
প্রিন্ট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৮ এএম
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাচ্ছেন ১১ জন

মোজাম্মেল হক চঞ্চল
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
২০২৩ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাচ্ছেন ১১ জন ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। ১১ জনের চূড়ান্ত তালিকা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জাতীয় পুরস্কারের জন্য গঠিত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির অনুমোদনের পরেই এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, যে ১১ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে তারা হলেন-শুটার শারমিন আক্তার রত্না, সাঁতারু ডলি আক্তার, ফুটবলার রুমি রিজভী করিম এবং মাহফুজুল মামুন বাবু, ভারোত্তোলক ফাহিমা আক্তার ময়না, ক্রিকেটার মাইনুল হক, তায়কোয়ান্দোকা মিজানুর রহমান, পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার, স্পেশাল অলিম্পিক অ্যাথলেট বিবি ফাতেমা, ফ্লোর হকি ও বৌচি খেলোয়াড় এসএম ফেরদৌস ইকরাম ও ক্রীড়া সংগঠক তরফদার মো. রুহুল আমিন।
২০২১ ও ’২২ সালের জন্য ২০ জন ক্রীড়াব্যক্তিত্বের নাম চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১৯৭৬ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের প্রবর্তন করেন। ওই বছর আটজনকে দেওয়া হয়েছিল ক্রীড়া পুরস্কার। ছয় বছর নিয়মিত দেওয়ার পর ১৯৮২ সালে বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। ১৯৯৬ সালে আবার শুরু হয় পুরস্কার প্রদান। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩১৪ জন ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক পান এই পুরস্কার। তবে ২০০৮ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদকে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তার অনুপস্থিতির কারণে ওই পুরস্কারটি দেওয়া হয়নি। পুরস্কার পাওয়াদের একটি করে স্বর্ণপদক, সনদপত্র, নগদ এক লাখ টাকা ও একটি ব্লেজার দেওয়া হয়।
অতীতে কীর্তিমানদের সঙ্গে ক্রীড়া পুরস্কার বাগিয়ে নিতেন অখ্যাতরাও। মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ক্রীড়া পুরস্কারের তালিকায় নিজেদের নাম যুক্ত করেছিলেন কয়েকজন। তাই অনেকে ক্রীড়া পুরস্কারকে ‘তদবির পুরস্কার’ নামে আখ্যায়িত করতেন। কিন্তু এবার তেমনটি ঘটেনি। যোগ্যরাই পাচ্ছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
শুটার শারমিন আক্তার রত্নাকে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ধরা হতো সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শুটার। আন্তর্জাতিক শুটিংয়ে নিশানার বিন্দুগুলো বেশ কয়েকবারই ছুঁয়ে গেছে শারমিনের সাফল্যের গুলি। ২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে মেয়েদের এককে স্বর্ণ জেতেন শারমিন। একই গেমসে দলগত স্বর্ণ জেতায়ও ছিল তার বড় অবদান। ওই বছরই দিল্লিতে কমনওয়েলথ শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে দলীয় স্বর্ণ জয়েও নেতৃত্ব দেন তিনি। শারমিনের পর আর কোনো নারী শুটারই এসএ গেমসে এককে স্বর্ণ জিততে পারেননি। ২০০৪ সালে ঘরোয়া টুর্নামেন্টে শুটিং শুরুর পর শারমিন ছয়বার জাতীয় প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতেছেন। ২০০৮ সালে চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে তার। ওই বছরই ইন্দো-বাংলাদেশ গেমসে জেতেন প্রথম আন্তর্জাতিক স্বর্ণ। ২০১৫ সালে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হয়ে বেশ কিছুদিন শুটিংয়ের বাইরে ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা থাকায় অংশ নিতে পারেননি ২০১৬ সালের গুয়াহাটি এসএ গেমসে। তবে অংশ নিয়েছেন সর্বশেষ ২০১৯ সালের কাঠমান্ডু এসএ গেমসে। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ও ৫০ মিটার এয়ার রাইফেলের থ্রি পজিশনে জিতেছিলেন রুপা।
সাঁতারু ডলি আক্তারের কারিয়ার ছিল বর্ণাঢ্য। জাতীয় বয়সভিত্তিক, জাতীয় আসর ও বাংলাদশে গেমস মিলিয়ে ৭৪টি স্বর্ণ, ২৪টি রুপা ও ১২টি ব্রোঞ্জ জিতেছেন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস, ইন্দো-বাংলা বাংলাদেশ গেমস, অলিম্পিক গেমস, বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ ও এশিয়ান গেমসের মতো আসরে অংশ নিয়ে জিতেছেন নয়টি স্বর্ণ, ১১টি রুপা ও আটটি ব্রোঞ্জ। ফুটবলার রুমি রিজভি করিমের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। প্রথমে সাধারণ বীমা, এরপর বিআরটিসি। বাংলাদেশের ফুটবলে এই দুটি অফিস-দলের অস্তিত্ব এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৯৮৮ নাম লিখিয়েছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনীতে। খেলেছেন জাতীয় দলে। ১৯৮৮ সালে আবুধাবিতে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের জার্সি প্রথম গায়ে তোলেন তিনি। টানা জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৯৪ পর্যন্ত। চোট-বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার আর দীর্ঘায়িত করতে পারেননি।
