বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য পদে আলোচনায় যারা
জাহিদ হাসান
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক পদত্যাগ করেন। একই দিন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক), উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন), রেজিস্ট্রার এবং প্রক্টর পদে থাকা আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদেরও পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলো হঠাৎ করে শূন্য হওয়ায় নতুন কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন তা নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে বলছেন, বিএসএমএমইউ হচ্ছে চিকিৎসকদের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। ১৫ বছর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি চিকিৎসক ও শিক্ষকরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোণঠাসা অবস্থায় চলে যান। যোগ্য হয়েও উপযুক্ত চেয়ারে বসতে পারেননি। চলতি বছরের ১১ মার্চ অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হককে উপাচার্য নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। তার আগে উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। গত ২৮ মার্চ তার উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়। শারফুদ্দিনের আমলে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি নিয়ে আলোচনায় ছিল বিএসএমএমইউ। নতুন উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
এদিকে উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় থমকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। যুগান্তরের অনসুন্ধানে জানা গেছে বিএসএমএমইউ’র উপাচার্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন। উপাচার্য হিসাবে বেশি আলোচনায় রয়েছেন-বিএনপিপন্থি চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত বিএসএমএমইউ’র পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত) ও সার্জারি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-কেমেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোজাম্মেল হক এবং ঢাকা মেডিকেলের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের অনুসারী।
দলীয় বা গোষ্ঠী রাজনীতি থেকে দূরে আছেন উপাচার্য পদের জন্য এমন অধ্যাপকের নামও শোনা গেছে। এই তালিকায় রয়েছেন বিএসএমএমইউ’র হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম। এই চিকিৎসা বিজ্ঞানীর লেখা ১৬০টি পাবলিকেশন্স ও ৯২টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে। হেপাটোলজি বিষয়ে তার চারটি বই চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়। উপাচার্য হিসাবে আলোচনায় থাকা ডানপন্থি চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত আরেকজন হলেন বিএসএমএমইউ’র পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন। তিনি জোড়া লাগা শিশু আলাদা করার ক্ষেত্রে অগ্রগামী চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত। দেশি ও আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকীতে তার লেখা ৩০টির অধিক আর্টিকেল ছাপা হয়েছে। বিএসএমএমইউর হেমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনূস-এর নামও আলোচনায় রয়েছে। ব্লাড ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইউনূস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলোশিপ ও রিসার্চ মেথোডলজি নিয়ে কাজ করেছেন। দেশি-বিদেশি মেডিকেল জার্নালে তার ৫০টির অধিক আর্টিকেল ছাপা হয়েছে। নতুন উপাচার্যের তালিকায় ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান ও রিউমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হকের নামও শোনা যাচ্ছে চিকিৎসক মহলে।
অন্যদিকে প্রো-ভিসি তথা উপ-উপাচার্য পদে বিএসএমএমইউ’র রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শামিম আহমেদ, রেডিওলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, কার্ডিওলোজির অধ্যাপক ডা. শফি উদ্দিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস শাকুর, নাক, কান ও গলা সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত চিকিৎসক ল্যাপরোস্কপি ও কলোরেক্টাল সার্জন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মাদ মহিবুল আজিজের নাম শোনা যাচ্ছে। উপ-উপাচার্য পদ প্রত্যাশী কয়েকজন চিকিৎসক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর দরখাস্ত জমা দিয়েছেন বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।