খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা
আখতারুন নাহার আলো
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কোনো কোনো সময় আমাদের কোনো একটি খাবারের জন্য ক্রেভিং সৃষ্টি হয়। তখন মানুষ কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারে না। নিষিদ্ধ খাবারের প্রতি ক্রেভিং বেশি হয়। অনেকে প্রধান খাবারের পর মিষ্টি খেতে চান। যদিও তিনি জানেন, তার ডায়াবেটিস আছে এবং মিষ্টি খাওয়া নিষেধ; তারপরও তিনি মিষ্টি না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এটা সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার। বেশ কয়েকটি খাবারের প্রতি অনেকের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা আসক্তি দেখা যায়।
▶ কোলাড্রিঙ্কস : অনেকে পানির পরিবর্তে কোলাড্রিঙ্কসের প্রতি আসক্ত থাকেন। অথচ এ পানীয়তে ক্যালরি ছাড়া অন্য কোনো পুষ্টি থাকে না। এটি কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর। আবার কোলাড্রিঙ্কস বেশি পান করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
▶ চা-কফি : এ দুটির প্রতি অনেকেরই এত বেশি আসক্তি থাকে, তারা খাবার না খেয়ে চা-কফি খেতেই থাকেন। তারা মনে করেন এগুলো না খেলে শরীর-মন কিছুতেই চাঙ্গা হবে না। অথচ অত্যধিক চা-কফি পানে ক্ষুধামন্দা, নিদ্রাহীনতা, পেটের সমস্যা হতে পারে। এগুলো পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত।
▶ বাদামের মাখন : পিনাট বাটার অথবা বাদামের মাখন ভিটামিন বি-এর ভালো উৎস। যাদের ক্রেভিং হয় তারা এ ধরনের মাখন খেতে থাকলে ভিটামিন বি-এর অভাব হয়। ৫০ গ্রাম মাখনে ২৪৮ ক্যালরি থাকে। যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে এটা বাদ দিয়ে অন্যান্য ভিমটানি বি কমপ্লেক্সযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
▶ পেঁয়াজ : রক্ত তরল করার কাজ করে পেঁয়াজ। তবে খুব বেশি ক্রেভিং থাকলে, এটা ফুসফুস অথবা সাইনাসের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
▶ পাকা কলা : যদি খুব বেশি পাকা কলা খান তাহলে রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যাবে। একটি মাঝারি আকারের কলায় ৫৫৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। যাদের কলার প্রতি ক্রেভিং হয় তারা দিনে ৪-৫টা করে পাকা কলা খেয়ে থাকেন। ফলে পটাশিয়াম যেমনি বেড়ে যায়, তেমনি দৈনিক ৪০০-৫০০ ক্যালরি অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায় বলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
▶ টকজাতীয় ফল : গলব্লাডারে পাথর ও লিভারের সমস্যার জন্য অনেক সময় টকজাতীয় ফলের প্রতি ক্রেভিং জন্ম নেয়। যদিও টকযুক্ত ফল মিষ্টি খাওয়ার প্রতি ক্রেভিং কমিয়ে দেয়। তবে অতিরিক্ত টকের জন্য অ্যাসিডিটি ও ডিওডেনাম আলসারের উদ্ভব হতে পারে।
▶ চকলেট : চকলেটের প্রতি ক্রেভিং তৈরি হয় চিনি ও ক্যাফেইনের কারণে। চকলেটের অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য পাউরুটি-বনরুটি খাওয়া যেতে পারে।
▶ দুধ : যদি দুধের প্রতি ক্রেভিং থাকে তাহলে, শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা এবং ওজন বেড়ে যায়। এদিকে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও বেড়ে যায়। এছাড়া বেশি দুধ পানের ফলে বেড়ে যাবে ট্রিপট্রোফ্যান, লিউসিন, লাইসিন নামক এমাইনো অ্যাসিড। কিডনি ও ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে দুধ সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
▶ আপেল : প্রতিদিন একটি আপেল খেলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এটা একটা প্রবাদ বাক্য। কিন্তু এটার জন্য অন্যান্য খাবার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আপেলে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পেকটিন। আপেল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যদি খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি থাকে তাহলে আপেলে ক্রেভিং থাকলেও ক্ষতি নেই।
▶ পনির : অনেকেরই পনিরের প্রতি ক্রেভিং থাকে। এতে শরীরে এলুমিনিয়াম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া পনিরের মধ্যে যে ক্যাসেইন নামক প্রোটিন থাকে, সেটা হজমের সময় ক্যাফেমরফিন নামক এ ধরনের উপাদান নিঃসরণ করে থাকে। তবে অতিরিক্ত পনির খাওয়ার পেছনে কাজ করে চর্বি ও লবণ।
▶ চাইনিজ : এ খাবারগুলোতে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট ও সয়াসস থাকে। এ কারণে এগুলোর প্রতি অনেকের ক্রেভিং হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট হিস্টামিনের ওপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে মাথাব্যথা ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। কারও কারও কপাল ঘেমে যেতে দেখা যায়। এজন্য এগুলোর প্রতি ক্রেভিং না থাকাই ভালো।
▶ মাখন ও মেয়নেজ : বেশির ভাগ নিরামিষভোজির মাখন খাওয়ার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা দেখা যায়। এর কারণ, তারা অন্য কোনো সম্পৃক্ত চর্বি খান না। এদিকে লবণের প্রতি ক্রেভিং থাকার কারণে লবণাক্ত মাখন ও লবণাক্ত মেয়নেজ তারা পছন্দ করেন।
▶ আইসক্রিম : অনেকে আইসক্রিম পছন্দ করেন। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে আইসক্রিমের প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়।
▶ আচার : গর্ভাবস্থায় আচারের প্রতি আসক্তি জন্মায় এর ভেতরে থাকা লবণের জন্য। আবার যারা গর্ভবতী নন তারাও লবণের জন্য আচারকে প্রধান্য দিয়ে থাকেন। আচারে আছে প্রচুর পটাশিয়াম।
▶ লবণ : সোডিয়ামের জন্যই লবণের প্রতি আসক্তি জন্মায়। উচ্চরক্তচাপ থাকলে এবং হাইপারঅ্যাকটিভ বাচ্চাদের লবণের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়। অতিরিক্ত লবণ বাচ্চাদের মধ্যে একটা অস্থির ভাব এনে দেয়। ফলে তারা খুব বেশি চঞ্চল হয়। এডিসন ডিজিজের ক্ষেত্রেও লবণের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।