
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪০ এএম
ঈদে চাই মানসিক শান্তি

ডা. তাহমীদ কামাল
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
ঈদ শুধু বাহ্যিক আনন্দের উৎসব নয়, এটি আত্মিক প্রশান্তির সময়ও। নিজের হতাশা, দুঃখ ও কষ্ট আল্লাহর কাছে তুলে ধরা এবং ধৈর্য ধারণ করা মানসিক প্রশান্তি আনতে পারে। ইসলামে ধৈর্য ও আত্মশুদ্ধির ওপর অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন- ‘হে যারা বিশ্বাস করো, তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং একে অপরকে ধৈর্য প্রদর্শনে সাহায্য করো এবং আল্লাহর জন্য ভয় রাখো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (আল ইমরান, ৩:২০০)
ঈদের সময়ও যখন হতাশা বা একাকিত্ব অনুভূত হয়, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করা এবং আত্মিক শান্তি খোঁজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
* মানসিক শান্তির জন্য দোয়া
ঈদের দিনে বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও তাঁর রহমত চাওয়া একান্তভাবে মনকে শান্তি প্রদান করে। এক হাদিসে বলা হয়েছে- ‘তোমরা যদি দোয়া করতে থাকো, তবে তোমরা আল্লাহর রহমতের আশায় থাকো।’(সুনান আত-তিরমিজি, ৩৫১৪)। এটি ঈদ উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে আমরা শুধু আনন্দের জন্য নয়, বরং আল্লাহর কাছে শান্তি ও ত্রাণের জন্য দোয়া করি।
* প্রেম ও সহানুভূতির গুরুত্ব
ঈদ শুধু নিজের জন্য আনন্দের সময় নয়, বরং অন্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করারও একটি সময়। ঈদের দিন দান-সদকা ও দরিদ্রদের সহায়তা করা মানসিক শান্তির জন্যও সহায়ক। ইসলামে অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে আত্মিক শান্তি এবং পরিত্রাণের কথা বলা হয়েছে।
* পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানো
যারা একাকিত্ব অনুভব করছেন, তারা চাইলেই ঈদের দিন অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির সাহায্যে ভিডিও কল, সোশ্যাল মিডিয়া বা মেসেজের মাধ্যমে দূরের প্রিয়জনদের সঙ্গে সংযোগ রাখা সম্ভব।
হাদিসে এসেছে: ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ সে, যে তার পরিবার সদস্যদের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো আচরণ করে।’ (সুনান আত-তিরমিজি, ৩২৮৭)। ঈদের দিনে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানোর মাধ্যমে একাকিত্ব কমানো যেতে পারে এবং ঈদের প্রকৃত আনন্দ অনুভব করা যায়।
* অন্যদের সাহায্য করা
ঈদ কেবল নিজের আনন্দ উপভোগের উৎসব নয়, বরং অন্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করারও দিন। আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের সহায়তা করা, আশপাশের হতদরিদ্রদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা এবং দান-সদকার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। অন্যকে সাহায্য করলে মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়।
* অপ্রয়োজনীয় তুলনা ও সামাজিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই ঈদের দিন নিজের আনন্দময় মুহূর্তগুলো শেয়ার করে। এটি দেখে অনেকের মধ্যে হীনমন্যতা তৈরি হতে পারে। মনে রাখতে হবে, সামাজিক মাধ্যমে উপস্থাপন বাস্তব জীবনের পুরো চিত্র নয়। তাই নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
* জাতীয় পর্যায়ে করণীয়
দেশের সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও সাধারণ নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঈদের আনন্দ সবাইকে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
* দরিদ্র ও বিপর্যস্তদের জন্য সহায়তা
সরকার ঈদের আগে দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ভর্তুকি দিতে পারে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় খাবার ও পোশাক কিনতে পারেন।
* রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা
ঈদের সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেষ্ট থাকতে হবে, যাতে ঈদের সময় কোনো সহিংসতা না ঘটে।
* প্রবাসীদের মানসিক সহায়তা প্রদান
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো যদি প্রবাসীদের জন্য ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ মিলনমেলার আয়োজন করে, তাহলে তারা কিছুটা হলেও একাকিত্ব দূর করতে পারবেন। ঈদ শুধু আনন্দের উৎসব নয়, এটি মানবতারও উৎসব। বর্তমান বৈশ্বিক ও জাতীয় সংকটের কারণে ঈদের প্রকৃত আনন্দ অনেকের কাছেই হারিয়ে যাচ্ছে। একাকিত্ব, মানসিক চাপ ও হতাশার শিকার হচ্ছেন অনেকে। আমাদের উচিত একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, ঈদের প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করা এবং ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্ব পালন করা। মানসিক শান্তি ও সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করাই প্রকৃত ঈদ উদযাপন। তাই আসুন, ঈদের দিন শুধু নিজের জন্য নয়, বরং চারপাশের মানুষের জন্যও আনন্দের উৎসব গড়ে তুলি।
লেখক : ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ।