উন্নত জীবনযাপন, খাদ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, ব্যবসা ইত্যাদির জন্য মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। এ অভিবাসন প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। অনেক সময় প্রস্তুতির অভাব, নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা, স্থানীয় ব্যবস্থাপনার জটিলতা, ভাষাগত অসুবিধা, সাংস্কৃতিক বৈষম্য এবং প্রতিকূল পরিবেশ, ইত্যাদি অভিবাসীদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পক্ষান্তরে, অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, দীর্ঘসময়ের জন্য স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে বসবাস করা (৩ বছর), ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগদান করা এবং সম্প্রদায়ের সদস্য যারা ইতিমধ্যেই গন্তব্যস্থলে রয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা এবং কম সাংস্কৃতিক বিধিনিষেধের অধীন হওয়ার মতো উন্নত জনসেবা পাওয়া।

মাইগ্রেশন সাইকিয়াট্রি হলো, মনোচিকিৎসা বিষয়ক একটি নতুন ডিসিপ্লিন। যা মানসিক রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং অভিবাসী ব্যক্তিদের সুস্থতার ওপর, অভিবাসনের প্রভাব বোঝার জন্য মনোচিকিৎসা এবং মনোবিজ্ঞানসহ মানবিক, কলা, বিজ্ঞান এবং মেডিসিনের পেশাদারদের একত্রিত করে। উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীরা অনেক ব্যতিক্রমধর্মী চাপ এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অংশের গবেষণা প্রকাশ করে যে, অভিবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া; যা জনগণের বিভিন্ন সমস্যাকে প্রভাবিত করে।

অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে অভিবাসীদের ওপর নির্দিষ্ট চাপ রয়েছে-

▶ নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণা অর্থাৎ ব্যক্তি যে অভিবাসন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায় তার প্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।

▶ ভাষা এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে যোগাযোগের অসুবিধা।

▶ অভিবাসনের আগে, সময় এবং পরে প্রতিকূল অভিজ্ঞতা।

▶ ঐতিহ্যগত বিশ্বাস, মোকাবিলার ধরন, পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

▶ অ-অনুকূল পারিবারিক গতিশীলতা অভিবাসীদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।

এ অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতার জন্য মানুষ প্রস্তুত নাও থাকতে পারে। তাই, বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)-এর মতো সাধারণ মানসিক ব্যাধিগুলোর প্রবণতা তাই অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের মধ্যে বেশি থাকে।

উদ্বাস্তু এবং অভিবাসী গোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য যেসব মূল বিষয় রূপায়িত হয়েছে সেগুলো হলো-

▶ কোনো একটি সম্প্রদায়ের অংশ হওয়া এবং স্কুলে যাওয়া মানসিক ব্যাধিগুলোর নিম্ন হারের সঙ্গে যুক্ত।

▶ একটি অনিরাপদ আইনি অবস্থা খারাপ মানসিক স্বাস্থ্যে অবদান রাখতে পারে।

▶ বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের অভিজ্ঞতা প্রতিকূল মানসিক স্বাস্থ্যের ফলাফলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত।

▶ উদ্বাস্তু এবং অভিবাসীরা প্রায়ই তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেয় না কারণ, তারা বিনামূল্যে প্রাপ্ত পরিষেবাগুলো সম্পর্কে সচেতন নয়।

▶ ভাষাজনিত প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ না করা।

অভিবাসীরা যখন মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণা এবং তা থেকে উত্তরণে সাহায্য প্রত্যাশী হয়, তখন মনোচিকিৎসকদের এ সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা এবং তা থেকে অভিবাসীদের উত্তরণের জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। ‘Migration is a process, not a problem’ অভিবাসীরা বিষয়টিকে এভাবে দেখতে পারেন।

লেখক : সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এডিকশন সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।