Logo
Logo
×

অল্পকথা

জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা

Icon

এম এ হালিম

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সভা। নিয়মানুসারে জাতিসংঘ সাধারণ সভাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধি মূল ভেন্যুতে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য রাখেন। এর বাইরে এ ধরনের বৃহৎ ফোরামে প্রতিদিনই ইস্যুভিত্তিক অনেক পার্শ্বসভা (সাইড ইভেন্ট) চলে। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইঊনূস সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখবেন, যদিও ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন ইভেন্টে তার প্রজ্ঞা ও স্বভাবসুলভ সাবলীল অংশগ্রহণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টি কেড়েছেন। তাই প্রত্যাশিত যে, তিনি আজ তার বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমকালীন প্রেক্ষাপট ও বিশ্বসম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা ছাড়াও বৈশ্বিক প্রসঙ্গ ও অভিমত উপস্থাপন করবেন।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণ জাতিসংঘস্বীকৃত অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা (অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ) ইংরেজিতেই উপস্থাপন করবেন বলে ধরে নেওয়া যায়। কারণ, স্বীকৃত দাপ্তরিক ভাষার বাইরে অন্য কোনো ভাষায় বক্তব্য রাখলে তা অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। মাতৃভাষা অবশ্যই গর্বের, কিন্তু তাই বলে সে ভাষায় বক্তৃতা করলে কেউ যদি তা বুঝতেই না পারেন, তাহলে সে বক্তৃতার কী অর্থ তা বোধগম্য নয়। এক্ষেত্রে একটিই বিকল্প থাকে, তা হলো বক্তৃতার কথাগুলো জাতিসংঘের কার্যভাষায় (ওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজ) অনুবাদসংবলিত হ্যান্ডআউট পূর্বেই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিতরণ করা। বলাই বাহুল্য, এ আয়োজন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অংশগ্রহণকারীদের জন্য অসুবিধাজনক। কারণ, একজন অংশগ্রহণকারীর পক্ষে বক্তার বক্তৃতা শোনা এবং একইসঙ্গে তার অর্থ বুঝতে হ্যান্ডআউট মিলিয়ে পড়া কঠিন কাজ, বলা যায় প্রায় অসম্ভব।

১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশনে পাঁচটি ভাষা-ইংরেজি, ফরাসি, চীনা, স্পেনীয় ও রুশকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষাকে সে বছরই কার্যভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ১৯৪৮, ১৯৬৮ ও ১৯৭৩ সালে যথাক্রমে স্পেনীয়, রুশ ও চীনা ভাষা কার্যভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে আরবিকে জাতিসংঘের ষষ্ঠ দাপ্তরিক ভাষা এবং একইসঙ্গে ওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে নিরাপত্তা পরিষদ ছয়টি ভাষাকেই দাপ্তরিক ও কার্যভাষা হিসাবে অনুমোদন দেয়। তবে জাতিসংঘ সচিবালয় কার্যভাষা হিসাবে ইংরেজি ও স্পেনীয় ভাষা ব্যবহার করে। সমালোচনা আছে, জাতিসংঘ সব দাপ্তরিক ভাষাকে সমান মর্যাদা দেয় না। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ ও ২০০৯-এর সাধারণ পরিষদের রেজুলেশনে সব কার্যভাষাকে জাতিসংঘের প্রচারণা উদ্যোগে ব্যবহারের তাগিদ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন আসতে পারে, কী বিবেচনায় উল্লেখিত ছয়টি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি পায়? এক্ষেত্রে প্রধানত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব ও ভাষাভাষীর সংখ্যা বিবেচনা করা হয়; যেমন-১. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য প্রধান ইংরেজি ভাষাভাষী দেশের (যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) ভাষা হিসাবে ইংরেজি, ২. ঐতিহাসিকভাবে একটি কূটনৈতিক ভাষা ও তার গুরুত্ব বিবেচনায় ফরাসি ভাষা, ৩. নিজ দেশ ও বিশ্বজুড়ে সর্বাধিকসংখ্যক (১৩৫ কোটি) মানুষের ভাষা হিসাবে চীনা ভাষা, ৪. ২০টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা বিবেচনায় স্পেনীয় ভাষা, ৫. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠাকালে বর্তমান রাশিয়াসহ ১৫টি দেশ সমন্বয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯১৭-১৯৯১) একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি বিবেচনায় রুশ ভাষা এবং ৬. আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ২৪টি দেশে দাপ্তরিক ভাষা ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা (৪১ কোটি) বিবেচনায় আরবি ভাষা। জাতিসংঘের কোনো ফোরামে যে কোনো বক্তা ছয়টি দাপ্তরিক ভাষার যে কোনো একটিতে বক্তব্য রাখতে পারেন, যা অন্যান্য দাপ্তরিক ভাষায় তাৎক্ষণিকভাবে অনুবাদ হতে থাকে।

এম এ হালিম : সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি

halim_64@hotmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম