Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন

বিশ্বব্যাপী আ.লীগ নেতাদের সম্পদের সাম্রাজ্য

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিশাল গোপন সম্পদের তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। শুক্রবার প্রকাশিত ‘দ্য বাংলাদেশি পলিটিশিয়ান হু বিল্ট আ শ্যাডো গ্লোবাল প্রোপার্টি এম্পায়ার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ১৯৯২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর নানা প্রান্তে সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের গোপন সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লোরিডার ওকালা ন্যাশনাল বনের পশ্চিম সীমান্তে একখণ্ড আধা একর জমি রয়েছে যা শিগগিরই আন্তর্জাতিক মামলার বিষয়বস্তু হতে পারে। এখনো অব্যবহৃত জমিটি পুনরুদ্ধার করেছে বন বিভাগ। ম্যারিয়ন কাউন্টির সম্পদ মূল্যায়নকারীর রেকর্ড থেকে জানা যায়, ওই জমি প্রায় দুই দশক আগে কিনেছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। শেখ হাসিনার সরকারের সংসদ-সদস্য থাকাকালীন সাইফুজ্জামান ৪৮ হাজার ডলারের যে রিয়েল এস্টেট কিনেছিলেন তার একটি হচ্ছে ফ্লোরিডার ওই জমি। ১৯৯২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাইফুজ্জামানের ২৯৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৪৮২টি সম্পদের খোঁজ পেয়েছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তার এসব সম্পদের একটি অংশ ফেরত চায় বাংলাদেশ। কেননা, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের সন্দেহের মধ্যে সাইফুজ্জামানও একজন। আরব আমিরাতের জমকালো শহর দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা এবং পাম জুমেইরা কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ থেকে শুরু করে লন্ডনের কমিউটার শহরগুলোতে রয়েছে সাইফুজ্জামানের বিশাল সম্পদের পাহাড়।

ভূমিমন্ত্রী হওয়ার আগে পাঁচ বছর সংসদ-সদস্য ছিলেন সাইফুজ্জামান। ২০২৩ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন তার মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার বা ২৩ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে আয়করের নথিতে তিনি উল্লেখ করেন দেশের বাইরে তার কোনো সম্পদ নেই। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের অন্যান্য এলিটদের সঙ্গে তিনি এবং তার কিছু আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ফাঁস হওয়া নথি এবং সরকারি বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানতে পেরেছে, সাইফুজ্জামান এবং তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরাই বিশ্বের নানা স্থানের ওই সব সম্পত্তির মালিক। যার মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩১৫টি, দুবাইতে ১৪২টি, নিউ ইয়র্কে ১৬টি, ফ্লোরিডায় ছয়টি এবং নিউ জার্সিতে তিনটি সম্পদ রয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে সাড়া দেননি সাইফুজ্জামান। তবে তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ই-মেইলে জানিয়েছেন, তালিকাভুক্ত সব সম্পদ তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। তিনি আরও বলেন, তার পরিবারকে আগের শাসনের অংশ থাকায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, সম্ভবত কিছু সম্পদ অন্যদের নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বের হয়েছে দুবাইয়ে থাকা সাইফুজ্জামানের বেশ কিছু সম্পদ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

হাসিনার পরিবারের পাশাপাশি ১০টি শীর্ষস্থানীয় পরিবারের সম্পদের হিসাব বের করতে ১০টি যৌথ তদন্ত টিম গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে কোন কোন পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। সরকারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, দুইটি পরিবারের বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত ব্যাংক ঋণ থেকে লাভবান হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিদেশে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে খবর রয়েছে। যেমন, কানাডার টরন্টো ধনী বাংলাদেশিদের কাছে এতটাই জনপ্রিয় যে, এটি বেগম পাড়ার একটি প্রধান উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এমন মানুষদের বোঝাতে এই বেগম পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাদের পরিবারের সদস্যরা বিদেশের ধনী এলাকায় আরামে বসবাস করছেন। অন্টারিও ল্যান্ড রেজিস্ট্রি নথি ঘেঁটে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে যে, চিহ্নিত ১২টি সম্পদের মধ্যে সাবেক এক আওয়ামী এমপির স্ত্রীর নামে ১০ লাখ ডলারের একটি বাড়ি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ১৩ লাখ ডলার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম