ওজন কমাতে সুষম খাবার
আখতারুন নাহার আলো
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অনেকে ওজন কমাতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে শুধু সালাদ ও ফলের রস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের খাবার দেহের মারাত্মক ক্ষতির সৃষ্টি করে। এ ধরনের খাবার বেশি দিন খাওয়াও যায় না। প্রতিটি মানুষেরই সুষম খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তবে ওজন কমাতে হলে সেটা হবে পরিমিত সুষম খাবার, থাকতে হবে খাবারে ছয়টি উপাদান। যেমন-শর্করা-চর্বি-আমিষ-ভিটামিন-খনিজ লবণ ও পানি।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সব ধরনের খাবারই থাকবে। তবে তা হবে সীমিত পরিমাণে। আগে থেকে বেশি খাওয়ার প্রবণতা থাকলে কম খাওয়ার ফলে ক্ষুধা লাগাটাই স্বাভাবিক। সেজন্য প্রধান খাবারের ফাঁকে যদি খিদে পায় তাহলে কম ক্যালোরির খাবার যেমন-সালাদ, সবজি স্যুপ, সবজি সিদ্ধ খাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানিতে ক্যালোরি নেই। ওজন কমানোর চেয়ে প্রথমেই প্রয়োজন ওজন যাতে আর না বাড়ে সেদিকে লক্ষ রাখা। অর্থাৎ ওজন বাড়ার গতিকে থামিয়ে দিতে হবে। তারপর ওজন কীভাবে কমবে ওদিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য প্রথম থেকেই সুষম খাবারের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় মনের অজান্তে খাওয়া হয়ে যায়। যেমন-চিপস, চানাচুর, শিঙাড়া, বাদাম ভাজা, নিমকি ইত্যাদি। এগুলো না খেয়ে খাওয়া যেতে পারে শসা, পেয়ারা, অল্প মুড়ি, চিনি ছাড়া খাবার খেতে পারেন। দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝে যদি ক্ষুধা লাগে তাহলে খেতে পারেন এক-দু চামচ টকদই, সামান্য লবণ-গোলমরিচ দিয়ে ঘোল তৈরি করে খেতে পারেন। এতে পেট ভরবে। কিন্তু, ওজন বাড়বে না। প্রধান খাবার খেতে বসতে কিছুটা সময় হাতে নিয়ে বসা উচিত। ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে খাবারের পরিমাণ কম লাগে। এছাড়া এতে মুখের ভেতরে যে এনজাইম তৈরি হয়, সেটা হজমের সহায়ক।
পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির মাসে এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুপুর ও রাতের খাবারের আগে সবজি স্যুপ খেলে ভালো হয়। এ স্যুপে থাকবে বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, গাজর, বিট, পেঁয়াজ পাতা, শসা, লেবুর রস ইত্যাদি। এগুলো থেকে খনিজ লবণ ও ভিটামিন পাওয়া যাবে। তবে ওজন বাড়বে না। ফলের রস বা স্ট্যু খাওয়ার চেয়ে গোটা ফল খাওয়া ভালো। এতে দেহে আঁশের ঘাটতি মিটবে।
রাতে দাওয়াত থাকলে দিনে উপবাস করে থাকা ঠিক নয়। এতে পাকস্থলী থেকে গ্যাসট্রিক জুস বেরিয়ে অ্যাসিডিটি হতে পারে। এছাড়া দাওয়াতের গুরুপাক ও ক্যালরি বহুল খাবারগুলো বেশি খাওয়া হয়ে যাবে। মানসিক চাপ নিয়ে তাড়াহুড়া করে গিলে খাওয়া এবং অসময়ে খাওয়া উচিত নয়।
যাদের ওজন বেশি তাদের মাসে একদিনের বেশি দাওয়াত না খাওয়াই ভালো।
এক বেলা দাওয়াত থাকলে পরের বেলায় হালকা খাবার খাওয়া উচিত। এ সময় রান্নায় তেল কম দেওয়া উচিত। অল্প তেলে রান্নার কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।
যেমন-
▶ ডুবো তেলে ভাজা সবজি বাদ দিয়ে ঝোলযুক্ত তরকারি খেতে হবে।
▶ পাঁপড় ও চিড়া তেলে না ভেজে সেঁকে বা টেলে খেলে ভালো হয়।
▶ পরোটা খেতে চাইলে ময়দা ময়ান দেওয়ার পর না ভেজে তৈরি করুন। সেটা তেল ছাড়া পরোটা হিসাবে আমাদের দেশে পরিচিত।
▶ ডিম যতটা সম্ভব কম তেল দিয়ে ভাজতে হবে।
▶ রান্নায় সুঘ্রাণের জন্য তরকারি নামিয়ে ওপরে এক চা চামচ ঘি ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
▶ মাছ না ভেজে পেঁয়াজ ও আদার রস এবং দই দিয়ে মাখিয়ে স্টিম করে নেওয়া যায়।
▶ কেক খেতে চাইলে কোকো মেশানো কেক খান।
▶ ভ্রমণের সময় বাইরে খাবারের পরিবর্তে বাড়ির তৈরি খাবার সঙ্গে রাখুন। কারণ বাড়ির তৈরি খাবারের চেয়ে বাইরের খাবারে চর্বি বেশি থাকে। বাড়িতে থাকলে চানাচুর, বিস্কুট, মিষ্টি ইত্যাদি না খেয়ে খেতে পারেন টমেটো, শসা, পাকা পেঁপে, তরমুজ, আপেল, হালকা চা, আইস টি, লেমন টি, লেবুর রস ইত্যাদি।
ওজন কমানোর জন্য শুধু স্বাদহীন সিদ্ধ খাবার ও পানি খেয়ে থাকা নয়; নিয়ম মেনে সব ধরনের খাবারের সমন্বয়ে সুষম খাবার খেতে হবে।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।