ডায়াবেটিক রোগীরা কীভাবে রোজা রাখবেন

ডা. নাজমা আক্তার
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতি বছরের মতো বিশ্বব্যাপী এবারও মুসলিম ডায়াবেটিসের রোগীরা রমজান পালন করবেন। সুষ্ঠুভাবে ও সুস্থভাবে রমজান পালনের জন্য ডায়াবেটিসের রোগীদের নিতে হয় কিছু
পূর্বপ্রস্তুতি। যেমন-
▶ এবারের ডায়াবেটিসে রোজা পালনে তিনি শারীরিকভাবে সমর্থ আছেন কিনা।
▶ রোজায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা।
▶ রোজা পালনের সময়ে রক্তে সুগারের মাত্রা নির্ধারণ সময় সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা।
▶ রোজার সময়ে ডায়াবেটিস ও অন্য রোগের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এর নতুন নিয়মে পুনর্বিন্যাসে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ।
▶ রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে তার সম্পর্কে সম্মুখ জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান আছে কিনা। যেমন- হাইপোগ্লাইসেমিয়া, হাইপারগ্লাইসেমিয়া, ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস, পানিশূন্যতা ও থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা ইত্যাদি।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নিুলিখিত ধরনের রোগীরা রমজান মাসে বিশেষ ঝুঁকিতে থাকেন। যেমন-
▶ যাদের গত তিন মাসের মধ্যে অধিক সংখ্যক দিন হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
▶ যেসব রোগীদের বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রবণতা বেশি বা ইতিহাস রয়েছে।
▶ যাদের ডায়াবেটিস বরাবরই নিয়ন্ত্রিত নয়।
▶ যাদের গত তিন মাসের মধ্যে ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিসের ইতিহাস রয়েছে।
▶ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
▶ যে কোনো ধরনের সমসাময়িক জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
▶ যারা দৈনিক উচ্চমাত্রার কায়িক পরিশ্রম করে।
▶ যাদের গত তিন মাসের মধ্যে হাইপার অসমোলার-হাইপারগ্লাইসেমিক কমার ইতিহাস রয়েছে।
▶ গর্ভকালীন মায়েরা।
▶ জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত বা ডায়ালাইসিস চলছে, এমন রোগীরা ইত্যাদি।
* চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও করণীয়
রমজানের সময় ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক বড় পরিবর্তন আসে, যেমন-
▶ খাদ্য গ্রহণের সময়ের পরিবর্তন।
▶ ওষুধ গ্রহণের সময়ের পরিবর্তন।
▶ ব্যায়াম বা দৈনন্দিন হাঁটার সময়ের পরিবর্তন।
▶ খাদ্য তালিকার পরিবর্তন।
▶ রক্তের সুগার চেক করার সময়ের পরিবর্তন।
▶ তারাবির নামাজ ও অন্য ইবাদতের সময় ইত্যাদি।
একজন চিকিৎসক, রমজান মাস শুরুর কমপক্ষে এক মাস আগে থেকেই একজন ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য একটি পূর্বপ্রস্তুতি প্ল্যান করে থাকেন। তা প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে। এটা নির্ভর করে রোগীর ডায়াবেটিসের ইতিহাস, ডায়াবেটিসের জটিলতার ইতিহাস, বয়স, ওষুধের প্রকারভেদ, অন্য রোগের ইতিহাস, গত রমজানে ডায়াবেটিসের রোগীর রোজা পালনের সক্ষমতার ইতিহাস ইত্যাদির ওপর।
* রমজান মাসে রক্তের সুগার পর্যবেক্ষণ
একজন চিকিৎসক ডায়াবেটিসের রোগীর ওষুধের ধরন ও প্রকারভেদ অনুসারে তিনি কখন রক্তে সুগার চেক করবেন তার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে সাধারণত ইফতারের আগে, ইফতারের দুই ঘণ্টা পর, সেহরির আগে, সেহরির আবার দুই ঘণ্টা পর অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠে। মধ্যাহ্নে, মধ্য অপরাহ্নে এবং প্রয়োজনে অন্য যে কোনো সময়ে রক্তের সুগার চেক করা হয়ে থাকে।
* খাদ্যতালিকা পুনর্বিন্যাস
রমজান মাসেও ডায়াবেটিসের রোগীকে ক্যালরি মেপে খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হবে।
▶ অধিক শর্করা বা চিনি জাতীয় খাদ্য পরিহার করুন, বিশেষ করে ইফতারে।
▶ অধিক ভাজাপোড়া বা মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। যেমন- পাকোরা, সমুচা, চিকেনফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি।
▶ সেহরিতে অবশ্যই সুষম খাবার গ্রহণ করবেন।
▶ খাবারের তালিকায় সবজি বা সালাদ রাখতে পারেন।
▶ ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
* রোজায় ব্যায়াম
রোজার সময়ে দৈনন্দিন কাজের বাইরে অন্য শারীরিক ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। তবে যদি প্রয়োজন পড়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইফতারের পর বা সান্ধ্যকালীন সময়ে সীমিতভাবে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা যেতে পারে।
* ওষুধের পুনর্বিন্যাস
চিকিৎসক তার রোগীর ধরন, বয়স, ওষুধের প্রকারভেদে রমজান মাসের ওষুধের পুনর্বিন্যাস করে থাকে। তাই প্রতিটি ডায়াবেটিসের রোগীরই উচিত রমজান শুরুর আগেই তার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
* জানতে হবে কখন রোজা ভাঙতে হবে
প্রত্যেক ডায়াবেটিসের রোগীরই জানতে হবে কোন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে তার রোজা ভেঙে ফেলতে হতে পারে। রোজা চলাকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে (রক্তে সুগার ৩.৩ মিলিমোলের বাইরে চলে গেলে) অথবা সকালের দিকে রক্তের সুগার ৩.৯ মিলিমোলের নিচে নেমে গেলে। বিশেষ করে যারা ইনসুলিন বা সালফোনাইল ইউরিয়ার গ্রুপের ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। আবার কারও যদি রক্তে সুগারের মাত্রা ১৬.৭ মিলিমোলের ওপরে চলে যায় তাদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা।