ভাষার বিকৃত চর্চা বন্ধ হোক

মোহাম্মদ সবুজ আহমেদ
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে বইপ্রেমী মানুষের মনে ও চিন্তায় বইমেলা বিশেষ স্থান করে নেয়। ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের মাধ্যমে মেলা শুরু হয়েছে। বসন্তের আগমনী সুর প্রকৃতিতে বইছে। পাঠক ও লেখকদের সমাগমে বইমেলা প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। মেলা প্রাঙ্গণে লেখকদের নতুন বই পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। মাসজুড়ে চলবে বইমেলা। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসবে মানুষ। তারা প্রিয়জনদের জন্য বই কিনবেন এবং উপহার দেবেন। একুশে ফেব্রুয়ারির দিন পুরুষরা পাঞ্জাবি-পায়জামা, নারীরা শাড়ি পরে মাথায় ফুল দিয়ে মেলায় ঘুরে বেড়াবেন। মেলার প্রতিটি স্টল প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
বাংলা ভাষার রয়েছে সুদীর্ঘ ও গৌরবময় ইতিহাস। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে পশ্চিম পাকিস্তান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দেয়, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণ বাংলায় কথা বলে। বাঙালিরা এ অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি এবং মাতৃভাষা রক্ষায় প্রতিবাদ শুরু করে। প্রিয় মাতৃভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেকে শহিদ হন। বাংলা ভাষার জন্য এ আত্মত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে।
ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগের ফলে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি।
যে ভাষার রয়েছে এমন গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, সেই ভাষার বর্তমান ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম বাংলা লেখার পরিবর্তে ‘বাংলিশ’ (বাংলা ও ইংরেজির সংমিশ্রণ) লেখার প্রতি বেশি ঝুঁকছে। এর ফলে ভাষার বিকৃতি বাড়ছে এবং চিন্তাশীলতা কমছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলিশ লেখার প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রকৃত বাংলা বানানের জন্য অসম্মানজনক। এর নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায়ও দেখা যাচ্ছে, বানান ভুলের সংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অভিভাবক ও সচেতন ব্যক্তিদের উচিত তরুণ প্রজন্মকে বাংলা ভাষার সঠিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সহায়ক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই নয়, বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা বছরজুড়েই করা উচিত। যে ভাষার জন্য মানুষের রক্ত ঝরেছিল, সেই ভাষাকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। মাতৃভাষার সঠিক চর্চার মাধ্যমে আমরা ভাষা শহিদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারব।
মোহাম্মদ সবুজ আহমেদ : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
mdsabujcoubbanar@gmail.com