
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম
ঈদপরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা ও সমাধান

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার পরে উদযাপিত হলো ঈদ। এর সঙ্গে রমজান মাসকে বিদায় আর শাওয়াল মাসকে স্বাগত জানিয়ে ঈদ উদযাপিত হলো নানা আয়োজনের মাধ্যমে। খাওয়া-দাওয়া, ব্যস্ততা, বেড়ানো এবং হরেক রকমের উপভোগ-এ সবেই শেষ হলো ঈদ আনন্দ। এখন সময় এসেছে আবার নতুন করে স্বাভাবিক অভ্যাস আর আগের জীবনযাত্রার রীতিনীতিতে ফিরে যাওয়ার। অনেক সময় স্বাস্থ্যের কথা মাথায় না রেখে মুখরোচক খাবারের দিকেই বেশি ঝুঁকে যাই আমরা। এটিই বয়ে আনতে পারে নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
* খাবার নিয়ে সতর্কতা
ঈদের দিনের অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ভূরিভোজ শরীরকে অনেক সময়ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। কারণ ঈদের সময় খাওয়া-দাওয়া একটু বেশিই হয়ে যায়। আমাদের একটু নজর দেওয়া দরকার আমরা কী খাচ্ছি, কতটুকু খাচ্ছি, বিভিন্ন খাবারের প্রতিক্রিয়া শরীরের ওপর কী তার ওপর। মূল সমস্যাটা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণ। মনে রাখা উচিত, রমজান মাসে শরীর দীর্ঘ সময়ের জন্য উপোস অবস্থায় থাকে এবং নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পরিপাকতন্ত্রের জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে। এক মাসের পরিমিত খাবারের নিয়ম ভেঙে হঠাৎ করে মুখরোচক এবং রিচ-ফুড খাওয়ার ফলে বদহজম, গ্যাস, পেট খারাপ, ওজন বৃদ্ধি, ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির মতো সমস্যার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
* অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
প্রায় ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত খাবারের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ আগের তুলনায় হয়তো বেড়ে যায়, এটাই স্বাভাবিক। ঈদের খাবারকে মুখরোচক করতে গিয়ে নানা রকম ঘি ও মসলা ব্যবহার করা হয়। এতে খাবারে কোলেস্টেরলের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বেশ কিছু অসুস্থতার যোগসূত্র রয়েছে, যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক ইত্যাদি। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে আনুপাতিক হারে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ সময়টায় খাবার ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের ফলে উচ্চরক্তচাপ ও হার্টের রোগীদের সমস্যা বা জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। উচ্চরক্তচাপ ও হার্টের রোগীদের জটিলতা প্রশমনে এ সময় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি, রমজানপরবর্তী সময়ে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় রাখাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
* শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারে। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে এ ব্যায়াম। যারা নিয়মিত হাঁটতেন, ব্যায়াম করতেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন, কিন্তু ঈদে তা বজায় রাখতে পারেননি, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার পুরোনো অভ্যাসে ফিরে যেতে শুরু করুন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধীরে ধীরে ব্যায়াম শুরু করা উচিত। হাঁটতে, ব্যায়াম করতে যদি কোনো অসুবিধা অনুভূত হয় যেমন-সহজে হাঁপিয়ে যাওয়া বা বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
* শিশুদের দিকে লক্ষ রাখুন
যারা গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেছেন, তারা শিশুদের কখোনোই একা ছাড়বেন না। পুকুর বা জলাধারের কাছে যেতে দেবেন না। যাঁরা ঈদে সমুদ্র বা পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছেন, তারাও বিশেষ করে নজর রাখুন যেন শিশু কোনো দুর্ঘটনায় না পড়ে। শিশুদের সহজপাচ্য খাবার খেতে দিন, খাবার নিয়ে জোরাজুরি করবেন না। যথেষ্ট পানি পান করছে কি না আর যথেষ্ট প্রস্রাব হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* বয়স্কদের দিকে লক্ষ করুন
বয়স্কদের অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনি রোগে ভুগছেন। তাই তাদের উপযোগী কিছু খাবার আলাদা করে প্রস্তুত করা উচিত। উৎসব উপলক্ষে একদিন নিয়মের বাইরে খেলে কিছু হবে না ভেবে যদি খেতেও চান, তবে পরিমিত খাবার দিন। হুল্লোড়-ব্যস্ততায় ওষুধপত্র ঠিকমতো খাচ্ছেন কি না, লক্ষ রাখুন।
রমজানপরবর্তী খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেও আত্মনিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা, সংযম এবং ভারসাম্যের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হওয়া উচিত, যা রোজার মাসের একটি মৌলিক শিক্ষা। ঈদের পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চেকআপ করিয়ে নিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারকে নিয়ে সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক