রমজানে সুস্থতায় পুষ্টিকর খাবার

রমজান মাসে মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে, বদহজম, গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যা, বমি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়। এ মাসে ননকমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, লিভার, কিডনি রোগে আক্রান্তরাও অসুস্থতায় ভোগেন ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে। রোজার সময় শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে, তাই হাইড্রেশন বজায় রাখা জরুরি। একই সঙ্গে, হঠাৎ অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা বিপজ্জনক হতে পারে। আবার অতিরিক্ত পরিমানে মিষ্টি ফল, মিষ্টি শরবত গ্রহণের কারণে লিভারে ফ্রুক্টোজের মাত্রা বেড়ে ফ্যাটি লিভার হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। দীর্ঘ সময় রোজা রাখার ফলে আমাদের শরীরের বিপাকীয় কার্যকলাপ এ কিছু পরিবর্তন আসে, তাই রোজার সময় সুষম পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইফতার হওয়া উচিত হালকা, সহজপাচ্য এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ। দীর্ঘদিনের রোজার পর পাকস্থলী খুব সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, তাই ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া উচিত। এক গ্লাস পানি বা ডাবের পানি দিয়ে ইফতার শুরু করাই উত্তম। খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার ও মিনারেলস তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায় এবং হজমে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যকর পানিও হলো চিনি ছাড়া মৌসুমি ফলের শরবত বিশেষ করে বেল, তরমুজ, বাঙ্গি, লেবুর শরবত যা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক, এগুলোর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সতেজ রাখে। তোকমা-দুধের শরবত বা লাচ্ছি শরীরকে শীতল রাখে এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। ডাবের পানি প্রাকৃতিক স্যালাইন হিসাবে কাজ করে এবং শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে ও ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়ক। টকদই ও চিরার স্মুদি, এটি প্রোবায়োটিক হিসাবে কাজ করে, হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি সরবরাহ করে।
ইফতারিতে ছোলার সালাদ, নরম খিচুড়ি, দই চিড়া কলা, দুধসাগু ফল, ওটস-দুধ বা দই-ফলমিশ্রিত পরিজ, সবজি ও চিকেনমিশ্রিত নুড্লস বা পাস্তা, ডিম সবজিমিশ্রিত চিকেন সুপ, হালিম, এমনকি ভাত বা রুটির সঙ্গে সবজি চিকেন ডিম ডাল ইত্যাদি রাখতে পারেন। এসব খাবারের প্রতিটিতেই কার্বোহাইড্রেট প্রোটিন ফ্যাট পর্যাপ্ত ভিটামিন মিনারেলসের সমন্বয় থাকার কারণে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হবে এবং গ্যাসের সমস্যাও সহজেই এড়ানো যাবে।
রাতের খাবারও ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত যাতে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ বজায় থাকে। চিকেন, মাছ, ডিম বা ডাল, সিদ্ধ ছোলা, ভেজানো বাদাম ও দুধ বা দই প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস, যা শরীরকে দীর্ঘ সময় এনার্জি দেয়। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিন শরীরের ক্ষয়পূরণে সহায়ক এবং ত্বকের জন্যও উপকারী। একইসঙ্গে রাতের খাবারে মৌসুমি রঙিন শাকসবজি রাখুন যেমন শসা, টমেটো, লাউ, বিভিন্ন শাক ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন মিনারেলস ও ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়তা করে। ফাইবারযুক্ত খাবার হিসেবে লাল আটার রুটি, ওটস, শাকসবজি, ও বাদামজাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ হজম হতে সময় নেয়, ফলে রোজার সময় বেশি সময় ধরে শরীরকে কর্মক্ষম রাখে।
সেহরি দিনের দীর্ঘসময় শক্তি সরবরাহ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। তাই এতে থাকা উচিত কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট-যা ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ শরীরে এনার্জি বজায় রাখে, শরীরকে সক্রিয় রাখবে। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার শরীরের ক্ষয়পূরণ করে, পেশির গঠনে সাহায্য করে এবং দীর্ঘসময় পেট ভরিয়ে রাখে। ফল ও শাকসবজি পটাশিয়ামসহ প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট ও ফাইবার সরবরাহ করে, যা ডিহাইড্রেশন এড়াতে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সেহরিতে রাখতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সুষম খাবার। লাল চালের ভাত মাছ বা মুরগি বা ডাল, সাথে নরম সবজি যেগুলোতে পানির পরিমাণ বেশি যেমন লাউ পেঁপে জালি কুমড়া, শসা পটল ইত্যাদি জাতীয় সবজি রাখতে হবে। সেহরি অথবা ইফতারে মিক্সড ফ্রুট সালাদ রাখা যেতে পারে। খাদ্য তালিকায় ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত বয়স ওজন উচ্চতা ভেদে ৮ থেকে ১২ ক্লাস পানি অবশ্যই পান করা প্রয়োজন।
লেখক : পুষ্টিবিদ, বায়োজিন কসমোসিউটিকেলস।