স্ত্রী-ছেলেসহ নাফিজের ৭৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
নিজাম হাজারীর স্ত্রীর ফ্ল্যাট-ভবনসহ ৫২ বিঘা জমি জব্দের আদেশ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ, ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সরাফাতের ৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের (ফ্রিজ) আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের ৮টি ফ্ল্যাট, বিপুল পরিমাণ জমি, কোম্পানির শেয়ারসহ ৩০টি ব্যাংকের হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুদকের আলাদা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন (গালিব) এ আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নাফিজ সরাফাতের আবেদনে বলা হয়, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও অন্যদের বিরুদ্ধে ঘুস, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও একে অপরের যোগসাজশে প্রায় ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের ওপর অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুসন্ধান টিম কাজ করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগসংশ্লিষ্টরা ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্যদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলো অবিলম্বে অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
এর আগে একই আদালত ৭ জানুয়ারি নাফিজ সরাফাত, আঞ্জুমান আরা শহিদ, রাহিব সাফওয়ান সরাফাতের রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় থাকা ১৮টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। ফ্ল্যাট বাদে নাফিজ সরাফাত ও আঞ্জুমান আরা শহিদের নামে থাকা জমিসহ বাড়ি, প্লটও ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর ২২ জানুয়ারি নাফিজ সরাফাতের দুবাইয়ে থাকা একটি ফ্ল্যাট ও একটি ভিলা জব্দের আদেশ দেন একই আদালত।
এদিকে ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের ৮টি ফ্ল্যাট, একটি পিস্তল (রাইফেল), একটি ভবন, বিপুল পরিমাণের জমি, কোম্পানির শেয়ারসহ ৩০টি ব্যাংকের হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন একই আদালত। নূরজাহান বেগমের নামে বিপুল জমিও জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া নূরজাহান বেগমের নামে গাজীপুরের জয়দেবপুরে ২ কোটি টাকার স্টিল স্ট্রাকচার ফার্মও জব্দ করা হয়েছে।
অন্যদিকে নূরজাহান বেগমের নামে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি পিস্তল (রাইফেল) জব্দ করা হয়েছে। অবরুদ্ধ করা হয়েছে মেঘনা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এনসিবি ব্যাংক, এফএসআইবিএল ব্যাংক ও নগদ মিলিয়ে ১৯ কোটি ২৯ লাখ ৮২১ টাকা। এছাড়া শেয়ার ও ৩০টা ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ৪ কোটির বেশি টাকা রয়েছে।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ, ওরিয়নের ওবায়দুলসহ ৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্ত্রী কে ইউ জোহরা জেসমিন; ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম, স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম, মেয়ে জেরিন করিম; বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহসভাপতি আব্দুর রশিদ শিকদার এবং গণপূর্তের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সঞ্জয় হালদার ও স্ত্রী অনিকা ঘোষের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের আলাদা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
সাবেক মেয়র আতিকুলসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ ছয়জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৯ মার্চ তাদের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
অপর পাঁচ আসামি হলেন রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহিনুর মিয়া, উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও মো. বশির উদ্দিন।
ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন ও বিএম সুলতান মাহমুদ। শুনানিতে সুলতান মাহমুদ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের সময় উত্তরায় ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর দায় আতিকুল অস্বীকার করতে পারেন না। গাজী মোনাওয়ার বলেন, উত্তরার হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন থানায় হওয়া মামলায় অনেককে আসামি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের মামলায় উল্লিখিত ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। সাক্ষীরা এ ছয় আসামির নাম বলেছেন। সুলতান মাহমুদ ছয় আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আরজি জানান। শুনানি নিয়ে ছয় আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।