Logo
Logo
×

দ্বিতীয় সংস্করণ

৯৩ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৯৩ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত

৯৩ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত। সাম্প্রতিক ছবি

চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী মানুষ সাধারণত ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪ এই চার ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বাংলাদেশে একেক বছরে একেক সেরোটাইপ বা ধরনের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। দেশে এবার আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৯৩ শতাংশই (৯২ দশমিক) ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন। ‘চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার কার্যকারিতা এবং ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ নির্ধারণ’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার ‘সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ’ এবং বেসরকারি ‘ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ’ যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে মূল গবেষক ছিলেন ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ডা. রুখসানা রায়হান। তার সঙ্গে ছিলেন ‘সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশের সভাপতি ডা. জুলফিকার মামুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদুর রাহমান খান।

গবেষণায় বলা হয়, ৬৮ জন ডেঙ্গু পিসিআর (পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন) পজিটিভ রোগীর মধ্যে ৬৩ জনের (৯২ দশমিক ৬৪ শতাংশ) দেহে ডেন-২ সেরোটাইপ পাওয়া গেছে। এছাড়া ৪ জনের দেহে ডেন-৩ সেরোটাইপ এবং একজনের দেহে ডেন-২ ও ডেন-৩ দুই ধরনের সেরোটাইপই পাওয়া গেছে।

গবেষকরা জানান, একদিন থেকে সাত দিনের জ্বরে আক্রান্ত মোট ১৯৭ ডেঙ্গু রোগীর এনএস-১, ডেঙ্গু এন্টিবডি ও ডেঙ্গু পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ৬৮ জন বা ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশের দেহে পিসিআর পদ্ধতিতে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ২৮ জন অর্থাৎ ৪১ শতাংশের ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। এ নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তারা বলছেন, ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ দেখে ডেঙ্গু হয়নি ভেবে অনেকেই বিষয়টি অবহেলা করেন। পরবর্তী সময়ে তারা ডেঙ্গু সংক্রান্ত নানা জটিলতায় আক্রান্ত হন। এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হলেও অনেক সময় চিকিৎসকদের পক্ষে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় না। আবার জ্বর হলে শুরুতে অনেকেই হালকাভাবে নেন। অনেকে রক্ত পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হন না। যখন হাসপাতালে রোগী আসে, তখন শক সিনড্রোমে চলে যায়। চিকিৎসকের করার কিছু থাকে না। সুতরাং ডেঙ্গু সন্দেহ হলে শুধু ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফলাফলের উপরে নির্ভর না করে, রোগীর শারীরিক লক্ষণের দিকে নজর দেওয়া উচিত।

এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু সেরোটাইপ-২ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এনএস-১ নেগেটিভ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ডেন-৩ সেরোটাইপ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেলেও এ বছর এখন পর্যন্ত যে কয়েকটি গবেষণা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে ডেন-২ সেরোটাইপ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। চলমান মহামারিতে অত্যধিক ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ার পেছনে এটি অন্যতম কারণ হতে পারে।

ডেঙ্গু এনএস-১ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী যুগান্তরকে বলেন, যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হন, তখন অনেক ক্ষেত্রেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আর সেরোটাইপ-২ সংক্রমণের ক্ষেত্রেও এনএস-১ নেগেটিভ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই তিনি ডেঙ্গুর সহায়ক পরীক্ষা হিসাবে সিবিসি, ডেঙ্গু এন্টিবডি, ডেঙ্গু পিসিআরসহ অন্যান্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরর মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গুর চরিত্র বদলের কারণে তাৎক্ষণিক ডায়াগনোসিসে কিছুটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এতে রোগীরা যেমন পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরাও বুঝে উঠতে পারছেন না। এই দুইয়ের মাঝে থেকে কিছু রোগীর জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর হেমোরজিক ফিভার হচ্ছে। হঠাৎ করে শরীরে ফ্লুইড লস তথা রক্তের জলীয় অংশ কমে যাচ্ছে। রোগী শকে চলে যাচ্ছেন। ডেঙ্গুর কোন চরিত্রের কারণে এমনটা হচ্ছে সেটি নিয়ে গবেষণা করা দরকার।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম