
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম

ডা. আ স ম তানিম আনোয়ার
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘End Stage Renal Disease’ বা অন্তিম স্তরের কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় নিয়মিত বা দীর্ঘমেয়াদি ডায়ালাইসিসের চেয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াই শ্রেয়। বিশ্বব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের (CKD) প্রাদুর্ভাব শতকরা প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ। এশিয়া মহাদেশে স্বল্পমেয়াদি কিডনি রোগের বিস্তার ও প্রাদুর্ভাব নিয়ে তেমন কোনো গবেষণামূলক পরিসংখ্যান নেই। প্রকাশিত গবেষণায় এ বিস্তার শতকরা ৯ থেকে ১৭ শতাংশ। উন্নত ও অনুন্নত জনগোষ্ঠীর ওপর গবেষণায় প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায় ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ, যার মধ্যে শতকরা ১১ শতাংশ ইতোমধ্যে তৃতীয় স্তরের (3rd stage CKD) দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ বা তদূর্ধ্ব।
বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। যার মধ্যে ৮ লাখ রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তার মধ্যে মাত্র ৩০,০০০ হাজার রোগী ডায়ালাইসিস নিতে পারেন।
কিডনি প্রতিস্থাপনের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫০০০ হলেও, শুধু ১২০ জনের মতো রোগী পারেন তাদের জীবিত আত্মীয়দের দান করা কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে। জীবিত মানুষ থেকে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গের এ ব্যাপক স্বল্পতা দিন দিন আরও প্রকটতর হচ্ছে। তাই মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য কার্যকর প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা আরও জোরদার হচ্ছে।
এশিয়া মহাদেশে মোট কিডনি প্রতিস্থাপনের শতকরা ১০ ভাগই হয় মরণোত্তর। ভারতে প্রতি বছর ২৫০০ থেকে ৩০০০টি কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়। যার মাত্র ২ শতাংশ আসে মরণোত্তর দান থেকে।
কোরিয়ায় এ হার শতকরা ৫ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যে এ হার অত্যন্ত সন্তোষজনক, যা সর্বমোট কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রায় ১৫ শতাংশ। বাংলাদেশে এ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সংবলিত আইনপ্রণয়ন ও সংশোধন সম্পন্ন করেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ইতোমধ্যে এনেস্থেশিয়া বিভাগ, ইউরোলজি বিভাগ ও কিডনি রোগ বিভাগের যৌথ সমন্বয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ হাসপাতালগুলো ব্রেইন ডেড কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ব্রেইন ডেড ঘোষণা করবেন।
মনে রাখা প্রয়োজন সফল মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পথে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় ফতোয়া প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার ভেঙে বাংলাদেশে এ উদ্যোগকে সফল করার জন্য গণমানুষের মধ্যে মরণোত্তর কিডনি প্রদানের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণ অসংখ্য মুমূর্ষু কিডনি রোগীদের সামনে সূচনা হতে পারে নতুন আশার আলোর, উন্মোচিত হতে পারে নব দিগন্তের।
লেখক : কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল।