অর্থনীতি ও পরিবেশ : দুটিই গুরুত্বপূর্ণ

লিয়াকত হোসেন
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পরিবেশ নিয়ে একটি আমেরিকান প্রবাদ আছে। সেটা হলো, ‘যেদিন সর্বশেষ গাছটি কেটে ফেলা হবে, সর্বশেষ নদীটি বিষাক্ত হয়ে যাবে, বিষাক্ত পানি-বায়ুর কারণে সর্বশেষ মাছ-মুরগি মারা যাবে, সেদিন আমরা বুঝতে পারব, টাকা খেয়ে বেঁচে থাকা যায় না।’ সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতি নানাভাবে আমাদের সতর্কবাণী দিচ্ছে, অতি দ্রুত পরিবেশ সুরক্ষার পদক্ষেপ না নিলে শেষের সেদিন আসতে আর বেশি সময় লাগবে না। ফুসফুসে ক্রমাগত বিষ প্রবেশ করছে। কিন্তু আমরা তো শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে থাকতে পারব না। এটা সত্য, আমাদের জন্য অবকাঠামো, অর্থনীতি, প্রযুক্তি-সবকিছুই দরকার। কিন্তু সেটা অবশ্যই পরিবেশের ক্ষতি করে নয়। নিঃশ্বাস বন্ধ করে যেমন অর্থ গোনা যায় না, তেমনি বর্তমান বাস্তবতায় অর্থ ছাড়াও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা দায়। তাই আমাদের সুন্দর ও সাবলীল জীবনের জন্য অর্থনীতি ও পরিবেশ, দুটিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। একটিকে আরেকটির চেয়ে বড় করে দেখার উপায় নেই।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অর্থনীতি বেগবান করতে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নকে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেন পরিবেশের কোনো গুরুত্বই নেই। অথচ আমরা সবাই জানি, শেষ পর্যন্ত এর মূল্য আমাদেরই চুকাতে হবে। বর্তমানে ঢাকা শহরের রাস্তায় হাঁটলে মনে হয়, এ শহরের বায়ুমণ্ডলে কোনো বিশুদ্ধতা আর অবশিষ্ট নেই। ধুলোবালির কারণে রাস্তার ধারের গাছপালা, এমনকি ঘরবাড়ির ভেতরও ধুলোর স্তর জমে যায়। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলে শ্বাসনালিতে ধুলো অনুভূত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নগরায়ণ যদি সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী হতো, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এত তীব্র হতো না। আজ ঢাকা শহর ও লাগোয়া অঞ্চলে যেভাবে প্রতিদিন নতুন নতুন বহুতল ফ্ল্যাট-ভবন, সড়ক ও অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, তাতে পরিবেশগত বিষয়গুলো প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। নির্মাণকাজের সময় ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় ইট-বালি ও কংক্রিটের টুকরো বাতাসে মিশে যাচ্ছে। উন্নত দেশের নগরায়ণে নির্মাণকাজের সময় ধুলোবালি ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কঠোর নিয়ম-নীতি রয়েছে, আমাদের দেশে তার কোনোটাই নেই। উপরন্তু নগরায়ণের জন্য নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তার সিকিভাগ বনায়নেও জোর দেওয়া হচ্ছে না। এর পাশাপাশি প্রতিদিন লাখ লাখ পুরোনো যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার-ডাই অক্সাইড গ্যাস বায়ুকে ধীরে ধীরে বিষাক্ত করে তুলছে।
শহরগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অসংগতি এবং আবর্জনা পোড়ানোর অনিয়ন্ত্রিত অভ্যাস বায়ুদূষণের সঙ্গে দূষিত করছে মাটি ও পানিকেও। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি উদাসীনতা আমাদের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।
লিয়াকত হোসেন খোকন : প্রাবন্ধিক