বিমানবন্দরের ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ
তারিক সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার মামলা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তিনটি বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলা করে। অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান। সোমবার কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
প্রথম মামলায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলেন-তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুহিবুল হক, এম মফিদুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্মসচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান, অ্যারনেস ইন্টারন্যাশনালের মালিক লুৎফুল্লাহ মাজেদ, এমডি মাহবুব আনাম, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক একেএম মাকসুদুল ইসলাম ও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল) প্রকল্পের কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। ওই কাজের সঙ্গে সহযোগী ঠিকাদার হিসাবে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে সম্পৃক্ত করা হয়। অনুসন্ধানকালে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলন প্রকল্পে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এ প্রকল্প থেকে ক্রয়সংক্রান্ত বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজের কাজসহ বিভিন্ন কাজে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এতে বেআইনিভাবে স্থানীয় এজেন্ট এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ওই কাজে সম্পৃক্ত করে পরস্পর যোগসাজশে প্রকল্প থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় মামলায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতে তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুহিবুল হক, জনেন্দ্রনাথ সরকার, এম মফিদুর রহমান, মো. আব্দুল মালেক, মো. হাবিবুর রহমান, সিএনএস মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক আফরোজা নাসরিন সুলতানা, পরিচালক (পরিকল্পনা) একেএম মনজুর আহমেদ, এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের মালিক লুৎফুল্লাহ মাজেদ ও এমডি মাহবুব আনামকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার নির্মাণকাজে এরোনেস ইন্টারন্যাশনালকে সম্পৃক্ত করা হয়। প্রকল্পের কাজে সর্বশেষ হিসাব অনুসারে ব্যয় করা হয়েছে ৭৩০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়। যার মধ্যে পছন্দের ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়ে বেআইনিভাবে স্থানীয় এজেন্ট এরোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ব্যবহার করে ওই প্রকল্প থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আসামিরা।
তৃতীয় মামলায় কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণকাজ ও রানওয়ে নির্মাণকাজে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। যেখানে আসামি করা হয়েছে ১০ জনকে। তারা হলেন-তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মুহিবুল হক, জনেন্দ্রনাথ সরকার, এম মফিদুর রহমান, মো. আব্দুল মালেক, মো. হাবিবুর রহমান, লুৎফুল্লাহ মাজেদ, মাহবুব আনাম, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মো. শফিকুল ইসলাম এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়-৪র্থ সংশোধিত) প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. ইউনুস ভূঁইয়া।
এজাহারে বলা হয়, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণকাজ ও রানওয়ে নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্পের কাজে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) নামীয় একটি চায়না কোম্পানিকে প্রকল্পের কাজে কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ অন্যরা প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রকল্প থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা লুটপাট করেন।
চতুর্থ মামলায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুই হাজার কোটি টাকার নতুন টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করে অগ্রিম বিল হিসাবে ২১২ কোটি টাকা ছাড় করার অভিযোগে আনা হয়েছে ১১ আসামির বিরুদ্ধে। আসামি তালিকায় আছেন-তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মো. মুহিবুল হক, জনেন্দ্রনাথ সরকার, এম মফিদুর রহমান, মো. আব্দুল মালেক ও হাবিবুর রহমান। এছাড়াও মাহবুবুল আনাম, লুৎফুল্লাহ মাজেদ, মইদুর রহমান মো. মওদুদ, শাহ জুলফিকার হায়দার (বর্তমানে উপসচিব, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়) এবং সাবেক যুগ্মসচিব মো. আনিছুর রহমানকে (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব) আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রকল্পের কাজে প্রচলিত ক্রয় প্রক্রিয়ার বিদ্যমান বিধান লঙ্ঘন করে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করে অর্থ লোপাট করেন। প্রকল্পের কাজে ২১২ কোটি টাকা অগ্রিম বিল নেওয়া হয়। অগ্রিম বিল নেওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এরোনেস ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে যান।