Logo
Logo
×

অল্পকথা

এ বৈষম্যের শেষ কোথায়?

Icon

সেলিম আল রাজ

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এ বৈষম্যের শেষ কোথায়?

এমপিও শিক্ষকরা মাসশেষে সরকারি অনুদান থেকে বেতন, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। অন্যদিকে নন-এমপিও শিক্ষকরা এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যাও কিছু সম্মানি প্রদান করা হয়, তাও নির্ভর করে কর্তৃপক্ষের মর্জির ওপর। আর্থিক বিষয় ছাড়াও পদমর্যাদাজনিত বিষয়গুলোতেও নন-এমপিও শিক্ষকরা নানাভাবে অবহেলিত। প্রশ্ন হলো-একই রাষ্ট্র, একই প্রতিষ্ঠান, একই বিষয়ের শিক্ষক; অথচ কেউ এমপিও, কেউবা নন-এমপিও। এ বৈষম্যের শেষ কোথায়?

সেই ১৯৯২ সাল থেকে অদ্যাবধি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিধিমোতাবেক অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এমপিওর বাইরে রয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। অথচ কোনো কলেজকে যখন সরকারিকরণ করা হয়, তখন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পাশাপাশি অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও সরকারিকরণের আওতায় চলে আসেন। এখন প্রশ্ন হলো, অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের সরকারিকরণ করা হচ্ছে, কিন্তু এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না, এটা কেমন নীতি?

১৯৮২ সালে প্রণীত জনবল কাঠামো অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে একজন, ডিগ্রি পর্যায়ে একজন করে দুজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হন। ইতোমধ্যে সরকার ২৭১টি কলেজকে সরকারিকরণ করেছেন। যেসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ছিলেন, তাদেরও জাতীয়করণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ ব্যবস্থায় ১৯৯৩ সালে টাঙ্গাইল উপজেলাধীন জিবিজি কলেজের ৮ জন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়। তাহলে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদানকারী প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষককে এমপিও দেওয়ায় বাধা কোথায়? বেসরকারি কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমোতাবেক বেতন প্রদানের শর্তে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু করলেও বাস্তবতা ভিন্ন, শিক্ষকরা নামেমাত্র বেতন পান। প্রাতিষ্ঠানিক সবকিছুতে হন বৈষম্যের শিকার।

উল্লেখ্য, বেসরকারি কলেজগুলোয় এমপিও, নন-এমপিও দুটি ভাগ থাকায় যে কোনো কার্যক্রমে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। নতুন যোগদানকৃত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকদের ওপর নাম লেখা হচ্ছে। যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশন (সংশোধিত ২০১৯) অনুযায়ী চাকরিতে যোগদানের তারিখ থেকে নামের সিরিয়াল অর্থাৎ জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের কথা, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর ব্যতয় ঘটছে। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, ভবিষ্যৎ তহবিলসহ সমহারে আনুতোষিক সুযোগ-সুবিধার বিষয় উল্লেখ করা হলেও এসব বিধিবিধানের তোয়াক্কা করছে না অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২৯ লাখের অধিক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে বেশি। তাই স্নাতক-স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষকদের বৈষম্যের প্রতি নজর দিতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি স্তরের মতো অনার্স-মাস্টার্স স্তরকে জনবল কাঠামোতে নিয়ে আসতে হবে। বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও প্রদান করতে হবে। বর্তমানে দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে সব স্তরে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে। শিক্ষা খাতেও ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয়। এবার মহান পেশায় নিয়োজিত দীর্ঘদিনের অবহেলিত বৈষম্যের শিকার অনার্স-মাস্টার্স স্তরের নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কথা ভাবুন, তাদের এমপিও প্রদান করুন। বৈষম্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাক স্নাতক-স্নাতকোত্তর স্তরের নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।

সেলিম আল রাজ : প্রভাষক, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম