
প্রিন্ট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম
পারকিনসন্স : নিজে জানুন ও অন্যকে জানান

ডা. শাহাদাত হোসাইন শিশির
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
এপ্রিল পারকিনসন্স রোগের সচেতনতার মাস। ডব্লিউএইচও-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মাঝে চারজন এ রোগে আক্রান্ত। যাদের বয়স বেশি তাদের এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে ও ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় অধিক আক্রান্ত হয়।
* কারণ
পারকিনসন্স রোগটি স্নায়ুর ক্ষয়জনিত রোগ, যেখানে ব্রেইনের নিউরনের একটি রাসায়নিক সংকেত যেমন ডোপামিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। এ ডোপামিন কমে যাওয়ার কারণে, স্নায়ুর স্বাভাবিক কাজগুলো অনিয়মিতভাবে সম্পন্ন হয় ও দেহের বিভিন্ন মাংসপেশির মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়, যা ধীর গতিতে বাড়তে থাকে, ফলে রোগী তার স্বাভাবিক জীবনের কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারেন না।
* ঝুঁকি
▶ বয়স : যাদের বয়স ৬০-এর অধিক তাদের এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
▶ লিঙ্গ : পুরুষেরা তুলনামূলকভাবে মেয়েদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।
▶ বংশগত : যাদের পূর্বপুরুষরা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
▶ কেমিক্যালস : কিছু কেমিক্যাল যেমন কীটনাশক ও ওষুধের কারণে, এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
▶ মাথায় আঘাত : যারা মাথায় বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হন তাদের এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
* উপসর্গ
▶ বিশ্রামের সময় মাথায় কিংবা হাতে মৃদু কম্পন অনুভব করা।
▶ পেশির অনমনীয়তা।
▶ ধীর গতিতে চলাফেরা।
▶ হাঁটার সময় ভারসাম্য রক্ষায় অপারদর্শীতা।
▶ বিষাদগ্রস্ত।
▶ ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি এবং চোখের পাতায় কম কম্পন।
▶ বিভ্রান্তি এবং স্মৃতিশক্তির বিলোপ।
▶ দুর্বলতা, নিদ্রাহীনতা।
* রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
যদি কোনো ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজ সম্পাদনের সময় ওপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে অবশ্যই একজন স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক তার লক্ষণ বিশ্লেষণ করে ও দৈহিক কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করে থাকেন।
* চিকিৎসা পদ্ধতি
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সারা জীবন কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। যেহেতু রোগীকে সারা জীবন ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সেজন্য রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ওষুধ ছাড়াও ডিপ ব্রেন স্টিম্যুলেশন নামক একটি পদ্ধতি রয়েছে, যেখানে একটি ক্ষুদ্র ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের ভেতরে স্থাপন করা হয়। আর রোগীর বুকে একটি পেসমেকার স্থাপন করা হয় । পেসমেকারটির সাহায্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় বৈদ্যুতিক স্পন্দন মস্তিষ্কে পাঠান হয়, ফলে রোগীর শরীরের কাঁপুনি এবং জড়তা দূর করা যায়। তবে এ পদ্ধতিটি কঠিন এবং ব্যয়বহুল। এ পদ্ধতি এখন আমাদের দেশে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এ রোগের স্থায়ী কোনো প্রতিরোধের ব্যবস্থা এখনো জানা নেই, তবে এ রোগের ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগী দ্রুত তার স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
লেখক : স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সসেস অ্যান্ড হসপিটাল।