ডেঙ্গুতে প্লেটলেট আতঙ্ক
অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডেঙ্গুজ্বরে সাধারণত প্লেটলেট কমে যায়। সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে (জটিলতাহীন ডেঙ্গু) প্লেটলেট ১ লাখ ৫০ হাজারের নিচে কমে আসে। কিন্তু ডেঙ্গু হেমোরিজিক জ্বার (স্টেজ-১) প্লেটলেট ১ লাখের নিচে নেমে আসে। অনেক সময় দেখা যায় প্লেটলেট কাউন্ট কমতে কমতে ১০ হাজার এমনকি ৫ হাজারের নিচে নেমে আসে। সাধারণত প্লেটলেটের সংখ্যা জ্বরের ৩-৬ দিনের ভেতর কমতে থাকে এবং ৬ দিন পর আবার বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে ৯-১০ দিনের মাথায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
প্লেটলেট কমে গেলে সবার মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ আতঙ্কটা খুব একটা অযৌক্তিকও নয়। কারণ রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য প্লেটলেটের ভূমিকা রয়েছে। প্লেটলেট কমে এলে একপর্যায়ে চামড়া এবং ঝিল্লির গায়ে ছোট ফোঁটা ফোঁটা রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। এটাকে পিটিছি অথবা পারপুরা বলে। রক্তক্ষরণের কথা মনে করেই প্লেটলেট কমে গেলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রক্ত দেওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করেন। এমতাবস্থায় অন্য কোনো কারণে রোগী মারা গেলে রোগীর আত্মীয়স্বজন মনে করেন প্লেটলেট কমে গেছে বলে রোগী মারা গেছেন। ডেঙ্গুর ব্যাপারে এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। ডেঙ্গুজ্বরে যে প্লেটলেট কমে ওই কারণে রক্তক্ষরণ হয় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগীকে প্লেটলেট দেওয়া হয়নি এবং যাদের প্লেটলেট দেওয়া হয়েছে তাদের মাঝে ফলাফলে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ যাদের প্লেটলেট দিয়েছে তাদেরও রক্তক্ষরণ হয়নি এবং যাদের প্লেটলেট দেওয়া হয়নি তাদেরও রক্তক্ষরণ হয়নি।
অনেক রোগীর প্লেটলেট ১০ হাজারের নিচে তাদের কোনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে না এবং তাদের প্লেটলেট দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। প্লেটলেট ৫ হাজারের নিচে হলেও রোগী এবং আত্মীয়স্বজন সবারই শান্ত থাকা উচিত। এ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। শুধু প্লেটলেট কমার কারণে রক্তক্ষরণ হয় না। রোগী যেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, চিকিৎসকের ওপর আস্থা রাখুন। রোগীর শিরাপথে যে পানীয় দেওয়া হচ্ছে এটাই হচ্ছে ওই অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা।
* কখন রোগী মারা যায়
▶ যখন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে অবহেলা করে, দৌড়াদৌড়ি করে, অফিস আদালতে যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে যায় অর্থাৎ বিশ্রাম নেয় না।
▶ যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে ও হাসপাতালে যায় না।
▶ যথাযথভাবে শিরায় পানি নেয় না।
▶ উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে যখন শক সিন্ড্রোম শুরু হয়।
▶ ডেঙ্গু যখন হৃৎপিণ্ডে আঘাত হানে।
▶ যখন ব্রেনে আঘাত হানে।
লেখক : সাবেক ইউনিট প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।