Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

রক্তস্বল্পতায় কী খাবেন

Icon

আখতারুন নাহার আলো

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রক্তস্বল্পতায় কী খাবেন

পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩.৫ গ্রাম এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১.৫ গ্রাম প্রতি ডেসিলিটারের কম লোহিত কণিকা থাকলে, সেটা রক্তস্বল্পতা হিসাবে ধরা হয়। রক্ত উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন কিছু যৌগের। যেমন-লৌহ, ভিটামিন বি১২, ও সি, ফলিক অ্যাসিড। মূলত এগুলোর সাহায্যেই রক্ত উৎপাদন হয়।

▶ লৌহের ঘাটতি : খাবারের মাধ্যমে কম লৌহ দেহে প্রবেশ করলে লৌহজনিত অভাব হতে পারে। আবার মহিলাদের অতিরিক্ত মাসিক বা ঋতুস্রাব, পাইলস, দুর্ঘটনাজনিত আঘাত, অপারেশনের কারণে রক্তপাত অথবা অন্য যে কোনো কারণে অধিক রক্তপাত হলে, লৌহের ঘাটতি হতে পারে। এ ছাড়া পাকস্থলীর ক্যানসারের কারণে মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যাদের কৃমি আছে তাদেরও রক্তস্বল্পতায় ভুগতে দেখা যায়। আবার শরীরে হয়তো পর্যাপ্ত লৌহ আছে, কিন্তু ভিটামিন বি১২-এর অভাব রয়েছে; তাহলেও রক্তস্বল্পতা হতে পারে। শুধু ফলিক অ্যাসিডের অভাবেও এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা হতে পারে।

▶ ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি : যারা নিরামিষভোজী তাদের দেহে ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি হয়ে থাকে। কারণ, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি প্রথম শ্রেণির আমিষের মধ্যে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। দুধে অল্প পরিমাণে বি টুয়েলভ ভিটামিন আছে। যারা নিয়মিত অ্যান্টাসিড খান তাদের ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দেখা যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের জন্য যারা মেটফরমিন খান এবং যাদের পাকস্থলীতে বড় কোনো অপারেশন হয়েছে তাদেরও এর অভাব হয়। অন্ত্রে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলেও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দেখা যায়।

▶ ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি : ফলিক অ্যাসিডের অভাব হয় সুষম খাবার না খেলে। এর উৎস হলো সবুজশাক সবজি। কিছু কিছু অ্যান্টিবায়েটিকের ডোজ বেশি হলে, আর্থ্রাইটিসের ওষুধ খেলে ফলিক অ্যাসিড কমে যেতে পারে। এ ছাড়া অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া জন্মালে অপারেশনের পর এবং অধিকমাত্রায় অ্যালকোহল সেবনেও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি দেখা যায়।

▶ অন্য কারণ : রক্ত উৎপাদনের যৌগগুলোর অভাব ছাড়াও রক্তস্বল্পতা অন্যান্য আরও কারণে হতে পারে। যেমন-হাড়ের মজ্জায় (বোন ম্যারো) সমস্যা থাকলে রক্ত উৎপাদন কম হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমের ফলেও এনিমিয়া হতে পারে। কোনো কারণে রক্তকণিকা ভেঙে গেলে হিমোলাইটিক এনিমিয়া হতে পারে। এর কারণে দুর্বলতা, মাথাঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, খিদে না লাগা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয় আবার লৌহের অভাবে রক্তস্বল্পতা হলে হাত-পা চুলকায়, নখ ও চোখের নিচে সাদাটে ভাব দেখা যায়।

ভিটামিন বি১২-এর অভাবে রক্তস্বল্পতা হলে হাত-পা ঝিম্ ঝিম্ করে। অনেক সময় মানুষ মাথা ঘুরে পড়ে যায়। রক্ত উৎপাদন ছাড়াও বি১২ স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে হলে খেতে হবে সুষম খাবার। এজন্য খেতে হবে-মাছ, মুরগি ও গরুর মাংস, কলিজা, ডিম, লালশাক, ডাঁটাশাক, লেটুস পাতা, কচুশাক, ধনিয়াপাতা, পুদিনাপাতা, কাঁচা হলুদ, বিট। খেজুর, চালতা, কলার মোচা, সবুজ শাকসবজি, সবই খাবারে রাখতে হবে। টকদইও খুব উপকারী। নিরামিষভোজীদের ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি হলে তাদের সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে। এদিকে ভিটামিন সি লৌহ শোষণে সাহায্য করে বলে খাবারে রাখতে হবে লেবু জাতীয় সবজি ও ফল যেমন-কাঁচামরিচ, ধনিয়াপাতা, পেয়ারা, আমলকী, স্ট্রবেরি, বেলপেপার ইত্যাদি। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে লৌহ রয়েছে। কুচো চিংড়ি, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ খেলেও ভালো হয়। রাজমা, বীজ, সব ধরনের ডাল খেলেও ভালো। বিট রক্তের লৌহিত কণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে। মধু লৌহ শোষণে বেশ কার্যকর। সুতরাং রক্তস্বল্পতা রোধ করতে হলে প্রতিদিনের খাবারে থাকতে হবে লৌহ, আমিষ, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন সি ও ফলিক অ্যাসিড।

লেখক : সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম