Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে কি অসুবিধা হচ্ছে

Icon

ডা. এম শাহাদাৎ হোসেন

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে কি অসুবিধা হচ্ছে

হাঁটু ব্যথা

অনেকেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করলেই হাঁটু প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এ ব্যথা শরীরের বিভিন্ন অংশের সমস্যার কারণে হতে পারে বা হাঁটুতে সরাসরি আঘাতজনিত সমস্যার কারণেও হতে পারে যা অস্টিওআর্থ্রাইটিস (হাড় ক্ষয়) নামে বহুল প্রচলিত।

* কী ও কেন হয়

হাঁটু ব্যথা হলো হাঁটুতে অনুভূত একটি সাধারণ উপসর্গ, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন-হাড়, কার্টিলেজ, লিগামেন্ট, টেন্ডন বা মাংসপেশি থেকে এ ব্যথা উদ্ভূত হতে পারে, যা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং এটি হাঁটা, দৌড়ানো, বসা থেকে দাঁড়ানো বা সিঁড়ি ভাঙার সময় আরও বাড়তে পারে। বয়স বৃদ্ধি, হাঁটুর ওপর অতিরিক্ত ওজনজনিত চাপ, মাত্রাতিরিক্ত হাঁটুর ব্যবহার এর কার্টিলেজের স্থিতিস্থাপকতা ও সহ্যশক্তি কমিয়ে দেয়, ফলে হাঁড় ক্ষয় হতে শুরু করে। এছাড়া জয়েন্টের অস্বাভাবিক গঠন (ফ্ল্যাট ফুট), আগের আঘাত (জয়েন্টের ফ্র্যাকচার, লিগামেন্ট টিয়ার ইত্যাদি) এমনকি পারিবারে আগে কারও অস্টিওআর্থ্রাইটিস (হাড় ক্ষয়) থাকলেও এর ঝুঁকি বাড়তে পারে।

* যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে

হাঁটুর মধ্যে ব্যথা এ সমস্যাটির প্রধান লক্ষণ। সাধারণত হাঁটার সময় বা কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ব্যথা বেড়ে যায়। হাঁটু যে কোনো ধরনের নড়াচড়া (হাঁটা, বসা, উঠা) করলে ব্যথা বাড়তে পারে। হাঁটুর জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বা দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর এমনকি বসা থেকে উঠতে গেলেও ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় হাঁটুর জয়েন্ট ফুলে যেতে পারে, যা অতিরিক্ত চাপ বা প্রদাহের কারণে হয়। হাঁটু নড়ানোর সময় ‘ক্র্যাকিং’ বা ‘পপিং’ শব্দ হতে পারে, যা কার্টিলেজ ক্ষয়জনিত কারণে হয়। হাঁটুর গঠন পরিবর্তন হতে পারে, যেমন হাঁটুর ভেতরের দিকে বা বাইরের দিকে বাঁকিয়ে যেতে পারে। হাঁটুর কার্যকারিতা সীমিত হয়ে যেতে পারে যা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা বা নিচে বসাকে কষ্টকর করে তোলে।

* কীভাবে বুঝবেন আপনার এ সমস্যা আছে কিনা

হাঁটুর ব্যথার ধরন, স্থায়িত্ব, মুভমেন্ট, স্থিতিশীলতা এবং অন্যান্য উপসর্গ যেমন ফোলা, শক্ত হওয়া এবং হাঁটু থেকে আওয়াজ হওয়া ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসক একটি এক্স-রে করার পরামর্শ দিতে পারেন। যার দ্বারা সহজেই অস্টিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণ যেমন জয়েন্ট স্পেসের সংকোচন, ওস্টিওফাইট ফরমেশন এবং স্ক্লেরোসিস চিহ্নিত করা হয়। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এমআরআই টেস্ট করা হয়ে থাকে যা লিগামেন্ট, টেন্ডন বা কার্টিলেজের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সাহায্য করে। হাঁটুর জয়েন্ট থেকে ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করার মাধ্যমে প্রদাহজনিত কারণ বা অন্যান্য রোগ যেমন-গাউট বা রিউমাটয়েড আর্র্থ্রাইটিস আছে কিনা তা চিহ্নিত করা হয়।

* কী কী চিকিৎসা আছে

হাঁটুতে ব্যথা হলে প্রথম একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ রোগীকে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে, ইনফ্লামেশন (প্রদাহ) এবং হাঁড়ের স্থবিরতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা হাঁটুর সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে কারেকশন বা ম্যানুয়াল থেরাপি অন্যতম। কারেকশন থেরাপির মাধ্যমে হাঁটুর জয়েন্টের কঠোরতা কমানোসহ সংশ্লিষ্ট মাংশপেশির (রেক্টাস ফিমোরিস, ভ্যাস্টাস মিডিয়াস, লেটেরালিস এবং ইন্টারমিডিয়াস, বাইসেপস ফিমোরিস, সেমিটেন্ডিনাস, সেমিমেন্ত্রেনাস, গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস, পোপলিটিয়াস) শক্তিবৃদ্ধি করা হয়। যার ফলে এ রোগটি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যায়। ফিজিওথেরাপি বা ম্যানুয়াল থেরাপি চিকিৎসা নিতে পারেন। কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে হাঁটু সার্জারির দরকার হয়।

* বাসায় বসে করণীয়

হাঁটুর ওপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে বিশ্রাম নিতে পারেন। ব্যথা বেশি হলে কিছুদিন হাঁটা বা দৌড়ানো বন্ধ রাখতে পারেন বা হাঁটুর ব্রেস বা সাপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন, যা হাঁটুর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হাঁটুর ফোলা এবং ব্যথা কমাতে প্রতিদিন ৩-৪ বার ১৫-২০ মিনিট করে আইসপ্যাক প্রয়োগ করতে পারেন। কোয়াড্রিসেপস স্ট্রেচ, হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ, ওয়াল স্লাইড এবং আইসমেট্রিক এক্সারসাইজ করতে পারেন, যা আপনার হাঁটুর স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা কলেজ অব ফিজিও থেরাপি, চিফ কনসালন্ট্যান্ট, এএসপিসি ম্যানুপুলেশন থেরাপি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম