তিন ডাকাতের বর্ণনা
রাতে টঙ্গী রেল স্টেশনের দুই প্রান্তে থাকে সশস্ত্র গ্রুপ
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাতের আঁধারে টঙ্গি রেলওয়ে স্টেশনের দুই পাশে দুটি সশস্ত্র গ্রুপ থাকে শিকারের আশায়। তাদের টার্গেট লোকাল ট্রেন। কারণ, আন্তঃনগর ট্রেনকে সাইড দেওয়ার জন্য লোকাল ট্রেন সাধারণত স্টেশনের দুই পাশে দুই-আড়াই কিলোমিটার দূরে ১০-১৫ মিনিটের জন্য বিরতি নেয়। ওই সময় কিছু যাত্রী প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে বা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ট্রেন থেকে নামেন। ওই যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব। ডাকাতদের একটি গ্রুপে থাকে ২০-২৫ জন করে সদস্য। রেললাইনের পাশে থাকা বস্তিতেই ডাকাতদের বসবাস। আর আউটার সিগন্যালের যেখানে লোকাল ট্রেন থামে সেই স্থান সাধারণত রাতে অন্ধকারে ঢাকা থাকে।
এছাড়া রেললাইনের দুই পাশে থাকা ঝোপঝাড় তাদের জন্য তৈরি করছে অনুকূল পরিবেশে। এই ঝোপঝাড়েই লুকিয়ে থাকে ছিনতাইকারী এবং ডাকাত দলের সদস্যরা। ট্রেন থামার পর কাউকে নামতে দেখলেই এগিয়ে আসে ওরা। গাজীপুরের টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের আউটার সিগন্যালে অপেক্ষায় থাকা ট্রেনে হামলা ও ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার তিন আসামির জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
মঙ্গলবার ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন ডাকাত- ছিনতাইকারী নিজেদের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- রুবেল, রবিন ও মাসুদ। সোমবার গভীর রাতে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের একটি দল গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। ওই অভিযানে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সে স্বীকারোক্তি দেয়নি। ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ওই ঘটনায় এর আগে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও ৬-৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তারা ধরা পড়বে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা মূলত মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জন্যই চাকুর ভয় দেখিয়ে তারা ছিনতাই ও ডাকাতি করে। ঘটনার দিন টঙ্গী স্টেশন থেকে আড়াই কিলোমিটার উত্তরে ট্রেন থামে। এ সময় এক যাত্রী জানালা খোলা অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তখন একজন ডাকাত বাইরে থেকে ওই যাত্রীর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে ওই যাত্রী ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলে। এ সময়ে আরও ৪-৫ জন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে এলে পাশের ঝোপ থেকে ১০-১২ জন এসে তাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। তখন ট্রেন থেকে আরও যাত্রী নেমে এলে অবস্থা বেগতিক দেখে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করতে করতে তারা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ট্রেনে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, ডাকাতি ও মাদক আইনে মামলা রয়েছে। তারা ট্রেন যাত্রীদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল সেট উদ্ধার করেছি। এগুলোর মধ্যে একটি সিম্ফনি স্মার্ট ফোন চিহ্নিত করেছি, যেটি ওইদিন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অন্য সেটগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আগের ছিনতাই হওয়া সেটও থাকতে পারে। সেদিন যেসব মোবাইল সেট লুণ্ঠন হয়েছে সেগুলো যার কাছে বিক্রি করা হয় তাকেও আমরা চিহ্নিত করেছি। তাকেসহ আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারে রেলওয়ে পুলিশের জোরালো অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, ১০ আগস্ট টঙ্গী এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেনে হামলা চালিয়ে যাত্রীদের মালামাল লুট করা হয়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এর পর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করে। পরদিন কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেনের স্টুয়ার্ড বাদী হয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন।