ছবি: যুগান্তর
পৃথিবীতে যারা বিখ্যাত হয়েছেন, তাদের জীবনী ঘেঁটে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই জীবনটা গড়েছেন পরিকল্পিতভাবে। আর এ কাজটি তারা করেছেন তাদের তারুণ্যের সময়ে। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার জীবনটা আদর্শভাবে গড়তে চান, তাহলে তার শুরুটা করতে হবে তারুণ্যের সময় থেকে। বলা যায়, নিজের সফলতা বা নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে তারুণ্যের সময় থেকেই আপনাকে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। সেজন্য, প্রত্যেকের তারুণ্যের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুম থেকে উঠুন খুব সকালে : শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী বা যে পেশাতেই আপনি থাকেন, সকালে যত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেন, আপনার হাতে তত বেশি সময় পাবেন কাজ করার জন্য। ফলে আপনার সারা দিনের কাজের চাপ অনেকটাই কমে যাবে। এমনকি প্রয়োজনীয় কাজ সেরে হাতে আরও সময় পাবেন, যা আপনার পরিবার বা একান্ত নিজের জন্য ব্যয় করতে পারবেন।
ঘুমানোর আগে : সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হলে আপনাকে রাতে ঘুমাতেও হবে আগে আগে। সেজন্য রাতে ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করতে হবে। রাতের খাবারে যত কম তেল-মসলাযুক্ত খাবার খেতে পারবেন, তত ভালো। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করতে পারেন। রাতে ভালো ঘুমের জন্য সন্ধ্যার পর চা-কফি কম পান করা উচিত। কারণ এটি রাতের ঘুমের সমস্যা করে। রাতের খাবার রাত ৯টার মধ্যে শেষ করুন।
পানি পান : সবারই উচিত ঘুম থেকে উঠে পানি পান করা। এতে আপনার শরীর হাইড্রেট হবে। কেননা, রাতে ঘুমানোর পর লম্বা সময় আমরা পানি পান করি না। এতে করে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে যায়। এছাড়া প্রতিদিন পরিমিত পানি পান আমাদের ত্বক ও শরীরের সুস্থতার জন্য খুবই জরুরি।
সকালে ব্যায়াম করা : সব বয়সি মানুষেরই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু ব্যায়াম করা দরকার। ঘুম থেকে উঠেই খেয়ে না খেয়ে নিজের কাজে দৌড় দেই। তবে এটা করা ঠিক না। নাশতা খাওয়ার আগে আপনি একটু হাঁটতে পারেন, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ কিংবা ইয়োগা করতে পারেন। সবার জন্যই সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে আমরা অনেক সময় নাশতা করি না। সকাল আটটার মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে। ওটস, সবজি, ডিম, দুধ আপনার জন্য সকালের স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে।
দিনের কর্ম পরিকল্পনা : আপনি যে পেশারই হন, প্রতিদিন সকালে উঠে নিজের কাজের তালিকা তৈরি করতে পারেন। এতে অনেক সময় কাজের চাপে কোনো কিছু ভুলে গেলেও লেখা থাকলে কাজ মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে শত কাজের ফাঁকে নিজের জন্যও একটু সময় রাখুন, যা আপনার মনকে চাঙা রাখবে।
কর্মক্ষেত্রে গুছিয়ে কাজ করা : আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রবেশ করে থাকেন, তাহলে কিছু কাজ আপনার এগিয়ে যাওয়ার সহায়ক হবে। সেক্ষেত্রে সবার আগে জরুরি প্রতিদিন একটা কাজের তালিকা একটা তৈরি করা। এতে কোন কাজের গুরুত্ব বেশি সে অনুযায়ী তালিকা সাজিয়ে নিন। আর কাজ হয়ে গেলে কাজের পাশে একটি টিক চিহ্ন দিন এবং চেষ্টা করবেন কাজটি সময়ের মধ্যে শেষ করতে। এতে কাজের প্রতি আগ্রহ এবং কর্মদক্ষতাও বাড়বে।
টাইমার ব্যবহার : কাজ শুরু করার আগে টাইমার ব্যবহার করতে পারেন। কোন কাজটি করতে কতক্ষণ লাগছে, সময়ের মধ্যেই সেটি শেষ করতে পারছেন কিনা সেটির হিসাব রাখা সহজ হবে তাহলে। টু ডু লিস্ট অনুযায়ী কোন কাজটিকে প্রাধান্য দেবেন, টাইমার সেট করলে সেটি বোঝা আরও সহজ হবে। একবার টার্গেট অনুযায়ী কাজ করে ফেলতে পারলে দেখবেন আপনারও বেশ ভালো লাগছে। তখন নতুন কাজ করতেও উৎসাহ পাবেন।
পড়ালেখায় লক্ষ্য স্থির করা : অধিকাংশ মানুষের পড়ায় মন না বসার প্রধান কারণ-কেন পড়ছি? এ বিষয়টি তাদের কাছে পরিষ্কার না। ধরুন, আপনি বাসা থেকে হাঁটতে বের হলেন, কিন্তু আপনি কেন হাঁটবেন বা হাঁটলে কি হবে তা জানেন না। তাহলে, খুব বড় জোর ২/৩ দিন হাঁটার পর আপনি আর হাঁটবেন না। কারণ, আপনি জানেন না আপনি কেন হাঁটছেন। পড়াশোনাও ঠিক তাই, আপনি কেন পড়ছেন পড়ালেখা করে আপনি কি হতে চান? এ লক্ষ্য আগে ঠিক করুন।
ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা : ব্যায়াম বা খেলাধুলা পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে খুব কার্যকর। সারা দিনে কোনো একটা সময় অন্তত ১ ঘণ্টা ব্যায়াম অথবা খেলাধুলা করুন, এতে মাইন্ড ফ্রেশ থাকে এবং পড়াশোনায় অধিক মনোযোগী হওয়া যায়। আর খেলাধুলা অথবা ব্যায়ামের জন্য আপনি বিকালকে নির্ধারণ করতে পারেন। কারণ, বিকাল বেলা পড়াশোনা না করাই ভালো।
শরীর চর্চা : শুধু সুস্বাস্থ্যের জন্য নয়, মন ভালো রাখতেও ব্যায়াম বেশ উপযোগী। মাত্র পাঁচ মিনিট টানা ব্যায়াম করলে এন্ড্রোফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। যা ১২ ঘণ্টা মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। এর জন্য জিমে যাওয়া তেমন জরুরি নয়। ঘরেও করা যায়, এমন ব্যায়াম করলেও তা মানসিক অবস্থার উন্নতিতে সহায়তা করবে। এছাড়া অবসাদ দূর করতে যোগ ব্যায়ামও বেশ কার্যকর। তবে আগে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই যোগ ব্যায়াম করা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে : মানুষ এখন অনেকটাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক হয়ে উঠেছেন। সারা দিন কী করা হয়েছে বা কী চলছে সবই যেন সবাইকে জানান চাই। এক্ষেত্রে অনেক সময় অন্যের জীবনযাপন দেখেও হতাশাগ্রস্ত হয়ে যান অনেকে। তাই মন ভালো রাখতে কিছু সময় এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
সময় দিন নিজেকে : ব্যস্ততার মাঝে অনেক সময়ই নিজের জন্য আলাদা সময় বের করা হয়ে ওঠে না। তাই নিজের জন্য আলাদা করে কিছুটা সময় বের করে নিন।
বই পড়া : আপনি যে পেশারই হোন না কেন, নিয়মিত বই পড়া আপনার জীবনকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে। এছাড়া পৃথিবীতে যারা বিখ্যাত হয়েছেন, তারা সবাই তাদের জীবনে তিনটি জিনিসকে প্রাধান্য দিয়েছেন, সেটা হলো-বই, বই এবং বই। অর্থাৎ আপনাকে বড় হতে হলে বা সফল হওয়ার জন্য বই পড়ার বিকল্প কিছু নেই।