ব্রণ বা একনি, ত্বকের পরিচিত একটি সমস্যা। ত্বকে চুলের ফলিকলে যখন তেল, মরা চামড়া, জীবাণুর সংক্রমণ হয়, তখনই ব্রণ হয়। ফলে অনেক সময় ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস, সিস্ট, নডিউল হতে পারে। ব্রণ সবচেয়ে বেশি হয় বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে। তবে যে কোন সময় হতে পারে। ব্রণ ছেলেমেয়ে উভয়েরই হতে পারে। তবে মহিলাদের বেশি দেখা যায়।
* কারণ
▶ অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ : সিবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপন্ন হয়ে থাকে। যা পোরসগুলোকে বন্ধ করে দেয়। তাই সঠিকভাবে ত্বকের পরিচর্যা করা উচিত।
▶ চুলের ফলিকল বন্ধ : মরা চামড়া একত্রিত হয়ে জমাট বেঁধে চুলের ফলিকল বন্ধ হয়ে যায়। তাই, নিয়মিত ত্বককে পরিষ্কার রাখতে হয়।
▶ জীবাণুর সংক্রমণ : প্রোপাইনিব্যাক্টেরিয়াম একনি পোরস বন্ধ করে ও প্রদাহ তৈরি করে। এ ব্যাকটেরিয়া ত্বকের গভীরে পৌঁছে এক ধরনের টক্সিন তৈরি করে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
▶ হরমোনের প্রভাব : বয়ঃসন্ধিকালীন, মাসিককালীন, গর্ভকালীন সময়ে ও বিভিন্ন ওষুধের জন্য হরমোনের তারতম্য হতে পারে। ফলে তৈলাক্ততা বেড়ে যায়।
▶ খাদ্যাভ্যাস : অতিরিক্ত মিষ্টি ও ডেইরি জাতীয় খাবারের ফলে অনেকের ব্রণের প্রবণতা বাড়ে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে, হজমে সমস্যা থাকলে, ব্রণ হয়।
▶ দুশ্চিন্তা : অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হরমোনের তারতম্য তৈরি করে। ফলে তৈলাক্ত গ্রন্থি থেকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম না হলেও ব্রণ হয়।
▶ বংশগত : অনেক সময় পরিবারে যদি আগে থেকেই ব্রণের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তা থেকেও ব্রণ হতে পারে।
▶ ওষুধ : কিছু কিছু ওষুধ রয়েছে যেমন-স্টেরয়েড বা বিভিন্ন জাতীয় ওষুধ অনেক সময় ব্রণ বাড়ায়।
* ব্রণের ধরন
▶ কমিডোনাল : ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস।
▶ ইনফ্লামেটরি : লাল ব্রণ ও পুঁজ।
▶ সিস্টিক : গর্ত ও ব্যথাযুক্ত, বড় বা নডিউল।
▶ কংগলোবাটা : দাগ যুক্ত বড় সিস্ট।
* চিকিৎসা পদ্ধতি
▶ টপিকাল : ত্বকে লাগানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন-এ, মৃদু অ্যাসিড ইত্যাদি রয়েছে।
▶ ওরাল : মুখে খাওয়ার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন জাতীয় ওষুধ ইত্যাদি রয়েছে।
▶ আধুনিক পদ্ধতি : কেমিক্যাল পিলিং, লেজার থেরাপি, লাইট থেরাপি।
ব্রণ যেহেতু খুবই পরিচিত একটি সমস্যা, তাই ব্রণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত। সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ব্রণ সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে আরও সময় লাগতে পারে।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, চর্ম ও যৌন বিভাগ, প্রবীণ হাসপাতাল, ঢাকা।