Logo
Logo
×

অল্পকথা

শান্তির নীড় অশান্ত কেন?

Icon

মেজর রেজাউল করিম (অব.)

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকরি করেননি, তাদের অনুভূতি আর আমাদের অনুভূতি কখনোই এক হবে না। তারা আমাদের মতো কখনো মূল্যায়নও করতে পারবেন না পার্বত্য চট্টগ্রাম কৌশলগতভাবে কতটা গুরুত্ব বহন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেও আমাদের আরও অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। শুধু একক কোনো রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সময়ের আবর্তনে দল বা সরকারসহ সবকিছু বদল হলেও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কৌশল বা নীতি স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল রাখতে হবে এবং সরকার পরিবর্তন হলেও পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি ও অগ্রাধিকারগুলো পরিবর্তন করা যাবে না।

আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের যেসব ক্যাম্প ও এলাকায় রাত্রিযাপন ও অপারেশনাল কার্যক্রমে (spl ops, LRP, SRP) অংশ নিয়েছি, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো-দীঘলছড়ি ক্যাম্প, শুভলং, ঘনঘোর ক্যাম্প, ক্ষারিক্ষন ক্যাম্প, দীঘিনালা ক্যাম্প, মারিস্যা, মাঝিপাড়া, নিউ লংকর, হালিমপুর, সাজেক, বরকল ও হরিনাসহ আরও অনেক জায়গা। সেসব জায়গার অনেক স্মৃতি গাথা রয়েছে মনে। এসব ক্যাম্পে বসে কত ডায়েরির পাতা লিখে শেষ করেছি; কত প্রেমপত্র লিখেছি, যা কাউকে দেওয়া হয়নি; কত চোখের জল ফেলেছি, যা কেউ দেখেনি; কত ঘাম ঝরিয়েছি, যার গন্ধও কেউ টের পায়নি। তবুও কোনো আবেগ-অনুভূতির পরোয়া করিনি, কারণ একবুক গর্ব নিয়ে গহিন অরণ্যের পথে-প্রান্তরে, খাদের কিনারে, ঝরনাধারায় সিক্ত পথে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উপেক্ষা করেছি এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করছি।

সত্যিকার অর্থে সামরিক ভ্রাতৃত্ববোধ কী, তা কেবল সমরযুদ্ধে অথবা পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো সন্ত্রাসীবেষ্টিত ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় একসঙ্গে কাজ করলেই বুঝতে সহজ হবে। কে আপনার জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করতে সংকোচবোধ করবে না, তা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় চাকরি করলেই টের পাবেন। আর এমন অফিসার বা সেনাসদস্যকে জীবনে কোনোদিন ভুলতে পারবেন না, বরং সেই সহযোদ্ধারা বসবাস করবে আপনার অন্তরের অন্তস্থলে।

একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইস্যুগুলো এতই স্পর্শকাতর যে, যে কোনো সামাজিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে সহজেই রাজনৈতিক রূপ দেওয়া যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে যে কোনো ঘটনার জের ধরে একটা সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া খুব সহজ আর সেই সুযোগটা বিশেষ কিছু পক্ষ নিয়ে থাকে। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির অনেক জায়গা আছে, যেখানে বিশেষ অপারেশন ও টহল কার্যক্রম সর্বদা বজায় রাখতে হবে; কারণ এই বিশেষ এলাকাগুলো অস্থিতিশীল করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় যারা আছেন, তারা যেন সেই সুযোগ কখনোই না পান। এটা সত্যিই দুঃখজনক যে, সেই খাগড়াছড়ি আজ অস্থির, জালাও-পোড়াওসহ হত্যাকাণ্ড চলছে। আমি আশাবাদী, সব ষড়যন্ত্র ও উসকানি উপেক্ষা করে আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী খুব শিগগিরই সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে।

মেজর রেজাউল করিম, ইবি, (অব.) : নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম