নতুন বইয়ের গন্ধে ভরা দিন...
হাবীবাহ্ নাসরীন
প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফেব্রুয়ারি এলো ওই! এ ফেব্রুয়ারিজুড়ে আছে আমাদের অস্তিত্বে। ভাষার জন্য আমাদের ভালোবাসা ফেব্রুয়ারিতেই দেখেছিল বিশ্ববাসী। এরপর কত কী ইতিহাস। ভাষার এ মাসে আয়োজন করা হয় দেশের সবচেয়ে বড় বইমেলার। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-নামক এ বইমেলায় নানাদিক থেকে ছুটে আসেন বইপ্রেমী, এমনকি বইয়ের প্রতি খুব বেশি টান না থাকা মানুষও। মেলা বলে কথা! তবে এ কথা তো নিশ্চিতভাবে বলাই যায়, বই কম পড়া এ দেশের মানুষের সামনে বই নিয়ে এত বড় আয়োজন একটু হলেও আশার আলো জিইয়ে রাখে। সবাই যে বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না, হাত বাড়ালেই বিনোদনের এ সময় যে এখনো মানুষ ভালো ও নতুন বইয়ের অপেক্ষা করে থাকে, এ-ই বা কম কী!
নতুন বইয়ে গন্ধে...
বইমেলা থেকে অনেকেই বই কিনতে চান। কারণ, এ সময় সব বইয়ের ওপরই মেলে মূল্যছাড়। তাই তো সারা বছর অনেকেই লিস্ট তৈরি করে রাখেন বইমেলায় গিয়ে বই কেনার। আবার অনেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়তে চান কিন্তু বুঝতে পারেন না যে, কার বই পড়লে ভালো হবে কিংবা কার বইটা কিনবেন? তখন খুঁজে দেখেন বইমেলায় কোন স্টলের সামনে ভিড় বেশি, কোন লেখকের অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য মানুষ লাইন ধরেছে। সেখানটায় দাঁড়িয়ে পড়েন আর কোনোকিছু না ভেবেই সবাই যা কিনছে তাই কিনে বাড়ি ফেরেন। এরপর হয়তো পড়তে গিয়ে আর সে বই তাকে টানে না। এভাবে পাঠক না জেনেই ঠকে যান। তাই সেলিব্রেটি কিংবা ভিড় দেখে বই না কিনে বরং বুঝেশুনে কিনতে হবে। আপনার কষ্টের টাকা যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আপনাকেই।
বিভিন্ন বইয়ের গ্রুপ রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ ছাড়া বই বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতেও পাওয়া যাবে বিভিন্ন বইসংক্রান্ত রিভিউ ও রেটিং। চাইলে বইয়ের সারাংশ পড়ে নিয়ে সেখান থেকেও আপনার আগ্রহ অনুযায়ী বই নির্বাচন করতে পারেন। আপনার আত্মীয় কিংবা পরিচিত বই প্রকাশ করেছে বলেই যে তার বই কিনতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কারণ যারা আপনাকে তার বইটা কেনার অনুরোধ করবেন, তারা খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী লেখক হওয়ার কথা নয়। যিনি তার লেখা নিয়ে তৃপ্ত ও আত্মবিশ্বাসী, তিনি তার বইয়ের বিক্রি ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চিন্তিত থাকবেন না। আপনি কোনো মানহীন লেখককে বই কিনে উৎসাহ দিলে পরে সে আরও মানহীন বই প্রকাশে আগ্রহী হবে। তাই বই কিনতে গিয়ে মান ও রুচির সঙ্গে কখনো আপস করবেন না।
ছোটদের জন্য বই কিনুন
বড়রা তবু যাচাই-বাছাই করতে পারেন, ছোটরা কী করবে? ছোটরা তো আর একা একা মেলায় যেতে পারে না বা বইও কিনতে পারে না। এক্ষেত্রেও সাহায্য করতে হবে বড়দেরই। আপনার বাড়ির খুদে সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পুরো মাসে একবার হলেও বইমেলায় যান। শিশুরা এমনিতেই ঘুরে বেড়াতে বা মেলায় যেতে খুব পছন্দ করে। সেখানে নিজের পছন্দমতো বই কিনতে পেলে তো কথাই নেই! তবে শিশু রং-বেরঙের বই দেখে নিতে চাইলেই সেটি কিনে না দিয়ে নিজে আগে চোখ বুলিয়ে নিন। শিশুদের জন্য লেখা বইগুলো সাধারণত অল্প পাতার হয়। তাই আপনি একনজর দেখলেই বুঝতে পারবেন বইটি আসলে কতটা মানসম্পন্ন।
শিশুকে এমন লেখকের বই-ই তুলে দিন যিনি ইতিবাচকভাবে শিশুর চিন্তাধারা তৈরিতে সাহায্য করবে। কারণ শিশুদের কল্পনার জগৎ অনেক সমৃদ্ধ থাকে। তারা সহজেই বইয়ের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। এ কারণে শিশুকে বই দিতে হবে বুঝেশুনে। আপনার ভুল নির্বাচন যেন শিশুর চিন্তার জগৎকে ছন্নছাড়া করে না দেয়। শিশু তার চারপাশ থেকেও অনেক বেশি প্রভাবিত হয়। তাই তার ভেতরে বই পড়ার অভ্যাস গড়তে চাইলে আপনাকে আগে বইয়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। খানিকটা অবসর পেলে হাতের ডিভাইসটি দূরে সরিয়ে বরং একটি বই টেনে নিয়ে বসুন। এতে শিশুও স্মার্টফোন ছেড়ে আপনার মতো বই পড়তে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। নিজ ভাষার জন্য ভালোবাসা তৈরি করতে হলে বই পড়ার বিকল্প নেই। বইয়ের পাতায় পাতায় ভাষার কারুকার্য শিশুকে মুগ্ধ করবে। তার মনে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি হবে মাতৃভাষার প্রতি অনুরক্ততা। এভাবে ছোট ছোট ভালো অভ্যাসের বিনিময়ে একটা সময় আপনার সন্তান আপনার ও দেশের সম্পদ হয়ে গড়ে উঠবে। মনে রাখবেন, আমাদের উত্তরাধিকারী আসলে আমাদেরই প্রতিবিম্ব!