন ৯টি। কোনো অভিনেত্রীর জন্য মনোনয়ন ও বিজয় দুই দিক দিয়েই এটি সর্বোচ্চ। এ ছাড়া দুবার বাফটা অ্যাওয়ার্ড, তিনবার প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ডসহ দেড় শতাধিক পুরস্কার জিতেছেন তিনি। মেরিল স্ট্রিপ ১৯৭৮ সালে ডন গামারকে বিয়ে করেছিলেন। তবে তার আগে তিনি জন ক্যাজেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। স্ট্রিপের সংসারে চার সন্তান রয়েছে। ছোটকাল থেকে আত্মকেন্দ্রিক ও কিছুটা অলস প্রকৃতির মেরিল স্ট্রিপ। তার মা একবার বলেছিলেন, ‘মেরিল, তুমি সম্ভাবনাময়ী। তুমি অসাধারণ। তুমি একবার কোনো কিছুতে মন বসিয়ে ফেললে সেটা করেই ছাড়বে। কিন্তু তুমি আলসেমি করলে সেটি সম্ভব নয়। তবে তোমার দ্বারা কোনোকিছুই করা অসাধ্য নয়।’ নিজের জন্মদাত্রীকে নিজের জীবনের চলার পথের গুরু মনে করতেন। ছোট্ট মেয়েটি মায়ের কথাগুলোকে পরম যত্নে বুকে ধারণ করে নিয়েছিল। সেই থেকে শুরু করে নিজের প্রাপ্ত বয়সকালেও মাকে সব সময় নিজের একমাত্র উপদেষ্টা হিসাবে গণ্য করে এসেছিলেন। নব্বই দশকের শুরুর দিকে হঠাৎ করে তার মুভিগুলোর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। চল্লিশের কোঠায় পৌঁছে যাওয়া এ অভিনেত্রীকে তখন দর্শক ঠিক আগের মতো মেনে নিতে পারছিল না। একের পর এক সিনেমা ফ্লপের খাতায় নাম ছিল, এমনকি কমেডি সিনেমায় অভিনয় করেও দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছিলেন না তিনি। ১৯৯০ সালের কমেডি-ড্রামা ফিল্ম ‘পোস্টকার্ড ফ্রম দ্য এজ’, ১৯৯১ সালে কমেডি-ফ্যান্টাসি ফিল্ম ‘ডিফেন্ডিং ইয়োর লাইফ’, ১৯৯২ সালে ব্ল্যাক কমেডি ফিল্ম ‘ডেথ বিকামস হার’, ১৯৯৩ সালে পিরিয়ড ড্রামা ফিল্ম ‘দ্য হাউজ অব দ্য স্পিরিটস’ সবকটিই মেরিলের অভিনয় জীবনকে ধসে নামাতে শুরু করেছিল। কিন্তু তিনি যেন এত সহজে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে চাননি। তাই ১৯৯৫ সালে ওয়েস্টার্ন হার্টথ্রব হিরো ক্লিন্ট ইস্টউড নিজের পরিচালিত ও অভিনীত রোমান্টিক মুভি ‘দ্য ব্রিজেস অব মেডিসন কাউন্টি’তে মেরিলকে চুক্তিবদ্ধ করেন। এ মুভি মেরিলকে আবারও হলিউডে পাকাপোক্তভাবে ফিরে আসতে সুযোগ করে দেয়। সমালোচকদের মতে, মেরিল প্রথম মধ্য বয়স্ক অভিনেত্রী যিনি এমন নিখুঁতভাবে রোমান্টিক হিরোইন হিসাবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। ১৯৯৬ সালে ‘মারভিন’স রুম’ মুভিতে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর মায়ের চরিত্রে তাকে দেখা গিয়েছিল। এতে অভিনয়ের জন্য মেরিল আরও একবার গোল্ডেন গ্লোবে মনোনয়ন তালিকায় নিজের নাম উঠিয়েছিলেন। এক বছর বিরতির পর, ১৯৯৮ সালে ‘ড্যান্সিং এট লুওনাসা’তে একজন আইরিশ মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেন। এ চরিত্রটিকে তার অভিনয় জীবনের অন্যতম সেরা চরিত্র বলে বিবেচনা করা হয়। একই বছর ‘ওয়ান ট্রু থিংক’ মুভিতে তিনি একজন ক্যানসার আক্রান্ত মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমাটি বেশ ভালো রিভিউ পেয়েছিল। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের ফিল্ম ক্রিটিক কেনেথ টুরান মুভিটিতে মেরিলের অভিনয় দেখার পর বলেছিলেন, ‘তার ক্যারিয়ারের অন্যতম কম নাটকীয়তাসম্পন্ন চরিত্র। খানিকটা সততা ও বাস্তবতার সঙ্গে তিনি চরিত্রটিকে দারুণভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।