মাহফুজুল মামুন বাবু মধ্যমাঠের ফুটবলার ছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ’৮৮ সাল পর্যন্ত লাল সবুজের জার্সি গায়ে চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। গোল করেছেন চারটি। ক্যারিয়ারে আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স এবং ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের হয়ে খেলেছেন ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার।
ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ক্রিকেটার মাইনুল হক, যিনি মাইনু নামে পরিচিত। ১৯৭৬-৭৭ সালে ঢাকায় এমসিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলেছিলেন। পরের বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে সহ-অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে সফরকারী ভারতীয় ডেকান ব্লুজদের বিরুদ্ধে রকিবুল হাসানের সঙ্গে সেঞ্চুরি জুটি গড়েছিলেন। মইনুল বেশির ভাগ সময় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে খেলেছেন। তার বড় ভাই সেলিম ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন।
ভারোত্তোলক ফাহিমা আক্তার ময়নার ভারোত্তোলনে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে বহুবার জাতীয় প্রতিযোগিতা ও বাংলাদেশ গেমসে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক জিতেছেন। ঘরোয়া আসরই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরব ছিলেন ময়না। ইয়ুথ কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান ভারোত্তোলন আন্তঃক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান জুনিয়র মহিলা ভারোত্তোলন, কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপ, সাউথ এশিয়ান ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতা, সাউথ এশিয়ান গেমসে একাধিক পদক জিতেছেন তিনি। এছাড়া এশিয়ান গেমস, ইসমলাকি সলিডারিটি গেমসেও অংশ নিয়েছেন ময়না। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে ২২টি স্বর্ণ, দুটি রুপা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১৭টি রুপা ও আটটি ব্রোঞ্জ জিতেছেন।
তায়কোয়ান্দোর ‘স্বর্ণের ছেলে’ মিজানুর রহমান ২০০৬ সালে কলম্বো এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। সব মিলেয়ে জিতেছেন মোট ২৯টি স্বর্ণপদক।
নিশাত মজুমদার ২০১২ সালের ১৯ মে দেশের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেন। হিমালয়ের এই পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ৮৪৮ মিটারের বেশি। এর আগে-পরে তিনি আরোহণ করেন মেরা, সিংগু চুলি, মাকালু, চেকিগো, শিশাপাংমা, কিয়োজো রি, পিসাং, এলব্রুস, ইমজা সে, লবুচে পর্বত।
ক্রীড়া সংগঠক তরফদার মো. রুহুল আমিন একজন ব্যবসায়ী হলেও ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে এখনো ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের অন্যতম ক্লাব চট্টগ্রাম আবাহনীর ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাঁতার ফেডারেশন ও দাবা ফেডারেশনেরও সহসভাপতি। ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে তার প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক। একজন চৌকশ ক্রীড়া সংগঠক হিসাবে সম্প্রতি ভারতে মাদার তেরেসা পুরস্কার পেয়েছেন তরফদার রুহুল আমিন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখায় এ সম্মাননায় ভূষিত করা হয় তাকে।
অ্যাথলেট বিবি ফাতেমা একজন স্পেশাল ক্রীড়াবিদ। শটপুট, ১০০ মিটার রিলে ও ১০০ মিটার স্প্রিন্টে লড়ে থাকেন। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকে ১০০ মিটার রিলে ও শটপুটে রুপা এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন ২৭ বছর বয়সি এই স্পেশাল ক্রীড়াবিদ। এসএম ফেরদৌস ইকরাম একজন ফ্লোর হকি ও বৌচি খেলোয়াড়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদানস্বরূপ মনোনীত হয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য।