
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম
আপনার শিশু কি পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছে

ডা. তুহিন বড়ুয়া তমাল
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বাচ্চাদের ঘুম নিয়ে অভিভাবকদের অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। অনেক বাবা-মা মনে করেন তার বাচ্চা খুব বেশি ঘুমায়। আবার অনেকেই ভাবেন এত কম ঘুমায় কেন? আসলে বয়স অনুযায়ী ঘুমের সময়ে ভিন্নতা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের যেমন দৈনিক ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট; বাচ্চাদের তেমন নয়। বয়স অনুযায়ী কোন বাচ্চা কতক্ষণ ঘুমাবে একটু দেখে নেওয়া যাক-
৪০-৩ মাস বয়সের বাচ্চা : ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা।
৪৪ থেকে ১১ মাসের বাচ্চা : ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা।
৪১ থেকে ২ বছর : ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা।
৪৩ থেকে ৫ বছর : ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা।
৪৬ থেকে ১৩ বছর : ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা।
৪১৪ থেকে ১৭ বছর : ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা।
আপনি এখন বয়স অনুযায়ী দেখে নিন আপনার বাচ্চা পর্যাপ্ত সময় ঘুমাচ্ছে কিনা।
অনেক অভিভাবক প্রায়শই অভিযোগ করেন তার বাচ্চা অনেক রাত অবধি জেগে থাকে। ঘুমাতে চায় না। ওদিকে আবার সকালে দেরিতে ওঠে।
এটা বাচ্চার না যতটুকু ত্রুটি তার চেয়ে বেশি দোষ অভিভাবকদের। আমরা অনেকেই জানি না শিশুর শান্তির ঘুমের জন্য কী কী আয়োজন লাগে।
শিশুর নিরবচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য কী করা উচিত-
▶ একটা সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন বাচ্চার ঘুমের জন্য। কখনো রাত ১০টায় ঘুমাবে কখনো রাত ১টায় এ রকম হবে না।
▶ যেদিন স্কুলে যাবে সেদিন যে সময় বাচ্চা ঘুমাবে, যেদিন স্কুলে যাবে না সেদিনও একই সময় বাচ্চা বিছানায় ঘুমাতে যাবে। একই সময় ঘুম থেকে উঠবে। ব্যাপারটা এমন হওয়া যাবে না যে, আজ বৃহস্পতিবার রাত, আগামীকাল শুক্রবার। তাই বাচ্চা অনেক রাত অবধি জেগে থাকবে এবং অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠবে-এ রকম করা সম্পূর্ণ অনুচিত। সপ্তাহের অন্যান্য দিন বাচ্চা যখন ঘুমাতে যায়-জেগে ওঠে, স্কুল বন্ধের দিনেও একই সময়ে ঘুমাতে যাবে, জাগবে।
▶ বাচ্চা ঘুমাতে যাওয়ার আগের ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে থেকে বাচ্চার অনেক শক্তি খরচ হয় কিংবা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এমন কাজ করা যাবে না। ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগেই সব ধরনের খেলাধুলা, লম্ফঝম্প, টিভি দেখা, মোবাইল দেখা বন্ধ থাকা লাগবে। অনেক অভিভাবকই বাচ্চাকে পাশে রেখে মোবাইল চালাতে থাকি। এটা পরিত্যাগ করা উচিত।
▶ পেটে ক্ষুধা থাকা অবস্থায় বাচ্চাকে ঘুমে পাঠানো যাবে না। ঘুমানোর আধা ঘণ্টা আগে দুধ কিংবা হালকা ছোট্ট একটা বিস্কিট খাইয়ে বাচ্চাকে ঘুমাতে পাঠানো যেতে পারে। ওইদিকে আবার অনেক ভারী খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে ঘুমাতে পাঠালে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাচ্চার নির্বিঘ্ন ঘুম না হবার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
▶ ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার বাচ্চার ঘুমে সমস্যা করতে পারে। ঘুমানোর আগে বাচ্চাকে চকোলেট, কফি, চা ইত্যাদি খাওয়ানো যাবে না।
▶ বাচ্চাদের পর্যাপ্ত খেলাধুলার জায়গা নেই। একটা বাচ্চার সুন্দর ঘুমের জন্য প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন খেলাধুলা করা উচিত।
▶ বাচ্চার ঘুমের রুমটা হতে হবে নিশ্চুপ আর অন্ধকার। কোনো বাচ্চা যদি অন্ধকার ভয় পায় তার জন্য হালকা আলো দেওয়া যেতে পারে।
▶ বাচ্চার রুমে কোনো ধরনের টিভি/মোবাইল/ট্যাব ইত্যাদি রাখা যাবে না। যে রুমে ইলেকট্রনিক যন্ত্র চলবে সে রুমে বাচ্চার ঘুম ঠিকঠাক হবে না।
▶ রুমের তাপমাত্রা আরামদায়ক থাকা লাগবে। ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় বাচ্চার ঘুম ভালো হবে।
▶ ঘুমের রুমটা যাতে পরিবারের সবার সময় কাটানোর রুম কিংবা কাউকে শাসন করার রুম হিসাবে ব্যবহৃত না হয়। রাতেরবেলা বাচ্চার রুম টি শুধু ঘুমানোর জন্যই ব্যবহার করা লাগবে।
লেখক : শিশু বিশেষজ্ঞ, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।