সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার চাই

এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বছর ঘুরে আবারও এসেছে ৫ ফেব্রুয়ারি, ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’। চলতি বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘সমৃদ্ধ হোক গ্রন্থাগার, এই আমাদের অঙ্গীকার’। দিবসটি গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারপ্রেমীদের জন্য উৎসবের, আনন্দের। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা একটি পরিপত্র জারি করে, যার মর্মার্থ হলো, সরকার ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ ঘোষণা করেছে এবং এই তারিখকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত পরিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
পাঠক তৈরির উৎস : পাঠক তৈরির মূল উৎস হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা : প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ৩৩ হাজার; নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ২ হাজার ৪৫৫; মাাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬ হাজার ৫০৮; স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৩ হাজার ৩১৯। এ নিবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ধরা হয়নি।
প্রাথমিক স্তর : দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় একাডেমিক লাইব্রেরি বা শিক্ষায়তন গ্রন্থাগার নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার চালু, গ্রন্থাগারিকের পদ সৃষ্টি, সিলেবাস ও রুটিনে ‘তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য।
মাধ্যমিক স্তর : ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (শাখা-১৩) জনবল কাঠামো বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, মাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দশম) ও উচ্চমাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) স্তরে সহকারি গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। পদটি এমপিওভুক্ত। উল্লেখ্য, বহু আগে থেকেই এ স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার থাকা বাধ্যতামূলক। শুধু তাই নয়, শিক্ষায়তন গ্রন্থাগারে কমপক্ষে ২ হাজার বই থাকতে হবে। নইলে প্রতিষ্ঠানের অনুমতি মিলবে না এবং পুরোনো প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন করা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
পদবি পরিবর্তন : একসময় স্কুল-কলেজের গ্রন্থাগারিকরা তাদের পদবি পরিবর্তনের দাবি তোলেন। গ্রন্থাগারিকদের ভাষ্য, তাদের কেউ দাম দেয় না, সম্মান করে না অর্থাৎ তারা পেশাগতভাবে অবমূল্যায়নের শিকার। কাজেই পদবি যেন ‘শিক্ষক’ করা হয়। তাদের এই দাবি মঞ্জুর হয়েছে। স্কুলের ক্ষেত্রে পদবি ‘সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার)’ এবং কলেজের ক্ষেত্রে ‘প্রভাষক (গ্রন্থাগার)’ করা হয়েছে। গ্রন্থাগারিকরাও খুশি হয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন তাদেরকে গ্রন্থাগার ছাড়া অন্য কাজে ব্যস্ত রাখা হয়।
রুটিন : মাধ্যমিক স্তরের ক্লাস রুটিনে ‘তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা’ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, মাধ্যমিক স্তরে (স্কুল-মাদরাসা) সহকারী শিক্ষক (তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা) পদ সৃষ্টি করা হলেও সিলেবাসে এই ‘সাবজেক্ট’ নেই। ‘লাইব্রেরি ওয়ার্ক’ বলতে শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা হলে গ্রন্থাগারে যায়, মন চাইলে বইয়ের পাতা উলটায় কিংবা অলস আড্ডা দিয়ে ফিরে আসে যায়। আর সহকারী শিক্ষক/প্রভাষককে (তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা) অন্য বিষয়ের (কখনো কখনো প্রক্সি) ক্লাসে পাঠানো হয়। এতে গ্রন্থাগারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। আমরা আদর্শ পড়ুয়া নাগরিক তৈরি করতে পারছি না।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া : সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি ও বেরাইদ গণপাঠাগার