বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড
দুই যুবকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
পর্যবেক্ষণে একটি সিসিটিভি ফুটেজ * শুরু থেকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-‘পরিকল্পিত ঘটনা’
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম। ফাইল ছবি: যুগান্তর
রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই যুবকের সংশ্লিষ্টতা খুঁজছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ আগুনের পেছনে কারও না কারও হাত রয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই অভিযোগ করছিলেন।
তারা অভিযোগ করেন, এটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা।’ তাদের উচ্ছেদ করতে কেউ পেছন থেকে আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। তাদের সেই অভিযোগের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে একটি সিসিটিভি ফুটেজ। এতে দেখা যায়, দুই যুবক মার্কেট থেকে মোটরসাইকেলে দ্রুত ‘পালিয়ে’ যাচ্ছে। ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ফুটেজ জুড়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘অগ্নিসংযোগ করে দ্রুততার সঙ্গে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছে।’
এদিকে ওই দুই যুবকের সন্ধানে ও তাদের আটক করতে মাঠে নেমেছে তদন্তকারী সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। তারা অগ্নিকাণ্ডের আসল রহস্য বের করতে চেষ্টা করছেন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ে অনেক ‘প্লাস-মাইনাসের’ হিসাব রয়েছে। তাই এ নিয়ে এখনই চূড়ান্ত মন্তব্য করা যাবে না।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, যে দুই যুবকের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাদের আমরা খুঁজছি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ব্যাপকভাবে কাজ করছে। বিষয়টি আমার বিভাগের অধীনে হলেও আমাকে প্রটোকল ডিউটি বেশি করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের নাম-তালিকা করতে করতেই সময় চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কীভাবে দ্রুত ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া যায়, কীভাবে তাদের পুনর্বাসন করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছি। এসব কারণে আমি প্রযুক্তিগত কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি না। যারা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তারা ভালো বলতে পারবেন।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ওই দুই যুবকের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত একই সময়ে। তাই আমরা ধারণা করছি, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে ওই দুই যুবকের হাত থাকতে পারে। তাদের আটক করতে পারলেই প্রকৃত রহস্য বের করা সম্ভব হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, দুই যুবকের ভিডিও ফুটেজ তাদের চিন্তায় ফেলেছে। এখন দ্রুত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার রাতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডের রহস্য বের করতে আমরা সিরিয়াসলি কাজ করছি। ভাইরাল হওয়া দুই যুবকের সন্ধান করছি। এই মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জের একটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে ব্যস্ত আছি। তাই বঙ্গবাজারের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।
ঘটনার পর পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো নাশকতা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার রাতে ডিবি রমনা বিভাগের উপকমিশনার হুমায়ুন কবীর যুগান্তরকে বলেন, দুই যুবকের বিষয়টি নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলতে পারছি না।
এদিকে বঙ্গবাজার মার্কেটের আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছে না কোনো তদন্ত সংস্থাই। রহস্যময় দুই যুবকের খোঁজে গলদঘর্ম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। ঘটনার পরপরই এর রহস্য উদ্ঘাটনে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটিও কোনো রিপোর্ট দেয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সাধারণত সঙ্গে সঙ্গেই আমরা অগ্নিকাণ্ডের প্রাথমিক কারণ বলে থাকি। এই ঘটনাটি খুবই সেনসেটিভ। এখনো আমরা প্রাথমিক কারণ বের করতে পারিনি। আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষেই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে। দুই যুবকের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমাদের মতো করে তদন্ত করছি। প্রয়োজনে আমরা পুলিশের কাছ থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করব। আপাতত ফুটেজের বিষয়টি তারাই যাচাই-বাছাই করছে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত করছে। এখনো তারা প্রতিবেদন দেয়নি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ নিয়ে আমরাও তদন্ত করছি। ঘটনার সময় মোটরসাইকেল নিয়ে তো অনেকেই গিয়েছে। কেউ ভিডিও ভাইরাল করলেও যে সেটি সত্য হয়ে যাবে-বিষয়টি এমন নয়। তিনি বলেন, এখনো প্লাস-মাইনাসের অনেক হিসাব আছে। তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব প্রাথমিক কাজ করা দরকার, আমরা সেগুলো করছি। এতে যদি কোনো সুরাহা না হয়, তাহলে আমরা ধাপে ধাপে আনেক জায়গায় যাব।
৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেটের সব দোকান পুড়ে যায়। পাশের এনেক্সকো টাওয়ারসহ আরও কয়েকটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সূত্রপাতের ৭৫ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নেভানোর ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।