Logo
Logo
×

অল্পকথা

কসমেটিকস আইনের প্রয়োগ চাই

Icon

ড. এম এন আলম

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শপিংমলে ঢুকলেই চোখে পড়ে থরে থরে সাজানো হরেকরকম দেশি-বিদেশি কসমেটিকস। তবে কোনটি আসল, কোনটি নকল তা পরখ করা বেশ কঠিন। বিদেশি কসমেটিকসের দাপটে দেশীয় কসমেটিকস বর্তমানে কোণঠাসা। বাহারি গেটআপ, উন্নত মোড়ক, কনটেইনার, প্যাকেট ও বিজ্ঞাপনের তোড়ে দেশীয় কসমেটিকস শিল্প এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। হাতেগোনা কয়েকটি দেশীয় কোম্পানির পণ্য বাজারে রয়েছে। বেশিরভাগ কসমেটিকস ফ্রান্স, তুরস্ক, ভারত, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। বিদেশি কসমেটিকস বৈধপথে আমদানির চেয়ে চোরাপথে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করছে বেশি। ফলে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে কসমেটিকস খাতের প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনী আমদানি হয়, বাকি ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনীর বাজার চোরাকারবারিদের দখলে। এর বাইরেও নকল-ভেজাল-নিম্নমানের কসমেটিকসের দখলে রয়েছে বাজারের একটি বড় অংশ। এসব কসমেটিকস ব্যবহারে কারও মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে, ফর্সা হতে গিয়ে কারও মুখমণ্ডলের ত্বক সাদা হয়ে যাচ্ছে, কেউবা স্কিন ক্যানসার, বন্ধ্যত্ব, লিভার ও কিডনির নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

গত ১২ জুন Johnson & Johnson কোম্পানি তাদের উৎপাদিত বেবি পাউডারে ক্যানসারের উপাদান থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ৭০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদান করে এবং বাজার থেকে পণ্যটি প্রত্যাহার করে নেয়। অনুরূপভাবে আরও কয়েকটি কোম্পানির পণ্যে ক্ষতিকর উপাদান থাকায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে তারা বাজার থেকে পণ্য প্রত্যাহার করে নিলেও বাংলাদেশে তা প্রত্যাহার করতে তেমন একটা দেখা যায় না। স্বাধীনতার পর দেশে গার্মেন্ট, ওষুধ, চামড়া, হিমায়িত মৎস্য এবং প্লাস্টিক শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। বর্তমানে ১৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া কসমেটিকস শিল্পকেও এগিয়ে নিতে বিগত সরকারগুলো নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩’। আইনটি প্রণয়নকালে সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়। বিএসটিআইর দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে পণ্যটি দেখভাল করে আসছে এবং নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তক্রমে ইতঃপূর্বে কসমেটিকস পণ্যের ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, কসমেটিকস সরাসরি স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ড্রাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই সরকার ঔষধ আইন-১৯৪০ রদ করে ভারতের আদলে ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩ প্রণয়ন করেছে। আইনটি প্রণয়নকালে বিভিন্ন সময়ে সব অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়। ঔষধ ও কসমেটিকস আইন-২০২৩-এর ২(৮) ধারায় কসমেটিকসের সংজ্ঞা এবং পঞ্চম অধ্যায়ের ৩১-৩৫ ধারায় কসমেটিকসের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, লাইসেন্স, নিবন্ধন ও বিজ্ঞাপন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ রয়েছে। আইনটিতে নকল-ভেজাল কসমেটিকস উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের ৫ বছরের কারাদণ্ডসহ ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ইতোমধ্যে আইনটি পাস হওয়ার এক বছর অতিক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে আইনের কার্যকর প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি নকল-ভেজাল কসমেটিকস উৎপাদন, চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান, গ্রেফতার, মামলা বা জরিমানাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে নকল-ভেজাল ও চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশে কসমেটিকস শিল্পের উন্নয়নে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি। আন্তর্জাতিক মানের কসমেটিকস ল্যাব, কেমিস্ট, ফার্মাসিস্টসহ দক্ষ জনবল, আইনের সঠিক প্রয়োগ ও যথাযথ পরিকল্পনা থাকলে ওষুধের মতো কসমেটিকসকেও বিশ্ববাজারে সমাদৃত করে রপ্তানিমুখী খাত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে মনে করি।

ড. এম এন আলম : সাবেক উপ-পরিচালক ও আইন কর্মকর্তা, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম