প্রান্তিক
চরাঞ্চলে ‘আইনি তথ্যসেবা’ নিয়ে নারীর পাশে নারী
গোলাম মাহবুব
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের নারীদের একযুগেরও বেশি সময় ধরে বিনা খরচে আইনি তথ্যসেবা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন ফ্রেন্ডশিপ নারী কর্মীরা। এতে চরাঞ্চলের নারীদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে দুর্গম চরাঞ্চলগুলোয় অনেকাংশে কমেছে পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব। আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে আইনি তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের সুশাসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার তিন ইউনিয়নে চালু করা হয় ‘আইনি তথ্যসেবা কেন্দ্র’। বর্তমানে ২০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে এসব আইনি তথ্যসেবা দিয়ে আসছে তারা। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন নারী কর্মী নিযুক্ত আছেন। একজন ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি প্যারালিগ্যাল (এফসিপি), অপরজন ফ্রেন্ডশিপ কমিউনিটি গভর্ন্যান্স এইড (এফসিজিএ), যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শ্রেণির নারীদের আইনি তথ্যসেবা দিয়ে আসছেন। এফসিপি সরাসরি পরামর্শদাতা এবং এফসিজিএ সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করে। তাদের হিসাবে গত এক মাসে তিন ইউনিয়ন মিলে অন্তত ২০০ নারীকে আইনি তথ্য সেবা দিচ্ছেন তারা।
উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত অষ্টমীরচর, নয়ারহাট ও চিলমারী ইউনিয়নগুলোয় প্রায় একযুগেরও বেশি সময় এসব আইনি সেবা পাচ্ছেন চরাঞ্চলের অসহায় নারীরা। এতে ওই অঞ্চলে অনেকাংশে কমেছে অপরাধ। স্বাভাবিকভাবে ওইসব আইনি সেবা বা পরামর্শ নিতে যেতে হতো থানায়। নদী পাড়ি দিয়ে থানায় যেতে সময় লাগে কয়েকঘণ্টা। ফলে দেখা যেত অনেকেই এ সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত ছিলেন। বর্তমানে সহজেই এসব সেবা পাচ্ছেন তিন চরের প্রায় ১৫ হাজার নারী।
নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ারচর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, রেহেনা আক্তার (এফসিপি) ও ইরিনা খাতুন (এফসিজিএ) নিরলসভাবে চরাঞ্চলের নারীদের আইনি তথ্যসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা জানান, এ আইনি তথ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত ১৭ নারীকে আইনি তথ্যসেবামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন।
কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা মোছা. মেহেরা বেগম বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। ছেলেমেয়েরা ভরণ-পোষণ দিচ্ছে না। পরে আইনি তথ্যসেবা কেন্দ্রে এসে সহায়তা চাইলে আপারা আমাকে সহযোগিতা করেন। আমার সন্তানদের কাছে গিয়ে কথা বলেন। বর্তমানে ছেলেমেয়েরা নিয়মিত আমার ভরণ-পোষণ দিচ্ছে এবং আমি খুব সুখে আছি।’ মোছা. সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী প্রায়ই আমাকে নির্যাতন করতেন। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে এখানে এসে কথা বললে, এখানকার আপারা গিয়ে আমার স্বামীকে বুঝিয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়া কী কী হতে পারে। আমার স্বামী বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এখন পারিবারিক সমস্যা আর নেই। আমি এখন ভালো আছি।’
রেহানা আক্তার জানান, সপ্তাহে তিন-চার দিন বিভিন্ন সমস্যার আইনি সমাধান পেতে নারীরা আমাদের কাছে আসেন। তাদের সমস্যাগুলো শুনে এর আইনি কী কী পদক্ষেপ রয়েছে, সেগুলো তাদের জানিয়ে দিই। এ ছাড়া আমরা অভিযোগগুলো নিয়ে বা সহায়তা দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত আইনি সেবাসহ সব ধরনের সেবা পেয়েছেন ১৭ নারী।
প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আবদুল মান্নান জানান, ‘আমাদের কর্মীরা ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করেন। চরাঞ্চলের ২০টি আইনি তথ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। ফলে দিন দিন চরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ আইনি তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো। স্থানীয়ভাবে যে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হয় না, সেগুলো জেলা লিগ্যাল এইডে পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে চরাঞ্চলের নারীরা সেবা পেয়ে তাদের অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে।’