শিশুদের কান ব্যথার চিকিৎসা
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঠান্ডা লেগে শিশুদের কান ব্যথা হতে পারে। আবার কান পেকেও ব্যথা হতে পারে। সাধারণত ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে কানের ইনফেকশন সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। তিন বছরের কম বয়সি শতকরা ৩০ ভাগ শিশু কোনো না কোনো কারণে কানের ব্যথায় ভুগে থাকে।
* কারণ
▶ ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি-কাশি থেকে নাক এবং কানের সংযোগটিউব ব্লক থেকে কানের পর্দার ভেতরের দিকে তরল পদার্থ জমা হয়ে পর্দা ফুলে উঠে ব্যথার সৃষ্টি করে।
▶ কানের ভেতর/এক্সটারনাল ইয়ার ক্যানেলে ওয়াক্স বা ময়লা দ্বারা বন্ধ হলে গেলে।
▶ কানের পর্দার বাইরে এয়ার ক্যানেলে সংক্রমণ হলে ব্যথা হয়।
▶ কানের ভেতরে ফোঁড়া বা লোমের গোড়ায় ইনফেকশন হলে কানে প্রচুর ব্যথা হয়।
▶ কানের ভেতরে বহিঃকর্ণ বা পর্দা কাঠি বা কটনবার্ড দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলে।
* কীভাবে বুঝবেন
▶ কানে ব্যথা হলে শিশু চিৎকার করে কাঁদবে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং অস্থিরতা বাড়বে।
▶ শিশু নিজে নিজের কান ধরবে এবং টানাটানি করবে। কিছু খাবে না, খাবারের রুচি কমে যাবে।
▶ রাতে ব্যথার জন্য ঘুমাবে না, কান্নাকাটি করবে।
▶ কাশি ও নাক দিয়ে পানি ঝরতে পারে।
▶ যারা হাঁটতে পারে কানে ব্যথার জন্য তাদের চলাচলে ভারসাম্য বিঘ্ন হয়ে যেতে পারে।
* চিকিৎসা
কান ব্যথায় শিশু অস্থির হলে, ঘাড় শক্ত হলে, ক্লান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে তৎক্ষণাৎ জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
▶ জ্বর ও ব্যথার জন্য বেদনানাশক ওষুধ যেমন-প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
▶ ইনফেকশন থাকলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে, কানের ভেতর শুকনো রাখতে হবে এবং কানে পানি যেন না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
▶ ব্যথাসহ যদি কান দিয়ে পুঁজ বা রক্ত মিশ্রিত পানি পড়ে তবে কানের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
▶ ওয়াক্স বা ময়লা থাকলে অলিভ অয়েল দিয়ে ময়লা নরম করে নাক-কান-গলার চিকিৎসক দিয়ে পরিষ্কার করাতে হবে।
▶ অনেক সময় নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা নাকের ড্রপ দিয়ে থাকেন কানে ব্যথার চিকিৎসায়, সেক্ষেত্রে বিভ্রান্ত না হয়ে প্রয়োজনে এর কারণ জেনে নেবেন।
▶ দাঁতের কোনো সমস্যার জন্য কানে ব্যথা হলে দন্ত বিশেষজ্ঞ দেখাবেন।
* যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে কী জটিলতা হবে
▶ সংক্রমণ বা ইনফেকশন অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে।
▶ এয়ারড্রাম (কানের পর্দা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
▶ বাচ্চা কানে শুনবে না।
▶ কানের পেছনে মাথার হাড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে ম্যাস্টোডাইটিস হতে পারে।
▶ মেনিনজাইটিস বা ব্রেনের পর্দায় সংক্রমণ হতে পারে।
▶ শিশুর বাকশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
▶ কানে ঘনঘন বিশ্রী গন্ধযুক্ত পুঁজ হতে পারে। কানের বিশ্রী গন্ধযুক্ত ঘনঘন পুঁজ পড়া থেকে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা মুখমণ্ডলের পক্ষাঘাত হয়ে মুখ বেঁকে যেতে পারে।
* কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
▶ কানের ভেতরে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা যাবে না।
▶ জন্মের পর প্রথম এক বছর ঠান্ডা লাগা থেকে বিরত রাখতে হবে।
▶ যেসব শিশু ফিডারে দুধ খায় তাদের মাথা উঁচু করে দুধ খাওয়াতে হবে। ঘুমন্ত ও শুয়ে থাকা অবস্থায় কখনোই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না।
▶ শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
▶ শিশুর সামনে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
▶ শিশুকে বুকের দুধ সঠিক নিয়মে বসিয়ে খাওয়াতে হবে।
▶ এডিনয়েডের বা নাকের পেছনের এক ধরনের গ্লান্ড বড় হলে নাকের সঙ্গে কানের সংযোগকারী টিউব ব্লক হয়ে কানের সংক্রমণ হতে পারে। তাই এরকম সমস্যায় মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে বা বাচ্চা হাঁ করে ঘুমালে নাক-কান-গলার চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করাতে হবে।
* ব্যথা-নিরাময়ের ওষুধ
বাজারে আইবুপ্রোফেনের মতো প্রচুর ওভার-দ্য কাউন্টার, ব্যথা-উপশমের ওষুধ পাওয়া যায়। ব্যথা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এ জাতীয় ব্যথা-নিরাময়কারী ওষুধ দেওয়া যায়। তবে নির্ধারিত ডোজটির বেশি খাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের ওষুধ সেবন করা মোটেও উচিৎ নয়।
লেখক : নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।