ছোটন-স্মলি দুকূলই হারাল বাফুফে!
পল স্মলির অহেতুক অত্যাচারেই জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন গোলাম রব্বানী
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পল স্মলি
দেশের আড়াই কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়ে কখনো রাতের আঁধারে চলে গেছেন। আবার অন্য দেশে গিয়ে কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে ফিরেও এসেছিলেন। গত সাত বছর ব্রিটিশ কোচ ও টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলিকে নিয়ে নানা লুকোচুরি খেলায় মেতে ছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। মেয়েদের সাবেক প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে প্রায়ই নাজেহাল করতেন পল। বাফুফের স্টাফদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি মিয়ানমারে সাবিনাদের না পাঠানোর পেছনেও কলকাঠি নেড়েছেন পল। ব্রিটিশ এই নাগরিকের জন্যই অস্বস্তি নিয়ে জাতীয় নারী দলের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন সাফল্য কুড়িয়ে আনা গোলাম রব্বানী ছোটন। এবার সেই স্মলিও চলে গেলেন বাফুফেকে ছেড়ে। ফলে ছোটন-স্মলি দুকূলই হারাল বাফুফে।
২০০৯ সালে নারী দলের দায়িত্ব ছোটনের কাঁধে তুলে দেওয়া হয়। সেই থেকে কৃষ্ণা রানী সরকার, সিরাত জাহান স্বপ্না, মারিয়া মান্দা, আনুচিং মোগিনী, সাজেদা খাতুন, শামসুন্নাহার, আঁখি খাতুনদের তারকা বানিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিভৃতে মেয়ে ফুটবলার তৈরির কাজ করে গেছেন এই কোচ। বিভিন্ন সময়ে নানা সাফল্যের পর গত বছর সেপ্টেম্বরে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত ও নেপালকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তোলেন সাবিনা খাতুনরা।
ছোটন যখন মেয়েদের ফুটবলে উন্নতির ছোঁয়া দিলেন, ঠিক সেই সময়ে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড থেকে টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলিকে এনে আধুনিকতার ছোঁয়া দেওয়ার নামে বোঝা চাপিয়ে দিল বাফুফে। জাতীয় দল কিংবা একাডেমির খেলোয়াড় তৈরি করার দায়িত্ব না দিয়ে পলকে যুক্ত করা হয় মেয়েদের ফুটবলে। শুরু হয় দেশের ফুটবল নিয়ে ব্রিটিশ এই কোচের নাটক। চার বছর পর ২০২০ সালে কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দেওয়া স্মলি হঠাৎ করেই নিজ দেশে চলে যান। একটি হিসাব অনুযায়ী ওই সময়েই তার কাছে আয়কর বাবদ সরকারের পাওনা ছিল এক কোটি ৮০ হাজার টাকা। পরে দায়িত্ব নেন ব্রুনাই জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসাবে। ক’মাস পর সেখানেও অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলেন পল। ব্রুনাই ফুটবল ফেডারেশন পলের কর্মকাণ্ডে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। পলের মাধ্যমে নানা গায়েবি প্রজেক্ট তৈরি করে ফিফা-এএফসির কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার বাফুফে বাগিয়ে নিত বলে অভিযোগ ছিল। ওই সব প্রকল্পে অর্থ খরচের অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বাফুফের প্রয়াত সহসভাপতি বাদল রায়। গোলাম রব্বানী প্রধান কোচ হলেও দলের চাবিকাঠি থাকত মূলত পলের হাতেই। ফুটবলারদের সামনে বাবাতুল্য ছোটনকে নাজেহাল করতে ছাড়তেন না ব্রিটিশ এই কোচ। কৃষ্ণা, মারিয়াদের অনুশীলনের সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হতো কোচকে। সব নির্দেশনা চলত পলের। নারী দলের অনুশীলনে নিজের নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা, তা জানার জন্য অস্ট্রেলিয়ান ফিটনেস ট্রেইনার ইভান রাজলককে গুপ্তচর হিসাবে কাজ করাতেন এ ব্রিটিশ। বাফুফের সভাপতির কাছে নিজের সুনাম করতে সাবিনাদের বাধ্য করতেন পল। তাকে ছাড়া দেশের নারী ফুটবল চলবে না, এমনটাও সভাপতিকে বলার জন্য মেয়ে ফুটবলারদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেন। সূত্রটি জানায়, বাফুফের মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরনের সঙ্গে বিশেষ সখ্য থাকায় এমন দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিলেন এই টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর। ছোটন অনেক পরিশ্রম করলেও লাখ খানেক টাকাও সম্মানি পেতেন না। যেখানে শুধু নির্দেশনা দিয়েই ১৫ হাজার ডলার বেতন পেতেন পল স্মলি। মাঝে কাজের পরিবেশ নেই বলে চাকরি ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে ছলচাতুরী করে আরও পাঁচ হাজার ডলার বেতন বাড়িয়ে নেন তিনি। বরং বাফুফেকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একের পর এক অঘটন ঘটাতে থাকেন পল। মাত্র নয় লাখ টাকার জন্য অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে মিয়ানমারে যেতে পারেনি মেয়েরা, সেটাও পলের কারণেই। জানা গেছে, এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন ব্রিটিশ এই টেকনিক্যাল ডাইরেক্টরই। যার ফলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বাফুফে। সূত্রে জানা গেছে, পলের অহেতুক অত্যাচারেই জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেছেন গোলাম রব্বানী।