Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

স্ট্রেস বাড়লে সুগার বাড়ে হতে পারে ডায়াবেটিস

Icon

ডা. চৌধুরী সাইফুল আলম বেগ

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্ট্রেস বাড়লে সুগার বাড়ে হতে পারে ডায়াবেটিস

স্ট্রেস বাড়লে রহস্যময় কারণে সুগার কমতে চায় না। এমনকী যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে। আবার যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং নিয়ন্ত্রণে আছে, তাদেরও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিসের ওপর খুব ভালো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাদের শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। স্ট্রেস কমাতে না পারলে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্য শারীরিক সমস্যাও মাথাচাড়া দিতে পারে। উদাহরণ হিসাবে কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশার, ফ্যাটি লিভারের মতো নন কমিউনিকেবল ডিজিজ যেমন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনই দেখা দিতে পারে মহিলাদের মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ’সহ বন্ধ্যাত্ব। এতে ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও বাড়ে। স্ট্রেস বাড়ায় স্থূলত্বও। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, একটি নন কমিউনিকেবল ডিজিজ শরীরে বাসা বাঁধলে তখন অন্য অসুখকেও ডেকে নিয়ে আসে।

* স্ট্রেস শরীরের ভেতরে কীভাবে প্রভাব ফেলে

স্ট্রেস মানে একদিনের স্ট্রেসের কথা বলা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে ক্রনিক স্ট্রেস নিয়ে। ক্রনিক স্ট্রেস আসতে পারে অফিসের ঝামেলা, নিদ্রাহীনতা, ব্যবসায় মন্দা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ক্রনিক অসুস্থতা থেকে। দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রেসয়ে ভুগলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এমনই একটি হরমোন হলো কর্টিসল। এ হরমোন হলো স্টেরয়েড হরমোন । স্টেরয়েড হরমোন বাড়লে অন্য নন কমিউনিকেবল ডিজিজের বৃদ্ধি ঘটার আশঙ্কা থাকে। শরীরে কর্টিসল হরমোনের বৃদ্ধি ঘটলে তা কতগুলো রিসেপটরে গিয়ে আবদ্ধ হয়। এরপর শরীরের মলিকিউলার লেভেলে পরিবর্তন হয়। এর ফলে ব্রেন থেকে নানা নিউরোট্রান্সমিটার বের হয়, যা আমাদের খিদা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া ক্লান্তিবোধ হয় অনেক বেশি। রোজকার স্বাভাবিক কাজ যেমন-এক্সারসাইজ, বাজার করা, হাঁটাহাঁটির মতো কাজগুলো আর করতে ইচ্ছে করে না। কারও কারও ক্ষেত্রে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। এর ফলে স্ট্রেস আক্রান্ত ব্যক্তির ওজনও বাড়তে থাকে। তার সঙ্গে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণও অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোভিডের সময় বহু মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। ঘটেছিল আত্মীয় বিয়োগ। মনের ওপর পড়েছিল মারাত্মক চাপ। সে স্ট্রেসয়ে বহু লোকেরই ব্লাড সুগার বেড়ে গিয়েছিল।

* স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের উপায় কী

পাঁচটি সহজ উপায় সবার জানা থাকা দরকার-

▶ নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। করতে পারেন জগিং, আবার চাইলে জিমেও যেতে পারেন। যেভাবেই পারবেন ব্যায়াম করুন, স্ট্রেস কমবে। কারণ ব্যায়াম করলে আমাদের শরীরে এন্ডোর্ফিন নামে একটি হরমোন বের হয়। এ হরমোন, আমাদের মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে। দূরে রাখে স্ট্রেস।

▶ মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজের অভ্যাস গড়ে তুলুন। মাইন্ডফুলনেস এক্সারসাইজ আমাদের অতীত নিয়ে ভাবনা বা অজানা ভবিষ্যতের উৎকণ্ঠা ছেড়ে বর্তমান পরিস্থিতির দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে শেখায়।

▶ যিনি যে ধর্মের মানুষই হন না কেন, সব ধর্মেই প্রার্থনার রীতি থাকে। তাই রোজ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে প্রার্থনা করুন। মন শান্ত হবে।

▶ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন । বাবা-মা কিংবা স্ত্রী, সন্তানের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকুন। ওদের সঙ্গে সময় কাটান।

▶ পছন্দের শখের কাজ করুন। ইচ্ছে হলে ছবি আঁকুন, কবিতা আবৃতি করুন, বই পড়ুন, মুভি দেখুন, গান শুনুন, বাগান করুন, নদীর ধারে বসে থাকুন! দেখবেন খুব ভালো থাকছেন। স্ট্রেস দূরে থাকছে।

আরেকটা কথা, বহু ডায়াবেটিস রোগী আছেন যারা কড়া ডায়েটের চাপে স্ট্রেস আর অবসাদে ভোগেন। তাদের জন্য ছোট্ট পরামর্শ, সারা মাস নিয়মে চলে, একদিন একটা মিষ্টি, একটু বিরিয়ানি খেতেই পারেন। তাতে যদি স্ট্রেস এড়িয়ে বিষণ্নভাব কাটানো যায় ক্ষতি কী!!

লেখক : মেডিকেল এডুকেটর, জিপি এক্সামিনার, জিপি স্পেশালিস্ট. ওয়েরিংটন মেডিক্লিনিক, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম