দক্ষ চিকিৎসক ও বর্ণাঢ্য রাজনীতিক
জাহেদ উর রহমান
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সদ্য প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরীকে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমি। মানুষের তো অনেক দিক থাকে, তার ব্যক্তিগত দিকটাও আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কটা হয়েছিল পলিটিক্যাল ইস্যুতেই; কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। সময়টা হচ্ছে ২০১৬-১৭ সালের দিকে, যখন যুক্তফ্রন্ট তৈরি হয়েছিল। পরে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট তৈরি হয় এবং ঘটনাচক্রে সেখানে বরুদ্দোজ্জা চৌধুরীর দল ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ যায়নি। তবে প্রথম যখন যুক্তফ্রন্ট তৈরি হয়েছিল, তখন তার ছায়ায় অনেক মিটিং-সেমিনারে আমি ছিলাম। তখন তার সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে; তবে কখনোই তাকে, তার বয়সকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেখিনি। ওই বয়সেও তার চিন্তা-চেতনা ছিল প্রখর। সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কেড়েছে তার ফিটনেস। তার ফিটনেস তখনো খুব ভালো ছিল এবং প্রায় নব্বই বছর বয়সেও তার যে মানসিক সুস্থতা দেখেছি, তা ছিল অবাক করার মতো। মানে তার প্রখর স্মৃতিশক্তি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আমি তাকে এভাবে বলতাম যে, তার কাছ থেকে এই জিনিসটা শেখার আছে। খুব গুরুগম্ভীর আলোচনাকেও তিনি গুরুগম্ভীর রাখতেন না। মানে তার হিউমার এত ভালো ছিল, যা আমি খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখেছি। তিনি খুব ধৈর্যশীল মানুষ ছিলেন। যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আসর জমাতে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা যদি বলি, আমরা মুখে যতই গণতন্ত্র-গণতন্ত্র বলি না কেন, ব্যক্তিগতভাবে চেতনাগত দিক থেকে খুব বেশি গণতান্ত্রিক মানুষ আমরা না। সেখানে ডা. বরুদ্দোজ্জা চৌধুরীকে দেখেছি ব্যতিক্রম। দল চালানোর ক্ষেত্রেও তার দক্ষতা ছিল অসাধারণ। দলের যে কোনো ক্রাইসিসও তিনি চমৎকারভাবে হ্যান্ডেল করেছেন। তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য পলিটিক্যাল জার্নির কথা তো আমরা সবাই জানি। তার পলিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং, নলেজ, পড়াশোনা ছিল খুবই ভালো। আমি যখন তার সঙ্গে বসেছি, সবসময় এ প্রমাণ পেয়েছি।
এছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেও তিনি কিন্তু তার চিকিৎসা পেশাকে ত্যাগ করেননি। নব্বই বছর বয়সেও তিনি নিয়মিত রোগী দেখতেন। সপ্তাহে একদিন তিনি চেম্বারে বসতেন এবং কখনো কখনো যখন আমরা তার চেম্বারে কাজের সূত্রে যেতাম, দেখতাম শত শত রোগী বসে আছেন। দেশে মেডিসিন স্পেশালিস্ট তো অনেকেই আছেন; কিন্তু ডা. বি. চৌধুরীকে দেখাব-তার প্রতি রোগীদের যে এই আস্থা, একজন মানুষ এভাবে যে দীর্ঘদিন মানুষের আস্থা ধরে রেখেছেন, এটা অবিশ্বাস্য। যেহেতু তিনি ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র ছিলেন, আমিও তা-ই, কাজেই পলিটিক্যাল পরিচয়ের বাইরে আমি তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করি। তিনি একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন। ওপারে ভালো থাকুন, সবসময় এ কামনা করি।
জাহেদ উর রহমান : চিকিৎসক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক